বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ০৮:২৮ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম ::

ফের বরখাস্ত রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র বুলবুল

বাংলার প্রতিদিন ডেস্ক ::
  • আপডেট সময় রবিবার, ২ এপ্রিল, ২০১৭
  • ১২৯ বার পড়া হয়েছে

অনলাইন ডেস্কঃ 

সকালে বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী ও সমর্থক নিয়ে দায়িত্বভার গ্রহণ করতে গিয়েছিলেন রাজশাহী সিটি করপোরেশনের নির্বাচিত মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল। গিয়েই তিনি বাধার মুখে পড়েন। এরপর দুপুরে যখন তার দফতরের তালা ভেঙে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়, তখন আবারও বরখাস্তের খবর আসে। ফলে সকাল থেকে অপেক্ষা করে ফিরে যেতে হয়েছে বুলবুলকে।

মেয়র বুলবুলকে বরখাস্তের আদেশে স্বাক্ষর করেছেন স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-সচিব মুহাম্মদ আনোয়ার পাশা। ওই চিঠিতে বলা হয়, বোয়ালিয়া থানার মামলা নম্বর-১৭, তারিখ-৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ অনুযায়ী আদালত যেহেতু অভিযোগপত্র গ্রহণ করেছেন, স্থানীয় সরকার আইন অনুযায়ী তাকে বরখাস্ত করা হলো।

এর আগে, রবিবার সকালে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল সাময়িক বরখাস্তের দীর্ঘ ২৩ মাস পর আদালতের রায় হাতে নিয়ে নগর ভবনে যান। তিনি গিয়ে দেখেন মেয়রের কক্ষ তালাবব্ধ। এরপর তিনি প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. শরিফ উদ্দিনের দফতরে গিয়ে তালা খোলার কথা বলেন। কিন্তু প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জানান, কে বা কারা তালা মেরেছে তিনি জানেন না। এ সময় মেয়র তার (প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা) কক্ষেই অপেক্ষা করেন। দীর্ঘ সময় পর তালা খোলা না হলে নগর ভবন এলাকায় বিএনপির নেতাকর্মীদের মাঝে উত্তেজনা দেখা দেয়।

এরপর মেয়রের কক্ষের তালা খুলে না দেওয়ায় ভাঙচুর চালিয়েছেন বিএনপিপন্থী বিক্ষুব্ধ কাউন্সিলর ও দলীয় নেতাকর্মীরা। মেয়রের কক্ষের পাশে মেয়রের একান্ত সচিব সইদুল আলম মোল্লা ডেভিড ও পিএ আজমির আহম্মেদ মামুনের কক্ষ ভাঙচুর করা হয়। ঘটনার আগে মেয়র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার কক্ষ ছেড়ে সচিবের কক্ষে অবস্থান নেন।

পরে পুলিশ গিয়ে বিএনপিপন্থী কাউন্সিলর ও দলের নেতাকর্মীদের সেখান থেকে সরিয়ে দেয়। পুরো নগর ভবনে বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়। ওই সময় পর্যন্ত মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল তার চেয়ারে বসতে সচিবের কক্ষে অপেক্ষা করছিলেন। দুপুর ১২টার দিকে বোয়ালিয়া থানা পুলিশ নগর ভবনে আসে। তারা মেয়রের দফতরের সামনে থেকে বিএনপির নেতা-কর্মীদের সরাতে গেলে হট্টগোল বাধে। এসময় উত্তপ্ত হয়ে ওঠে নগর ভবন।

মেয়রের পিএ শহিদুল ইসলাম জানান, বুলবুলের সঙ্গে আসা লোকজনই তার কক্ষে ভাঙচুর চালিয়েছে। তবে বিএনপির নেতাদের দাবি, মেয়রবিরোধী লোকজন ভাঙচুর চালিয়ে তাদের ওপর দায় চাপাচ্ছে।

দুপুর ১২টা ৪০ মিনিটের দিকে বিএনপির নেতা-কর্মীরা একজন তালার মিস্ত্রিকে ডেকে আনেন। তালা ভাঙার চেষ্টা করলে মেয়রের পিএ শহিদুল ইসলাম ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর একেএম রাশিদুল হাসান তালা ভাঙতে বাধা দেন। তারা বলেন, সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও সচিব না এলে তালা খোলা যাবে না। পুলিশও তালা ভাঙতে বাধা দেয়। পরে দুপুর দেড়টার দিকে তালা ভাঙা হয়। এরপর পুলিশ মেয়রের দফতরে থাকা জিনিসপত্রের তালিকা প্রস্তুত করে।

নগরীর বোয়ালিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শাহাদাত হোসেন খান বলেন, সিটি করপোরেশন মেয়রকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেবে কী না তা তারা জানেন না। এখানে যেন আর কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে, সে জন্য পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। পরিস্থিতি এখন পুলিশের নিয়ন্ত্রণে। প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার নির্দেশে মেয়রের কক্ষের জিনিসপত্রের তালিকা তারা তৈরি করছেন।

মেয়র বুলবুল বলেন, আদালতের রায় হাতে নিয়েই তিনি দায়িত্ব নিতে এসেছেন। কিন্তু এসে দেখেন তার কক্ষ তালাবদ্ধ। তবে তিনি যেহেতু ভোটে নির্বাচিত এবং আদালতের রায়ে দায়িত্ব ফিরে পেয়েছেন, সেহেতু লিখিতভাবে কোনো আনুষ্ঠানিকতার দরকার নেই। তিনি এমনিতেই মেয়র।

রাসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. শরীফ উদ্দীন বলেন, কে বা কারা মেয়রের কক্ষে তালা দিয়েছে তা তিনি জানেন না। চাবি না থাকায় তিনি খুলতে পারবেন না। তবে মেয়রকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়া হচ্ছে কী না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মেয়রকে দায়িত্ব দেওয়ার কিছু নেই। তিনি নগর ভবনে আসা মাত্র দায়িত্বের মধ্যে আছেন। ’

সকাল থেকে এমন নাটক চলার পর দুপুর পৌনে ২টার দিকে যখন মেয়রের কক্ষের তালা ভেঙে ফেলা হয়। এসময় বুলবুল মেয়রের চেয়ারে বসেন। কয়েক মিনিটের মধ্যে ফ্যাক্স বার্তায় বুলবুলকে আবারও বরখাস্তের আদেশ পাঠানো হয় স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে। ফ্যাক্স বার্তার খবরটি পাওয়ার পর মেয়রের চেয়ারে বসে বুলবুল গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন। তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, ‘উচ্চ আদালতের নির্দেশনা মন্ত্রণালয়ের কয়েকজন কর্মকর্তা অবজ্ঞা করেছেন। আদালতের রায়ের পর তাকে বরখাস্তের এমন আদেশ অগ্রহণযোগ্য। আমি আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলে পরবর্তী পদক্ষেপ নিবো। ’ তিনটার দিকে মেয়রের গাড়িতে করে বুলবুল বাড়ি চলে যান।

এর আগে সাময়িক বরখাস্তের দীর্ঘ ২৩ মাস পর আদালতের রায় হাতে নিয়ে রবিবার সকাল পৌনে ১০টার দিকে নগর ভবনে যান মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল। তবে রবিবার সকাল থেকেই নগর ভবনে দায়িত্বপ্রাপ্ত মেয়র নিযাম-উল-আযীমকে দেখা যায়নি। মেয়র বুলবুল দু’দিন আগেই ঘোষণা দিয়েছিলেন, দায়িত্ব নেওয়ার পর তিনি সংবাদ সম্মেলন করবেন। রবিবার বেলা ১১টায় সেটি অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। নগর ভবনে গিয়ে এমন পরিস্থিতি দেখে মেয়র বুলবুল তার সংবাদ সম্মেলন স্থগিত করেছেন।

উল্লেখ্য, ২০১৫ সালে ৭ মে সিটি মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলকে মেয়র পদ থেকে সাময়িক বরখাস্ত করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। ২০১৬ সালের ১০ মার্চ উচ্চ আদালত তার বরখাস্ত আদেশ অবৈধ ঘোষণা করেন। গত মঙ্গলবার স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপসচিব মাহমুদুল আলম স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা বাস্তবায়নে ভারপ্রাপ্ত মেয়র ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে নির্দেশনা দেওয়া হয়। এরপরই রবিবার দায়িত্ব নিতে নগর ভবনে যান মহানগর বিএনপির সভাপতি মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল।

 

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © banglarprotidin.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com
themebazarbanglaro4451