শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৩:২৫ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম ::

কোটালীপাড়ায় নদী খননের নামে চলছে বালু উত্তোলনের মহোৎসব : ভয়াবহ রুপ নিচ্ছে নদী ভাঙ্গন ,  প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা এলাকাবাসীর

বাংলার প্রতিদিন ডেস্ক ::
  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ৩০ মার্চ, ২০১৭
  • ৭৪ বার পড়া হয়েছে

 

 

এম শিমুল খান, গোপালগঞ্জ : গোপালগঞ্জ জেলার

কোটালীপাড়ায় ঘাঘর নদীতে উপজেলা চেয়ারম্যানের

নের্তৃত্বে নদী খননের নামে অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলনের

মহোউৎসব চলছে। ভয়াবহ রুপ নিচ্ছে নদী ভাঙ্গন। তার পরও

থেকে নেই ঘাঘর নদী থেকে অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলন।

গোপালগঞ্জ জেলার কোটালীপাড়া উপজেলার ঘাঘর নদী খননের

নামে ওই নদী থেকে অবৈধ ভাবে শ্যালো মেশিন ও ড্রেজার

বসিয়ে অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। এতে করে

উপজেলার রাস্তা-ঘাট, হাট-বাজার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বাড়ী-

ঘর ও শতাধিক বিঘা ফসলি জমি নদী গর্ভে বিলীন হওয়ার

আশংকা দেখা দিয়েছে।

গতকাল সরোজমিন এলাকা গুলিতে ঘুরে দেখা যায়, উপজেলার

ঘাঘর নদী থেকে কিছু অসাধু ব্যক্তি সরকারি কোন

অনুমোদন ছাড়াই অবৈধ ভাবে শ্যালো মেশিন ও ড্রেজার

বসিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার ঘনফুট বালি উত্তোলন

করে তা বিক্রি করছে। তারা অবৈধ ভাবে বালি উত্তোলন করে

তা বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করার মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ টাকা আয়

করছে অথচ সরকার প্রতিদিন হারাচ্ছে হাজার হাজার টাকার

রাজস্ব। এতে করে যেমন একদিকে সরকার বিপুল পরিমান

রাজস্ব হারাচ্ছে তেমনি করে ভয়াবহ রুপ নিচ্ছে নদী ভাঙ্গন।

কোটালীপাড়া উপজেলার পিঞ্জুরী, কুরপালা, ঘাঘরবাজার,

কালিগঞ্জ, জাকিয়া, কাকডাঙ্গা, গোপালপুর, বরইভিটা, চর

গোপালপুর, তারাইল, বড় ডুমুরিয়াসহ আরো বেশ কিছু

জায়গায় ঘাঘর নদীর দুই পাড়ে নদী খননের নামে শ্যালো

মেশিন ও ড্রেজার বসিয়ে অবৈধ ভাবে প্রতিদিন হাজার

হাজার ফুট বালু উত্তোলন করা হচ্ছে।

সরেজমিন গিয়ে আরো দেখা যায় নদী খননের নামে নদীতে

ড্রেজার ও শ্যালো মেশিন বসিয়ে নদীর মাঝ থেকে বালু

উত্তোলন করা হচ্ছে। বালু উত্তোলন এবং পরিবহনের ফলে

সেখানকার ফসলী জমি, রাস্তা-ঘাট, জমিজমাসহ

স্থাপনাগুলো হুমকির মুখে রয়েছে। ইতিমধ্যে কালিগঞ্জ

বাজার, পিঞ্জুরী, কুরপালাসহ বেশ কিছু জায়গায় নদীর

দু’পাড় ভাঙতে শুরু করেছে। ড্রেজার ও শ্যালো মেশিন দিয়ে

বালু তোলায় নদী গুলির বিভিন্ন স্থানে গভীর খাদের সৃষ্টি

হয়েছে। এলাকার মানুষ বালু তোলা বন্ধের দাবি জানালেও তা

বন্ধ হয়নি।

ঘাঘর নদীর দু’পাড়ে ড্রেজার ও শ্যালো মেশিন দিয়ে তোলা

বালু নিতে আসা কয়েকটি ট্রাক্টরের চালকরা জানায়,

মোটা বালু ২০০০ টাকা এবং রাবিশ বালু ১০০০ টাকায়

কিনে প্রতি ট্রাক্টর বালু ২ হাজার ৫০০ টাকা এবং রাবিশ

বালু ১৫০০ থেকে ১৭০০ টাকা দরে বিক্রি করি। এ সকল

জায়গা থেকে প্রতিদিন ট্রাক ও ট্রাক্টরে বালু পরিবহন

করা হয়। বালু তোলায় নদী তীরবর্তী বহু লোকের জমিজমা

নদী গর্ভে বিলীন হওয়ায় আশংকা দেখা দিয়েছে। বালু

উত্তোলন বন্ধের বিষয়ে কথা বলতে গেলেই পুলিশ দিয়ে

সায়েস্তা করার হুমকি দেন তারা। এ কারণে ভয়ে অনেকে

প্রতিবাদ করার সাহস পায় না।

এ ব্যাপারে অবৈধ বালু উত্তোলনকারী পিঞ্জুরী ইউনিয়ন

পরিষদের ৮নং ওয়ার্ডের সদস্য ইলিয়াস হোসেন, ৯নং

ওয়ার্ডের সদস্য দবিউল ইসলাম, সুনিল পাল, তপন হালদার,

মিঠুনসহ কয়েক জনের সাথে কথা হলে তারা জানায়,

আমরা যে বালি উত্তোলন করছি তা শুধু মাত্র নদী খননের জন্য।

শুধু তাই নয় আমরা যারা ঘাঘর নদী থেকে বালি উত্তোলন

করছি তারা সবাই আমাদের কোটালীপাড়া উপজেলা

চেয়ারম্যান মজিবর রহমান হাওলাদারের নির্দেশেই নদী থেকে

বালু উত্তোলন করছি। কোন সরকারি অনুমোদন আছে

কিনা প্রশ্ন করা হলে তারা বলেন, আমরা কোটালীপাড়া

উপজেলা চেয়ারম্যান মজিবর রহমান হাওলাদারের এবং সরকার

দলীয় লোকজন আমাদের আবার অনুমোদন কিসের। আপনারা

এসেছেন চা খেয়ে চলে যান কোন নিউজ ফিউজ করার

দরকার নাই। আমরা তো আপনাদের ভাই ব্রাদার।

এ ব্যাপারে পিঞ্জুরী এলাকার বাসিন্দা মো: আব্দুল

গফ্ধসঢ়;ফারের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, ঘাঘর নদী খনন করার

নামে যেন বালু উত্তোলনের ধুম পড়েছে। প্রতিদিন সকাল

থেকে শুরু করে গভীর রাত পর্যন্ত শ্যালো ও ড্রেজার মেশিন

চালিয়ে বালু উত্তোলন করা হয়। আমরা শ্যালো ও ড্রেজার

মেশিনের শব্দে নামাজ কালাম পড়তে পারিনা, রাতে ঘুমাতে

পারিনা, আমাদের বাড়ী-ঘর বালু বালু হয়ে গেছে আমরা

বর্তমানে খুব সমস্যার মধ্যে আছি।

এ ব্যাপারে কুরপালা এলাকার বাসিন্দা মো: মোসলেম খানের

সাথে কথা হলে তিনি বলেন, দেশে যে কি নদী খননের কাজ

এসেছে তা বুঝতে পারলাম না। আমাদের ঘাঘর নদীতে

শ্যালো ও ড্রেজার মেশিন বসিয়ে শুধু বালু উত্তোলন করা

হচ্ছে। ওই এলাকা গুলি দেখলে মনে হবে যেন বালু উত্তোলনের

পাল্লা পড়েছে। কে কার আগে কত বালু উত্তোলন করতে পারে

বর্তমানে সেই প্রতিযোগীতা চলছে।

এ ব্যাপারে ঘাঘর বাজার এলাকার বাসিন্দা মো: আসলাম

বলেন, আমাদের ঘাঘর নদী খননের নামে অবৈধ ভাবে কতিপয়

লোক বালু উত্তোলন করছে। আমরা এলাকাবাসী কয়েকবার

প্রশাসনের কাছে বালু উত্তোলন বন্ধের জন্য আবেদন

করেছিলাম কিন্তু কোন ফল পাইনি।

এ ব্যাপারে কালিগঞ্জ এলাকার বাসিন্দা তপন হালদার বলেন,

আমাদের ঘাঘর নদী খননের নামে নদী থেকে বালু উত্তোলন

করা হচ্ছে। কোনটি বৈধ ভাবে আর কোনটি অবৈধ ভাবে

ড্রেজার বসিয়ে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে তা বুঝার কোন

উপায় নাই। সবাই কোটালীপাড়া উপজেলা চেয়ারম্যান

মজিবর রহমান হাওলাদারের নিজস্ব ও বর্তমান সরকার দলীয়

লোকজন বালু উত্তোলন করছে। প্রশাসন সব কিছু দেখেও না

দেখার ভান করছে। আমরা হয়ে পড়েছি অসহায়।

এ ব্যাপারে কাকডাঙ্গা এলাকার বাসিন্দা মো: আবুল খায়ের

মুন্সির সাথে কথা হলে তিনি বলেন, ঘাঘর নদী খননের নামে

অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। আমরা বার বার এ

ব্যাপারে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ চেয়ে প্রশাসনের বিভিন্ন

জায়গায় আবেদন করেছি কিন্তু কোন ব্যবস্থা প্রশাসন

গ্রহন করেনি। শুনেছি বালু উত্তোলনকারিরা কোটালীপাড়া

উপজেলা চেয়ারম্যান মজিবর রহমান হাওলাদারের এবং সরকার

দলীয় লোকজন যার কারনে প্রশাসন হয়তবা ভয়ে তাদের কিছু

বলেনা।

এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের অফিস সহকারি

বেল্লাল হোসেন বলেন, সরকারি নিয়ম অনুযায়ী আমরা এ

জেলায় মাত্র ১৪টি বালু মহলের ইজারা প্রদান করেছি। রেল

লাইন তৈরীকারি প্রতিষ্ঠান ম্যাক্স গ্রুপ ১০টি, সাসকো

গ্রুপ ৩টি ও গোবরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সাহেবের

১টি মোট ১৪টি। এ ছাড়া যদি কেউ বালু উত্তোলন করে

থাকে তা সম্পুর্ন অবৈধ। আমরা কয়েকটি অভিযোগ

পেয়েছি অচিরেই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসনের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ

না করার শর্তে বলেন, গোপালগঞ্জ জেলার কোটালীপাড়া

উপজেলার ঘাঘর নদী থেকে যে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে তা

সম্পুর্ন অবৈধ। যারা বালু উত্তোলন করছে তারা সবাই

বর্তমান সরকার দলীয় লোকজন। আমরা তো সরকারি চাকুরী

করি আমরা তো অসহায়। যার কারনে আমরা ইচ্ছা থাকলেও

প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করতে পারি না।

এ ব্যাপারে ঘাঘর নদীতে বালু উত্তোলনকারি ড্রেজারের

মালিক অরুন মল্লিকের ব্যবহৃত মোবাইল-০১৯৭১- ২৮২২৮৫

নম্বরে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি ঘাঘর নদী

খননের জন্য ড্রেজার ভাড়া দিয়েছি কোটালীপাড়া উপজেলা

চেয়ারম্যান মজিবর রহমান হাওলাদারের নির্দেশে। ঘাঘর নদী

খননের কাজ কে পেয়েছে বা পায়নি তা আমার জানা নেই।

আমি এ বিষয়ে কিছুই বলতে পারবো না। আপনার উপজেলা

চেয়ারম্যানের সাথে কথা বলেন তাহলে বিস্তারিত জানতে

পারবেন।

এ ব্যাপারে কোটালীপাড়া উপজেলা চেয়ারম্যান মজিবর

রহমান হাওলাদারের ব্যবহৃত মোবাইল- ০১৭১৫-৮৮২৩৫৪ নম্বরে

যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি নদী খননের কাজ

পেয়েছি তাই আমার ম্যানেজার হিসাবে অরুন বাবু কাজ

দেখা শুনা করছে। আর নদীতে যে শ্যালো মেশিন বসিয়ে

অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে এটা আমার জানা

নেই। তবে কেউ যদি আমার নাম ভাঙ্গিয়ে থাকে সে ভুল

করছে আমি কাউকে নদী থেকে বালু উত্তোলনের নির্দেশ

নেই নাই। আপনারা তাদের বিরুদ্ধে নিউজ করেন। আমি

অবশ্যই তাদের ব্যাপারে ব্যবস্থা নেব।

গোপালগঞ্জ জেলার কোটালীপাড়া উপজেলার ঘাঘর নদীতে

অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয়

ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য প্রধানমন্ত্রী, পানি সম্পদ মন্ত্রী,

স্থানীয় সংসদ সদস্যসহ প্রশাসনের আশু হস্তক্ষেপ কামনা

করেছেন ভুক্তভোগী, সাধারন মানুষসহ এলাকার অভিজ্ঞ মহল।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © banglarprotidin.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com
themebazarbanglaro4451