এম আনোয়ার হোসেন, মিরসরাই:
ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজিপির সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক রাহুল
সিনহা ফেনী নদী তীরে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বারনী স্নান ঘাটের
আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেছেন। শনিবার (২৫ মার্চ) বেলা ২ টার
সময় মিরসরাই উপজেলার করেরহাট ইউনিয়নের পশ্চিম জোয়ার
এলাকায় বারনী ঘাট ছাড়াও নবনির্মিত স্থানীয় একটি মন্দির
উদ্বোধন করেন তিনি। এসময় তাঁর সফর সঙ্গি হিসেবে ছিলেন
পরিবারের সদস্যরা। এছাড়া ওই অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে
যোগ দেন সরকারের গৃহায়নও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ
হোসেন এমপিসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের
কর্মকর্তারা। এর আগে ওইদিন বেলা ১২ টায় করেরহাট ইউনিয়নের
পশ্চিম জোয়ার গ্রামের একটি বাড়ির ওঠোনে বীণাপাণি নামের
একটি সংগঠনের ব্যানারে আয়োজিত ধর্মিয় সভায় বক্তব্য রাখেন
সর্বভারতীয় সেক্রেটারি (বিজেপি রাজনৈতিক দলের এ নেতা। সভার
সভাপতিত্ব করেন স্থানীয় লোকনাথ আশ্রমের প্রতিষ্ঠাতা
সমাজকর্মী ও ধর্মিয় নেতা স্বপন কুমার চৌধুরী।
রাহুল সিনহা বলেন, ‘বিপদ কিন্তু এখনও চলে যায়নি, পাকিস্তান
এবং চীন একসাথে জোট বেঁধেছে ভারত-বাংলাদেশ দুই ভাইকে
কি করে আলাদা করা যায়।’
ভারতে যেতে ভিসা জটিলতা আরো সহজ করার উদ্যোগ গ্রহণের
ব্যাপারে পররাষ্ট্রমন্ত্রনালয়ের সাথে কথা বলার প্রতিশ্রুতি দিয়ে
বিজেপির এই নেতা বলেন, ‘প্রতিদিন এখান থেকে ৬ হাজার
মানুষ যাচ্ছে ভারতে চিকিৎসা ও অন্যান্য কারণে। এর আগে এতো
ভিসা দেওয়া হতো না । অতএব ভিসা জটিলতা আরো সহজ হবে।
আমি কথা দিচ্ছি সুষমা দিদিকে আপনাদের ব্যথার কথা
জানাবো।’
ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের বিষয় তুলে ধরে সিনহা বলেন ‘ল্যান্ড
বাউন্ডারী শেয়ারিং, ছিটমহল বিনিময় আপনার বাংলাদেশের জন্ম
থেকে কেউ সমাধান করতে পারেনি, ভারতে নরেন্দ্র মোদি সেটি
সমাধান করে দিয়েছেন, যতদিন মোদি আছেন ততদিন কোন
সমস্যা হবে না।’
সভায় তিস্তা পানি চুক্তির বিষয়েও কথা বলেন রাহুল সিনহা। তিনি
বলেন, ‘ভাই থাকতে বোনের কোনো চিন্তা নেই। জল নিয়ে
চিন্তিত হবেননা। ওতো সাময়িক সমস্যা, এতোদিনের বন্ধুত্ব¡
একটু জলের জন্য ভেঙ্গে যাবে? এমন হওয়ার নয়, নিশ্চিন্ত থাকবেন।’
অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক দর্শন নিয়ে কথা বলতে গিয়ে
তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর দর্শন আমি পেয়েছিলাম, যদিও কাছ
থেকে নয় দূর থেকে তখন আমি খুব ছোট ছিলাম। বঙ্গবন্ধুর
মুক্তিযুদ্ধের বক্তব্য আমি রেডিওর মাধ্যমে শুনতাম।’
বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি একটি নিদর্শন বলেও আখ্যা
দেন রাহুল সিনহা। তিনি বলেন, ‘আমি এখানে এসে দেখলাম
এখানে সর্ব ধর্ম সম্মেলন। আমি এটি দৃষ্টান্ত হিসেবে নিয়ে
যাচ্ছি। ভারতের কোথায়ও দেখি নাই এরকম সকল ধর্মের মানুষ
মিলেমিশে মন্দির উদ্বোধন করতে। এ এক নতুন তথ্য, নতুন
নিদর্শন। যা আমি নিয়ে যাচ্ছি আমার ভারতবর্ষে দৃষ্টান্ত
হিসেবে।’
নিজের জন্ম এ বাংলাদেশে উল্লেখ করতেও ভোলেননি রাহুল সিনহা।
তিনি মঞ্চে উপস্থিত তাঁর স্ত্রী সন্তানদের পরিচয় করিয়ে দিয়ে
বলেন, ‘আমার কর্মস্থল পশ্চিম বাংলা কিন্তু জন্মস্থল এই বাংলাদেশে।
এই বাংলাদেশ আমাকে জন্ম দিয়েছে, এই বাংলাদেশ থেকে আমি
সৃষ্টি হয়েছি।’
অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মাঝে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ স্থানীয়
সরকার বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী শ্যামা প্রসাদ অধিকারী,
মিরসরাই উপজেলা চেয়ারম্যান (দায়িত্বপ্রাপ্ত) ইয়াসমিন আক্তার
কাকলী, বারইয়ারহাট পৌরসভার মেয়র নিজাম উদ্দিন, মিরসরাই
পৌরসভার মেয়র গিয়াস উদ্দিন, রাউজান পৌরসভার মেয়র দেবাশীষ
পালিত, করেরহাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এনায়েত হোসেন
নয়ন, মিরসরাই পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি উত্তম কুমার শর্মা,
শিক্ষক সুভাষ সরকার, করেরহাট ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি
সুলতান গিয়াস উদ্দিন জসিম ও সাধারণ সম্পাদক শেখ সেলিম
প্রমুখ।
প্রসঙ্গত, ভারতের ক্ষমতাসীনদল বিজেপির সর্বভারতীয় সাধারণ
সম্পাদক শুক্রবার ৫ দিনের সফরে বাংলাদেশে আসেন গত শুক্রবার।
প্রথমে তিনি চট্টগ্রামে কয়েকটি ধর্মিয় অনুষ্ঠানে
যোগদান করেন। শনিবার তিনি পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচি
অনুযায়ী মিরসরাইয়ের করেরহাট এলাকায় যান। আগামী ২৮ মার্চ
তিনি নিজ দেশে ফিরে যাবেন।