বিশেষ রিপোর্ট ঃ
রাজশাহী বিভাগের পাবনা জেলার সুজানগর, আমিনপুর, বেড়া ও সাঁথিয়া থানার বিভিন্ন এলাকার
মানুষ আবার চরমপন্থী সর্বহারা নকশাল বাহিনীর কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে
জনমনে। এলাকাবাসী জানায়, তারা ভয়ে এসব বাহিনীর বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলতে সাহস করেন না।
গত এক মাস সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, বিভিন্ন এলাকায় সাধারণ মানুষ এখনও বিভিন্ন
বাহিনীর কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছেন বলে স্থানীয়রা জানান। তথ্যমতে গত ১৬ জানুয়ারি পাবনার
সাঁথিয়ায় র্যাবের সঙ্গে “বন্দুকযুদ্ধে আব্দুর রাজ্জাক (৪৫) নামে চরমপন্থী নকশাল বাহিনীর এক সদস্য
নিহত হয়েছেন। ওই দিন সোমবার ভোরে সাঁথিয়া উপজেলার ধোপাদহ ইউনিয়নের হলুদগড় ইছামতি
ব্রীজের ডাইকে এ বন্দুকযুদ্ধ হয়। গত ১৫ ফেব্রুয়ারি পাবনার আমিনপুর থানার ঢালারচর এলাকায়
গুলিবিদ্ধ অবস্থায় এক ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করেন পুলিশ। নিহতের বিষয়ে পুলিশ বলছেন, সে চরমপন্থী নিস্তার
বাহিনীর প্রধান ছিলেন। পুলিশ ও স্থানীয়রা সাংবাদিকদের জানান, নিহতের নাম নিজাম হোসেন।
পুলিশের দাবি বন্দুকযুদ্ধে নিজামের মৃত্যু হয়েছে। এই নিজাম ও তার বাহিনীর বিষয়ে বিভিন্ন
এলাকার মানুষ জানান, নিজাম আমিনপুর থানার সাতপাড়া মালঞ্চি গ্রামের বিভিন্ন বাড়িতে দিনে
থাকতেন এবং রাতে বাহিনীর কর্মকান্ড পরিচালনা করতো সে।
জানা গেছে, পাবনা জেলার সাধারণ মানুষ ১৯৭১ সালের পর থেকেই এসব চরমপন্থী সন্ত্রাসীদের কাছে
জিম্মি। এইসব বাহিনীর অত্যাচারে এলাকাবাসী অতিষ্ট। বিভিন্ন এলাকায় চুরি, ডাকাতি,
ছিনতাই, অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায় করা ও চাঁদাবাজি, খুন, ধর্ষণসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক
কর্মকান্ড করে আসছে এসব বাহিনীর সদস্যরা। এইসব বাহিনীর সদস্যদের অনেকেই বিভিন্ন সময়ে
পুলিশ ও র্যাবের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়। আবার নতুন নতুন সদস্য দলে নাম দিয়ে ক্রাইম করে
বলে স্থানীয়রা জানায়। এসব বাহিনীর সাথে কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি জড়িত থাকলেও তারা ধরাছোঁয়ার
বাইরেই রয়ে যায়। পাবনার আতাইকুলা, সাঁথিয়া, সুজানগর, বেড়া, আমিনপুর, বাঁধের হাট ও
মাসুমদিয়া এলাকার অনেকেই বলছে, তারা সাধারণ মানুষ ভয়ে রাতে আতঙ্কিত থাকেন। বর্তমান
সরকারের ৭ বছরে এসব সন্ত্রাসী চরমপন্থী দলের সদস্যরা অনেকেই বিভিন্ন ভাবে নিহত হয়েছেন। আবার
এই বাহিনীর সদস্যরা তাদের সন্ত্রাসী কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছে বলে এলাকায় ক্রাইম বাড়ছে।
উক্ত বন্দুকযুদ্ধের বিষয়ে র্যাব-১২ পাবনা ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার বীনা রানী দাস সাংবাদিকদের
জানান, একদল সশস্ত্র ডাকাত হলুদগড় বাজারে ডাকাতির প্রস্তুতি নিচ্ছে-এমন গোপন খবরে
সেখানে অভিযানে যায় র্যাব সদস্যরা। র্যাবের উপস্থিতি টের পেয়ে ডাকাতরা গুলি চালায়। র্যাবও পাল্টা গুলি
চালায় এতে রাজ্জাকসহ দুইজন গুলিবিদ্ধ হয়। পরে রাজ্জাককে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে নেয়া হলে
কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। র্যাবের ভাষ্যে, রাজ্জাক চরমপন্থী দল নকশালের ক্যাডার
ছিলেন। তার বিরুদ্ধে সাঁথিয়া থানায় তিনটি হত্যা ও একটি অস্ত্র আইনে মামলা রয়েছে। অনেকদিন
আগে সুজানগর থানার গাঁজনার বিলের সাড়িভিটা এলাকায় পুলিশের বিশেষ অভিযানে ১১ জন নিহত
হয়। জানা যায়, এ সময়ে জনতার হামলা ও পুলিশের গুলিতে ১১জনের মৃত্যু হয়। এখানেই শেষ নয়, প্রায়
প্রতি বছরে চরমপন্থী সর্বহারা ও নকশাল বাহিনীর অনেকের মৃত্যু হলেও আবার নতুন করে এই বাহিনীর
সদস্য হয়ে তারা সন্ত্রাসী কর্মকান্ড করে । এর কারণে পাবনার বিভিন্ন এলাকার সাধারণ মানুষ এসব
বাহিনীর সদস্যদের ভয়ে সবসময় আতঙ্কে থাকেন বলে অনেকেই জানান।