অধ্যপক আতহার হোসেন, গুরুদাসপুর (নাটোর) প্রতিনিধি,
শনিবার নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার চাঁচকৈড় বাজারে আপেল চুরির অজুহাতে
সাইদুল ইসলাম নামের (১০) বছরের এক শিশুকে রশি দিয়ে হাত-পা বেঁধে মারপিট
নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। এতে আইনের ফাঁক দিয়ে বেরিয়ে গেছে
নির্যাতনকারীরা ।
শনিবার বেলা দেড়টার দিকে গুরুদাসপুর থানা পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে শিশু সাইদুলকে উদ্ধার
করে। তবে এ ঘটনায় কাউকে আটক করা হয়নি বলে জানিয়েছেন উদ্ধারকারী পুলিশের
উপ-পরিদর্শক (এসআই) আজম আলী। তিনি নির্যাতনের ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে
বলেন, আপেলের দোকান সংলগ্ন সমজিদের পুরাতন অযুখানার গ্রীলের সাথে রশি দিয়ে
হাত-পা বাধা ছিল শিশু সাইদুল ইসলাম (১০)কে পাওয়া যায়।নির্যাতিত শিশু স্ধাসঢ়;ইদুলের
বাড়ি উপজেলার মশিন্দা ইউনিয়নের জাকিরের মোড় নামক স্থানে। তার বাবার নাম আব্দুল
মিয়া। তিনি পেশায় কৃষি শ্রমিক। দুইভাই দুই বোনের মধ্যে সাইদুল তৃতীয়।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে, মসজিদ সংলগ্ন হানিফের ফলের দোকান থেকে শিশু সাইদুল একটি
আপেল নিয়ে ভোঁদৌড় দেয়। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে ফলের দোকানি ও তার সমর্থকরা শিশুটিকে
পাকড়াও করে। ফল ব্যবসায়ী হানিফ ও তার সহযোগী সিএনজি চালক পিন্টু ও মাইক্রো
চালক মজনু এক পর্যায়ে তাকে নাইলনের দড়ি দিয়ে সমজিদের পুরাতন অযুখানার
গ্রীলের সাথে শিশু সাইদুলকে হাত-পা বেঁধে চর-থাপ্পরসহ জুতা-স্যান্ডেল দিয়ে পেটায় ।
ঘটনাটি সকাল ১০টার দিকের হলেও দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত শিশুটিকে বেঁধে রাখা
হয়েছিল মসজিদের গ্রীলের সাথে । কমপক্ষে ১০ প্রত্যাক্ষদর্শীরা জানালেন, গ্রীলের সাথে
বেঁধে নির্যাতনের সময় শিশুটি ছিল অসহায়। তার দুচোখ দিয়ে অঝরে ঝরঝর করে
পানি পড়ছিল। শিশুটির এমন অসহায়ত্ব সকলে প্রত্যক্ষ করলেও কারো ভেতর মমত্ববোধ দেখা
যায়নি। উপরন্ত চিত্রটি মুঠোফোনে ধারন করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন অনেকে। কেউ কেউ
হাতে লোহার রড ও কাঠের বাটাম নিয়ে শিশুটিকে পুনরায় নির্যাতনে উদ্যত হলে স্থানীয়
দুইজন সংবাদকর্মির উপস্থিতি টের পেয়ে নির্যাতনবন্ধ করে দেয় ।
শিশু সাইদুল বলেন, সকালে খালিপেটে বাড়ি থেকে বের হয় সে। পেটে খিদে লাগায়
আপেলটি দোকন থেকে নিতে বাধ্য হয়েছিল সে। কিন্তু তারা ধরে নির্যাতন চালায় তার
ওপর। অনেক কান্নাকাটি আর আকুতি জানিয়েও কোন লাভ হয়নি।
দোকানি হানিফ জানায়, তিনি দোকান ফেলে প্রকৃতির ডাকে সারা দিতে
গিয়েছিলেন। আপেল নিয়ে যাওয়ার ঘটনা দেখে পিন্টু ও মজনু ড্রাইভার শিশু সাইদুলকে
ধরে বেঁধে ফেলে। রাগে ক্ষোভে তাকে (শিশু সাইদুলকে) চর থাপ্পর দেয়া হয়েছে। সাইদুলের
বাবা এলে তাকে ছেড়ে দেওয়া হবে।
পিন্টু ও মজনু ড্রাইভার বলেন, সাইদুলের বাপ-মা এলে বিচার করে তাদের জিম্মায় ছেড়ে
দেয়া হবে। তবে শিশু সাইদুলকে। বেঁধে চরথাপ্পর মারার ঘটনাটি তারা স্বীকার করেছেন।
গুরুদাসপুর থানার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক (এসআই) সুব্রত কুমার
মাহাতো বলেন, খবর পেয়ে দুপুর দেড়টার দিকে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছিল।
শিশুটি থানা হেফাজতে রয়েছে। শিশু সাইদুলের বাবা এলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া
হবে।