স্টাফ রিপোর্টার, ঝিনাইদহঃ
ঝিনাইদহের রাস্তাগুলো দখল করে নিয়েছে ইটভাটা। প্রায় ৫ ফুট উঁচু
ইটভাটার মাটির স্তুপ। তাতে ঢাকা পড়েছে খোয়া বিছানো সরকারি ইটের
সড়কটি। দেখে বোঝার উপায় নেই, সেই মাটির স্তুপের নিচে কোনো সড়ক
আছে। এই অবস্থা ঝিনাইদহ সদর উপজেলার হরিশংকরপুর ইউনিয়নের
রাজধারপুর-মদারবাজার সড়কটির। চার গ্রামের মানুষকে চার কিলোমিটার
ঘুরে চলাচল করতে হচ্ছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ঝিনাইদহ-শৈলকুপা ভায়া গোয়ালপাড়া সড়কের
রাজধরপুর থেকে পশ্চিমে একটি সড়ক নেমে গেছে। কিছু দূর যেতেই
সেটি দুই ভাগে ভাগ হয়ে গেছে। এর একটি গেছে মদারবাজারে; অন্যটি
গেছে বিজয়পুর গ্রামের দিকে। এই দুই সড়কের কোনায় রয়েছে এসএমবি
ব্রিকস নামের একটি ইটভাটা। মাটির স্তুপ করে রাখা সড়কটি ১২ ফুট
প্রশস্ত। ভাটার কাছে সব মিলিয়ে সড়কের ১০০ গজের মতো জায়গায় মাটি
রাখা হয়েছে। এর মধ্যে ৩০ ফুট জায়গাজুড়ে ৫ ফুট উঁচু করে রয়েছে
মাটির স্তুপ।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ১৫ বছর আগে ইটভাটাটি প্রতিষ্ঠিত হয়। এর
বর্তমান মালিক ঝিনাইদহ শহরের বাসিন্দা মিজানুর রহমান। ইটভাটাটি
দুই সড়কের কোনায় ব্যক্তিগত জায়গায় করা হলেও ক্রমান্বয়ে সরকারি জায়গা
দখল করা হচ্ছে। বর্তমানে দক্ষিণ পাশের সড়কটি দিয়ে কিছুটা চলাচল করা
গেলেও পূর্ব পাশের সড়ক দিয়ে চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। বন্ধ সড়কটি দিয়ে
আগে ফটিকখালী, রাজধরপুর ও নরহরিদ্রা গ্রাম আর মদারবাজারে যাতায়াত
করত মানুষ। তারা এখন দেড় কিলোমিটার ঘুরে বিকল্প পথ দিয়ে চলাচল করছে।
এ সড়কে এখন কেবল পায়ে হাঁটা আর বাইসাইকেলে যাওয়া যায়।
এলাকার কয়েকজন বাসিন্দা এ প্রতিবেদকের কাছে অভিযোগ করে বলেন,
তাঁরা এ বিষয়ে প্রতিবাদ করতে সাহস পান না। কারণ, কোনো কিছু বললেই
মালিকপক্ষ থেকে বলা হয়, তারা গ্রামে এসে ভাটা করেছে ঠিকই; কিন্তু তারা
শহরের বাসিন্দা। যে কেউ বেশি বাড়াবাড়ি করলে তাকে শহরে ফেলে হাত-পা
ভেঙে দেওয়া হবে। ভয়ে আতঙ্কে অভিযোগকারীদের কেউই নাম প্রকাশ করতে
রাজি হননি। তবে বন্ধ ওই সড়কে কথা হয় ফটিকখালী গ্রামের বাসিন্দা চাঁদ
আলীর সঙ্গে।
তিনি বলেন,‘শুধু এইটুকু বলতে পারব, গ্রামবাসীর কষ্টের শেষ নেই। এর
বেশি বলার ক্ষমতা আমাদের নেই।’ স্থানীয় হরিশংকরপুর ইউনিয়ন পরিষদের
(ইউপি) চেয়ারম্যান আল-মামুন ওরফে মাসুম বলেন, ইতিপূর্বে এলাকার
লোকজন বিষয়টি নিয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠছিল। তখন তিনি ভাটা কর্তৃপক্ষের
সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তারা মাটি সরিয়ে নিতে চেয়েছিল। কিন্তু
এখনো নেয়নি। তিনি আবারও যোগাযোগ করবেন। এসএমবি ব্রিকসের
ব্যবস্থাপক নবাব বাশার বলেন, রাস্তা থেকে মাটি সরানোর কাজ চলছে। দ্রুতই
সব মাটি সরানো হবে। তা ছাড়া, ভাটার মৌসুম শেষ হলে মাটি থাকে না।
তবে স্থানীয় ওই বাসিন্দারা বলেছেন, ভাটায় এক মৌসুম শেষে আরেক
মৌসুমের জন্য আগাম মাটি সংগ্রহ করা হয়। ফলে সারা বছরই ওই স্থানে
সড়কের ওপরে মাটির স্তুপ থাকে। এতটা উঁচু করে সেখানে মাটি রাখা
হয়েছে যে একপাশ থেকে অন্যপাশের কিছুই দেখা যায় না। ঝিনাইদহ সদর
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো.মোস্তাফিজুর রহমান বলেন,
বিষয়টি তাঁর জানা নেই। তবে তিনি দ্রুত খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেবেন।