স্টাফ রিপোর্টার, ঝিনাইদহঃ
ঝিনাইদহ জেলার হরিণাকুন্ডু উপজেলার আমতলা বাজারের মকিমপুর মাধ্যমিক
বিদ্যালয়ের চার শিক্ষক ও কেরানী সহ এক ছাত্রকে বেধড়ক পিটিয়ে
হরিণাকুন্ডু হাসপাতালে পাঠিয়েছেন। হরিণাকুন্ডু হাসপাতালে
প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে ছাত্রটি এখন অসুস্থ অবস্থায় তার নিজ বাসায়
অবস্থান করছে।
সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, ঝিনাইদহ জেলার হরিণাকুন্ডু উপজেলার
মকিমপুর গ্রামের বধির সাহিদুল ইসলামের ছেলে বাচ্চু হোসেন মকিমপুর
মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণীতে পড়ে। তার রোল নং ২৫।
ছাত্র বাচ্চু চারদিন ক্লাসে বিশেষ কারণে অনুপস্থিত থাকার পর ঘটনার দিন
৬ই ফেব্রুয়ারী সোমবার সকাল ১০টায় স্কুলে আসে।
একই ক্লাসের ছাত্রী উর্মির অভিযোগের ভিত্তিতে স্কুলের প্রধান শিক্ষক
দেলোয়ার হোসেন ঝাড়–দার রমজানকে দিয়ে বাচ্চুকে অফিস রুমে ডেকে
পাশের ঘরে নিয়ে প্রধান শিক্ষক, সহকারী শিক্ষক মোকাদ্দেস, বাংলা শিক্ষক
ডাবলু ও অফিসিয়াল দায়িত্বে থাকা অশিত কুমার মিলে বাচ্চুকে লাঠি
দ্বারা বেধড়ক মারপিট করে।
মারপিটের পর ছাত্র বাচ্চু স্কুল থেকে বাসায় ফিরে গেলে তার মা রতœা বেগম
তাকে নিয়ে হরিণাকুন্ডু সাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে
বাসায় নিয়ে আসে। ছাত্র বাচ্চুর মা রতœা বেগম সাংবাদিকদের কাছে
অভিযোগ করে বলেন, আমার ছেলে যে অপরাধই করুক না কেন আমাদেরকে
জানানোর প্রয়োজন ছিল।
প্রধান শিক্ষক সহ চার জন শিক্ষক ও কারয়ান মিলে আমার ছেলেকে যেভাবে
লাঠিদিয়ে মেরে জখম করেছে, সেটা চরম অন্যায় ও অবিচার। ছেলের শোকে
দুইদিন যাবৎ অনাহারে থেকে কেঁদে কেঁদে রতœা বেগম আরো বলেন,
আমি মাননীয় প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনার নিকট আমার ছেলেকে জখমের
ঘটনার দৃষ্টান্ত মুলক বিচার দাবি করছি।
এ ঘটনায় মকিমপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দেলোয়ার হোসেন
বলেন, বাচ্চু উর্মি নামক একই ক্লাসে পড়–য়া মেয়েকে উক্ত্যাক্ত করলে
বাচ্চুকে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে বাচ্চু অস্বিকার করলে
আমি বেতের লাঠি দিয়ে ২/৩টা বাড়ি দিই। পরে বাচ্চু বাড়িতে ফিরে গেলে
অভিভাবক বাচ্চুর চাচা রেজাউলের সাথে মিমাংসার জন্য কথাবার্তা চলছে।
গ্রামবাসীদের মধ্যে আলী হোসেন ও মোমেদ আলী জানান, এরকম ঘটনা
নতুন ঘটেনি, মোমেদ আলীর ছেলেকেউ উক্ত স্কুলের ডাবলু স্যার দুবার বেধড়ক
পিটিয়েছে। আবার ছাত্র ছাত্রীরা স্কুলে না আসলে দিনপ্রতি বিশ টাকা করে
জরিমানা গুনতে হয়। আর স্কুল পালালে পঞ্চাশ টাকা হারে জরিমানা দিতে হয়।
আলী হোসেন ও মোমেদ আলী বিভিন্ন সময়ে মাষ্টারদের অন্যায়ের প্রতিবাদ
করতে গেলে তাদের কেউ নাকি প্রধান শিক্ষক দেলোয়ার হোসেনের ছোট ভাই
কথিত খুলনা বিভাগের গোয়েন্দা কর্মকর্তা মান্নানকে দিয়ে হেনস্থা করা
হয়।
এদিকে, গ্রামবাসীদের মধ্যে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ব্যাক্তিরা
সাংবাদিকদের বলেন, মকিমপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দেলোয়ার
হোসেনের ছোট ভাই কথিত খুলনা বিভাগের গোয়েন্দা কর্মকর্তা পি আ
ও মান্নানের হুমকি ধামকি ও অন্যায় অত্যাচারে অতিষ্ঠ। গ্রামবাসীরা তার ভয়ে
মুখ খুলতে পারেনা।
এমনকি প্রধান শিক্ষক দেলোয়ার হোসেনের বিভিন্ন অন্যায় অত্যাচারের
কথাও এলাকার সাধারন মানুষজন ভয়ে বলতে পারেনা। তাছাড়া অফিস সময়ে
তিনি এলাকার বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক সভা সমাবেশে হস্তক্ষেপ
করেন এবং মকিমপুরে তালিমুল কোরআন মাদ্রাসা ও হেফজোখানার মাষ্টার
নিয়োগের ক্ষেত্রেও তিনি সাতক্ষীরার ময়মনসিং এলাকা থেকে নিজ ক্ষমতাবলে ও
টাকার বিনিময়ে সমস্ত মাস্টার নিয়োগ দিয়েছেন। এ ক্ষেত্রে তিনি এলাকার
কমীটির কাউকেই কোন প্রকার হিসাব ও কৈফিয়ত দিতে রাজি নন।
এ ব্যাপারে কথিত খুলনা বিভাগের গোয়েন্দা কর্মকর্তা পি আই ও
মান্নান সাংবাদিকদের মোবাইল ফোনে বলেন, মারধরের ঘটনায় বাচ্চুর
পরিবারের সাথে মিল মিমাংশা করছি, তাছাড়া আমি পুলিশের ভিতর একটা
বড় র্যাঙ্কে কর্মরত আছি। পরিশেষে বড় ভাই মকিমপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের
প্রধান শিক্ষক দেলোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে উক্ত সংবাদটি প্রকাশ না করার
জন্য সাংবাদিকদের পরামর্শ দিয়েছেন জৈনিক মান্নান।
এ বিষয়ে হরিনাকুন্ডু থানার ওসি মাহতাব উদ্দিন ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে
বলেন, আহত ছাত্র বাচ্চুর মা রতœা বেগম থানায় একটি লিখিত অভিযোগ
করেছেন। তদন্ত করে যথাযথ ব্যাবস্থা নেওয়া হবে। তিনি আরো বলেন, এ
ঘটনার তদন্তের জন্য এস আই সাখাওয়াত হোসেনকে দায়ীত্ব দেওয়া হয়েছে।
হরিনাকুন্ডু উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা মনিরা পারভিন এ ঘটনার সত্যতা
স্বীকার করে বলেন, আমার নিকটে কেউ লিখিত অভিযোগ করেনি। ছাত্র
বাচ্চুকে পেটানোর ঘটনা আমি শুনেছি, তবে ছাত্র ছাত্রীদের প্রহার করা
আইনত অপরাধ। তদন্ত করে ব্যাবস্থা নেওয়া হবে বলেও তিনি জানান।