নাটোর ব্যুরো অফিস:
নাটোরের জনসেবা বেসরকারী হাসপাতালে রোগী পাথর অপরেশন করতে গিয়ে
কিডনী চুরির অভিযোগ উঠেছে। এই ঘটনায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ
হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের সহকারী সার্জন ডা:এম এ হান্নানকে
জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে পুলিশ। এসময় হাসপাতালের পরিচালক ও
স্টাফরা পালিয়ে যায়।
আজ শুক্রবার দুপুর সাড়ে তিনটার দিকে শহরের মাদ্রাসা মোড় এলাকার
জনসেবা হাসপাতালে এই ঘটনা ঘটে।
রোগীর স্বজনরা জানান, গত দেড় বছর আগে সিংড়া উপজেলার ছোট
চৌগ্রাম গ্রামের ফজলু বিশ্বাসের স্ত্রী আসমা বেগম পেটের ব্যাথায়
শহরের মাদ্রাসা মোড়ের জনসেবা হাসপাতালে ভর্তি হয়। সেখানে পরীক্ষা
নিরিক্ষার পর পিত্ত থলিতে পাথর হয়েছে বলে রোগীর স্বজনদের জানানো হয়
হয়েছে। পরে ২২ হাজার টাকার বিনিময় অপারেশনের চুক্তি করা হয়। কিন্তু
অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে রোগীকে জিম্মি করে রোগীর কিডনিতে পাথর
রয়েছে বলে ৫০হাজার টাকা দাবী করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। পরে দেনদরবার
শেষে ৩৫ হাজার টাকায় ওই রোগীর অপারেশন সম্পন্ন করেন রাজশাহী
মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের সার্জারির বিভাগের সহকারী সার্জন ডা.
এম এ হান্নান।
কিন্তু অপারেশনের আট মাস পরে রোগীর পেটে ব্যাথা অনুভব করলে ওই
রোগীকে জনসেবা হাসাতালে চিকিৎসা করাতে নিয়ে আসে তার স্বজনরা।
পরে তার পরীক্ষা নিরীক্ষার পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, তার ডান পাশের
একটি কিডনি নেই। বিষয়টি নিশ্চিত হতে রোগীর স্বজনরা রোগীকে
আরো কয়েকটি ক্লিনিকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করান।
আসমা বেগমের স্বামী ফজলু বিশ্বাস বলেন, কিডনিতে পাথর অপারেশনের পর
থেকে রোগী আরো বেশী অসুস্থ হয়ে পড়ে। পরে জনসেবা হাসপাতালে
আবারো আল্ট্রাসোনোগ্রাম করা হয়। সেখান থেকে বলা হয়, রোগীর ডান
পাশের একটি কিডনি নাই। পরে বিষয়টি নিশ্চিত হতে নাটোর শহরের
আইডিয়াল ডায়াগনষ্টিক সেন্টার, কেয়ার হাসপাতাল সহ অন্তত ৫টি
ক্লিনিকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করানো হয়। কিন্তু ওই সব ক্লিনিক থেকেও রোগীর
ডান পাশ্বের একটি কিডনি নেই বলে জানানো হয়।
তিনি আরো বলেন, রোগীকে যে চিকিৎসকের কাছে দেখানো হয়েছিল
আজ শুক্রবার জনসেবা হাসপাতালে সেই চিকিৎসককে আবারো দেখানো
হয়। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, পরীক্ষা-নিরীক্ষায় যদি কিডনি না পাওয়া যায় তাহলে
কিডনি গেল কোথায়।
আসমা বেগমের ছেলে হাবিব বিশ্বাস বলেন, কয়েকটি ক্লিনিক
হাসপাতালে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করানোর পরও কোথাও কিডনি রয়েছে এমন কথা
বলা হয়নি। কিডনি চুরি না হলে যাবে কোথায় এমন প্রশ্ন ছুড়ে দেন
তিনি।
তিনি আরো বলেন, এই হাসপাতাল থেকে কিডনি চুরির অভিযোগ আরো
দুটি ঘটনা রয়েছে। যাদেরকে ৫ থেকে ৭লাখ টাকা দিয়ে মিমাংসা করা
হয়েছে।
তবে কিডনি না থাকার কথাটি স্বীকার করে ডা. এমএ হান্নান বলেন,
কিডনি চুরির প্রশ্নই আসেনা। কোন কারনে কিডনি ছোট হয়ে
রয়েছে। যার কারনে পরীক্ষা-নিরীক্ষায় ধরা পড়ছে না । তবে আইভি নামের একটি
পরীক্ষা করানো হলে নিশ্চিত করে বলা যাবে।
এদিকে, রোগীর স্বজনদের মৌখিক অভিযোগের ভিত্তিতে শুক্রবার বিকেলে
জনসেবা হাসপাতাল থেকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের
সার্জারি বিভাগের সহকারী সার্জন ডা:এম এ হান্নানকে
জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। এসময়
হাসপাতালের পরিচালক ও স্টাফরা পালিয়ে যায়।
নাটোর সদর হাসপাতালের উপ-পরিদর্শক (এসআই) মাসুদ রানা বলেন, রোগীর
স্বজনদের মৌখিক অভিযোগের ভিত্তিতে চিকিৎসককে আটক করা হয়েছে।
পরে যাচাই বাছাই করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
নাটোর জেলা সিভিল সার্জন ডা. আজিজুর রহমান বলেন, থানায় মামলা হলে
বিষয়টি খতিয়ে দেখে জনসেবা হাসপাতালের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা
হবে।