নাটোর জেলা প্রতিনিধি,
নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন থেকে
মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার রশিদুন্নবী বেফিন (৬৫) এর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করেছে
পুলিশ। ভবনের তৃতীয় তলার বেলকনির জানালার গ্রীলের সাথে রশিতে ঝুলিয়ে
থাকা এ লাশ উদ্ধার করা হয়। পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ তাকে হত্যা করে লাশ
ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। তবে ঘটনাটি হত্যা নাকি আত্মহত্যা এ বিষয়ে
নিশ্চিত হতে পারেনি পুলিশ। রশিদুন্নবী বেফিন উপজেলার সাইলকোনা
গ্রামের মৃত খন্দকার এ কে এম আফসার আলীর ছেলে।
পুলিশ জানায়, বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে নয়টার দিকে কমপ্লেক্সের আয়া
সামিরা ঝুলন্ত অবস্থায় প্রথমে লাশটি দেখতে পেয়ে স্থানীয়দের জানায়। এরপর
স্থানীয়রা পুলিশকে খবর দিলে ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে। এসময়
একই তলায় পূর্বদিকে রাখা এক টেবিলের ওপর থেকে বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা
সংসদের উপজেলা শাখার প্যাডে লেখা চিঠি পেয়েছে পুলিশ। ওই চিঠিতে
মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের অফিসিয়াল সীল সম্বলিত লেখা রয়েছে। এতে লেখা
রয়েছে “আমি মো: রশিদুন্নবী এই মর্মে স্বীকার করিতেছি যে, আমার
বুকে দারুন ব্যাথা। আমি সহ্য করিতে না পারিয়া মৃত্যুর পথ বেছে নিলাম।
আমার মৃত্যুর জন্য আমার সংসদের কেহ দায়ী নহে দয়া করে প্রশাসন আমার
সংসদের কাউকে দায়ী করবেন না। আমার শরীর খারাপ বেশি লিখতে পারলাম না।
ইতি- মো : রশিদুন্নবী, ৫/৪/২০১৭ইং” । পুলিশ আরো জানিয়েছে,
নিহতের মাথার বাম পাশে আঘাতের চিহ্ণ রয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে
কীটনাশকের বোতল উদ্ধার করা হয়েছে। এদিকে কমান্ডার বেফিনের ব্যবহৃত
মোবাইল ফোনের সন্ধান পাচ্ছে না পুলিশ। তবে ফোন সেটটির সন্ধান
অব্যাহত রেখেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
নিহতের ভাই জুলফিক্কার জানান, কমান্ডার বেফিন বুধবার সকালে উপজেলা
মুক্তিযোদ্ধা অফিসের উদ্দেশ্যে শাইলকোনাস্থ নিজ বাড়ি থেকে বের হয়ে আর
ফিরে যাননি। বৃহস্পতিবার সকালে লোকমুখে তার মৃত্যুর খবর পেয়ে ছুটে
এসে লাশ দেখতে পান। তবে তিনি অভিযোগ করেন তার ভাইকে কেউ হত্যা
করে লাশ ঝুলিয়ে রেখেছে।
এদিকে খবর পেয়ে তাৎক্ষনিকভাবে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন, নাটোর-১ (লালপুর
– বাগাতিপাড়া) আসনের সাংসদ এ্যাড. আবুল কালাম আজাদ, উপজেলা
চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান, ভারপ্রাপ্ত ইউএনও আহসান হাবিব জিতু,
নাটোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার খাইরুল আলম।
এ ব্যাপারে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার খাইরুল আলম জানান, এক দিকে গলায় রশি
দিয়ে ঝুলিয়ে থাকা অন্যদিকে লাশের পাশে কীটনাশকের বোতল বিষয়টি
অস্বাভাবিক। উদ্ধারকৃত চিঠি যাচাই বাছাইয়ে প্রেরণ করা হবে। তবে
এটি আত্মহত্যা নাকি হত্যাকান্ড তা তদন্তের পর নিশ্চিত হওয়া যাবে।
এদিকে রশীদুন্নবী বেফিনের মৃত্যুর খবরে বাগাতিপাড়া উপজেলা জুড়ে
শোকের ছায়া নেমে এসেছে। তার বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। মা
রেনুকা, স্ত্রী সুফিয়া বেগম, নাতী তানভীরসহ পরিবারের সদস্যদের
আহাজারিতে ভারি হয়ে উঠেছে সেখানকার পরিবেশ।
কমান্ডার রশীদুন্নবী বেফিন ১৯৫৪ সালের ৫ অক্টোবর জন্ম গ্রহন করেন। তার
সহযোদ্ধা মুনছুর রহমান জানান, বেফিন ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে
এফএফ সদস্য ছিলেন এবং ভারত থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে ৭ নম্বর সেক্টরের
অধীনে তৎকালীন বৃহত্তর রাজশাহী জেলার ঝলমলিয়ায় সম্মুখ যুদ্ধে অংশগ্রহন
করেন। এছাড়াও আব্দুলপুর-লোকমানপুর রেলসড়কের মাঝে ছোট ব্রীজে মাইন
বিস্ফোরনে অংশ নেন বেফিন। তিনি ২০১৪ সালের ৪ জুন মুক্তিযোদ্ধা সংসদ
নির্বাচনে বাগাতিপাড়া উপজেলা কমান্ড হিসেবে নির্বাচিত হন।