সরিষাবাড়ী (জামালপুর): ভারতের আসাম থেকে বাংলাদেশে ভেসে আসা বুনো হাতিটিকে উদ্ধার করতে ব্যর্থ হয়ে দেশে ফিরে যাচ্ছে ভারতীয় বিশেষজ্ঞদল।
রোববার জামালপুরের সরিষাবাড়ীর নদী চরাঞ্চল থেকে রাজধানী ঢাকায় রওনা দেন ভারতীয় বিশেষজ্ঞ দলের তিন সদস্য।
ভারতীয় কর্মকর্তারা গণমাধ্যমকে জানান, চেতনানাশক ওষুধ দিয়ে হাতিটিকে সংজ্ঞাহীন করে অন্যত্র নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা সফল হয়নি। তাছাড়া তাদের ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ায় দেশে ফিরে যাওয়ার জন্য তারা ঢাকায় রওনা দিয়েছেন।
তবে বাংলাদেশের বন কর্মকর্তারা বলছেন, হাতিটিকে না নিয়েই ভারতীয় দল ফিরে যাওয়ার পরে এখন একটি বিকল্প পরিকল্পনা করা হচ্ছে। এদিকে, চারপাশ ঘিরে উৎসুক জনতার ভিড় থাকায় হাতিটির পানি থেকে ডাঙ্গায় উঠতে পারছে না।
বন কর্মকর্তাদের দেয়া তথ্যমতে, গেল ২৮ জুন উজানের ঢল ও বন্যার স্রোতে ভারতের আসাম থেকে ওই বুনো হাতি বাংলাদেশের সীমান্তের কুড়িগ্রামে আসে। পরে ব্রহ্মপুত্র ও যমুনা নদী পাড়ি দিয়ে বগুড়ার সারিয়াকান্দি ও সিরাজগঞ্জের কাজিপুর ঘুরে ২৮ জুলাই মধ্যরাতে জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলার চরাঞ্চলে এসে বন্যার পানিতে অবস্থান নেয়।
দুদিন পর ৩০ জুলাই হাতিটি উদ্ধারে ঢাকা বিভাগীয় বন্যপ্রাণি অপরাধ দমন ইউনিটের পরিদর্শক বাবু অসিম মল্লিকের নেতৃত্বে বন বিভাগের ঊর্ধ্বতন ১৭ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল সরিষাবাড়ীতে আসে। দেশীয় প্রযুক্তিতে হাতিটি উদ্ধারে সক্ষম না হওয়ায় ভারত সরকারকে বিষয়টি জানানো হয়।
পাঁচদিন পর গত ৪ আগস্ট দুপুরে আসাম রাজ্য বন বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ত্রিবেশ ভট্টাচার্য্যরে নেতৃত্বে তিন সদস্যের ভারতীয় প্রতিনিধি দল এসে চরাঞ্চলে অবস্থান নেয়া হাতিটির উদ্ধার প্রক্রিয়া শুরু করে। এক পর্যায়ে অন্য এক হাতিতে চড়ে বিশেষজ্ঞরা চেতনানাশক ইনজেকশন ছুড়ে দিলেও তা ব্যর্থ হয়। হাতিটি ডাঙায় না ওঠায় উদ্ধার কাজ ব্যাহত হয়।
ভারতীয় উদ্ধার টিমের প্রধান ত্রিবেশ ভট্টাচার্য্য জানান, হাতিটি উদ্ধার করতে চেতনানাশক ইনজেকশন পুশ করার প্রয়োজন পড়ে। কিন্তু ডাঙায় না ওঠায় তা সম্ভব হয়নি।
বাংলাদেশ টিমের প্রধান বন্যপ্রাণি অপরাধ দমন ইউনিটের পরিদর্শক বাবু অসিম মল্লিক বলেন, ‘হাতিটি উদ্ধার করা সম্ভব না হলেও সার্বক্ষণিক নজরে রাখা হয়েছে। খাবার সরবরাহসহ নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। তবে দীর্ঘদিন পানিতে অবস্থান করায় বর্তমানে হাতিটি অসুস্থ ও দুর্বল হয়ে পড়েছে।
এদিকে, হাতিটির যেন কোনো ক্ষতি করা না হয় সে জন্য স্থানীয়দের সচেতন করার উদ্যোগ নেয় প্রশাসন। এ উপলক্ষ্যে শুক্রবার (৫ আগস্ট) বিকেলে সরিষাবাড়ী পৌরসভার বাউসি পপুলার চত্বরে উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে জরুরি মতবিনিময় সভা ডাকা হয়। যদিও বৃষ্টির কারণে তড়িঘড়ি করে তা শেষ করা হয়েছে।
সভায় উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক শাহাবুদ্দিন খান, ইউএনও সাইয়েদ এজেড মোরশেদ আলী, ওসি বিল্লাল উদ্দিন, পৌর মেয়র রুকুনুজ্জামান রোকন, ভারতীয় উদ্ধার টিমের প্রধান ত্রিবেশ ভট্টাচার্য্য, সদস্য কৌশিক শর্মা, গোবিন্দ রায়সহ বাংলাদেশ টিমের প্রতিনিধিরা। উপস্থিত ছিলেন রাজনৈতিক নেতা, সরকারি কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি, সাংবাদিক ও গণ্যমান্য ব্যক্তিরা।
জেলা প্রশাসক শাহাবুদ্দিন খান বলেন, হাতিটি পানিতে অবস্থান করায় অনেক চেষ্টা করেও উদ্ধার করা সম্ভব হচ্ছে না। তাই হাতি উদ্ধারে সবাইকে সহযোগিতা করার আহ্বান জানান। সেই সঙ্গে হাতিকে ভয়ভীতি প্রদর্শন ও ভিড় না করতে অনুরোধ জানিয়ে এলাকায় মাইকিং করা হচ্ছে।