রবিবার, ২১ এপ্রিল ২০২৪, ০৫:০০ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম ::

গুলশানের সন্দেহভাজন জঙ্গী নিবরাস ইসলাম যখন ঝিনাইদহে

বাংলার প্রতিদিন ডেস্ক ::
  • আপডেট সময় শুক্রবার, ১৫ জুলাই, ২০১৬
  • ২৫৩ বার পড়া হয়েছে

ঝিনাইদহ প্রতিনিধিঃ

ঢাকার গুলশানে হলি আর্টিজান বেকারিতে সন্ত্রাসী হামলার সন্দেহভাজন

জঙ্গী নিবরাস ইসলাম পরিচয় গোপন করে সাঈদ নামে ঝিনাইদহ শহরে বাসা

ভাড়া নিয়েছিলেন এমন খবর ফাঁস হয়ে পড়েছে। এ নিয়ে ঝিনাইদহের

প্রশাসন ও সাংবাদিকদের মধ্যে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।

তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, নিবরাস ইসলামের সাথে মোস্তফাসহ আরো

৭/৮ জন যুবক ওই ভাড়া বাড়িতে থাকতেন।

সোনালীপাড়া মসজিদের ইমাম ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের দাওয়া বিভাগের ছাত্র

রোকনুজ্জামন তাদেরকে এই বাসা ভাড়া নেওয়ার ব্যাপারে সহায়তা করেন।

নিবরাস ইসলাম ওরফে সাঈদ গত ২৮ জুন পর্যন্ত প্রায় সাড়ে চার মাস ওই

ভাড়া বাড়িতে ছিলেন। বাড়ির মালিক সেনাবাহীনির সাবেক সার্জেন্ট

কওছার আলী মোল্লার স্ত্রী বিলকিস নাহার এ সব তথ্য জানান।

তবে তিনি নিবরাস ইসলামকে সাঈদ বলে জানতেন। গত সোমবার একটি

বেসরকারী টেলিভিশনের অনুসন্ধান দলের কাছে বিলকিস নাহার নিবরাস

ইসলামের ছবি দেখে কথিত সাঈদ বলে সনাক্ত করেন।

বৃহস্পতিবার দুপুরে ঝিনাইদহ প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক দৈনিক

সমকাল প্রতিনিধি মাহমুদ হাসান টিপুর নেতৃত্বে একদল সাংবাদিক

সেনাবাহীনির সাবেক সার্জেন্ট কওছার আলী মোল্লার বাড়িতে যান।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বাড়ির মালিকের স্ত্রী বিলকিস নাহার বলেন,

গুলশান হামলায় সন্দেহ ভাজন জঙ্গী নিবরাস ইসলামই সাঈদ। আমি ছবি দেখে

বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছি। ছবির সাথে চেহারার মিল রয়েছে।

ঝিনাইদহ শহরের সোনালীপাড়ার বাসিন্দা স্থানীয় সরকার কেসি বিশ্ববিদালয়

কলেজের ছাত্র নওর জামিল বর্ষন জানান, সাঈদ তাদের পাড়ায় চার মাসের বেশি

সময় ভাড়া ছিল। তিনি ইসলামী বিশ্ববিদ্যলয়ে ভর্তি হবেন বলে তাদের কাছে

জানায়।

এ সময় সাঈদ তাদের সাথে ফুটবল খেলতেন। তিনি অনর্গল ইংরেজীতে কথা

বলতে পারতেন। এ জন্য সবাই তাকে পচ্ছন্দ করতেন।

বর্ষন আরো জানান, ঢাকার গুলশানে হলি আর্টিজান বেকারিতে সন্ত্রাসী

হামলার সাথে জড়িত সন্দেহভাজন জঙ্গীদের ছবি প্রকাশের পর আমরা তাজ্জব

হয়ে যায়। তাদের সাথে খেলা করা সেই সাঈদই নিবরাস ইসলাম বলে তারা

ছবি দেখে জানতে পারেন।

এদিকে জঙ্গী নিবরাস ইসলামকে সহায়তার দায়ে ঝিনাইদহ থেকে ৫ জনকে

আটক করেছে ঢাকা থেকে আগত আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিশেষ

টিম। আটকৃতরা হলেন, ঝিনাইদহ শহরের সোনালী পাড়ার ঠান্ডু মোল্লার

ছেলে কাওছার আলী মোল্লা, তার দুই ছেলে ঝিনাইদহ কলেজের ছাত্র বিনছার

আলী, নারিকেলবাড়িয়া কলেজের ছাত্র বেনজির আলী, হামদহ সোনীপাড়া

মসজিদের ইমাম যশোরের ঝিকরগাছার নায়রা গ্রামের রোকনুজ্জামান ও

শারশিনা মাদ্রাসার ছাত্র আদর্শপাড়া কচাতলার মাদ্রাসা শিক্ষক আবুল কালাম

আজাদের কিশোর ছেলে হাফেজ আব্দুর রব।

গত ৬ জুলাই সন্ধার সময় এদের গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়া হয় বলে দাবী করেন

বিসকিস নাহার। তিনি আরো দাবী করেন ঈদের দিন (৭ জুলাই) তাকেও

ঝিনাইদহ র‌্যাব ক্যাম্পে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর তাকে

ছেড়ে দেওয়া হয়। এর আগের দিন সন্ধ্যায় (৬ জুলাই) র‌্যাবসহ একটি বিশেষ

বাহিনীর সদস্যরা তার স্বামী, দুই ছেলে, মসজিদের ইমাম ও তারাবির

নামাজের হাফেজকে নিয়ে যায়।

বুধবার বিকাল থেকে দেশের একটি বেসকরী টিভি চ্যানেলে ঝিনাইদহ

থেকে ৫ সন্দেহ ভাজন জঙ্গী আটকের খবর প্রচার করে।

এ নিয়ে ঝিনাইদহ সাংবাদিকদের মধ্যে তোলপাড় শুরু হয়। বৃহস্পতিবার

ঝিনাইদহ শহরের সোনালীপাড়ায় একাধিক সাংবাদিক সরেজমিন তদন্ত

করেন। সাংবাদিকদের অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে আরো কিছু চাঞ্চল্যকর

তথ্য। উঠে আসে নানা কৌতুহলী প্রশ্ন।

প্রশ্নের পাশাপাশি সচেতন মানুষের মাঝে সন্দেহ সৃষ্টি হয়েছে সোনালী

পাড়ার সাবেক সেনা সদস্যের ভাড়া বাড়ির ওই সাঈদই যদি নিবরাস ইসলাম

হয় তবে তিনি ঝিনাইদহ থাকা অবস্থায় জেলায় কিছু আলোচিত হত্যা

সংঘটিত হয়। এই হত্যার তালিকায় হিন্দু সম্প্রদায়ের দুই পুরোহিতসহ

রয়েছে খ্রীষ্টান হোমিও চিকিৎসক ও শিয়া মতবাদের এক ব্যক্তি।

এই চার হত্যাকান্ডের বিষয়ে মধ্যপ্রাচ্য ভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন আইএস দায়

স্বীকার করে বিবৃতি প্রচার করে। যা গুলশানে হলি আর্টিজান বেকারিতে

সন্ত্রাসী হামলার সাথে মিল রয়েছে।

গত ৭ জুন ঝিনাইদহ সদর উপজেলার করোতিপাড়া গ্রামের আনন্দ গোপাল

গাঙ্ধসঢ়;গুলী খুন হন। নিহত আনন্দ গোপালের বাড়ি ও নিবরাস ইসলাম ওরফে

সাঈদ যে বাড়িতে ভাড়া থাকতেন সেই বাসার মালিক কওছার আলী মোল্লার

বাড়ি একই গ্রাম বাগডাঙ্গা করোতিপাড়ায়। এ নিয়ে অপরাধ বিশেষজ্ঞদের

মাঝে নানা সন্দেহ ঘুরপাক খাচ্ছে।

অনেকর মন্তব্য র‌্যাব, পুলিশ ও গোয়েন্দাদের নজর ফাকি দিয়ে ঝিনাইদহ শহরকে

নিরাপদ হিসেবে গড়ে তোলে সন্দেহ ভাজন জঙ্গীরা। এই অঞ্চলের সাহসী ও

উগ্র মনোভাবের কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পড়–য়া ছেলেদের জঙ্গী হিসেবে গড়ে

তোলে। এর আগে গত ৭ জানুয়ারী ঝিনাইদহ সদর উপজেলার কালুহাটী

গ্রামের বেলেখাল বাজারে খ্রীষ্টান হোমিও চিকিৎসক সমির বিশ্বাস ওরফে

সমির খাজা ও ১৪ মার্চ কালীগঞ্জ শহরের নিমতলা এলাকার শিয়া মতবাদের

হোমিও চিকিৎসক আব্দুর রাজ্জাককে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।

সর্বশেষ গত ১ জুলাই ঝিনাইদহ সদর উপজেলার উত্তর কাস্টসাগরা গ্রামে

এবার স্থানীয় রাধামদন মঠের সেবায়েত শ্যামানন্দ দাসকে (৬২) কুপিয়ে হত্যা

করে দুর্বৃত্তরা।

এ বিষয়ে ঝিনাইদহ জেলা পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আজবাহার

শেখ জানান, এ বিষয়ে আমরা কিছুই জানি না। তিনি বলেন, এদের কে

আটক করেছে, কেন করেছে বলতে পারছি না।

তবে ঝিনাইদহ সদর থানার বিদায়ী ওসি হাসান হাফিজুর রহমান ঝিনাইদহ

প্রেসক্লাবে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে কথা প্রসঙ্গে

জানিয়েছিলেন, ঢাকার গুলশানে হলি আর্টিজান বেকারিতে সন্ত্রাসী

হামলার সন্দেহভাজন জঙ্গী নিবরাস ইসলাম ঝিনাইদহ শহরের হামদহ এলাকায়

ভাড়া থাকতেন।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © banglarprotidin.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com
themebazarbanglaro4451