ঘন জোছনায় ওরা তাকে হত্যা করলো- আর রুটি মদের ব্যবস্থা করলো। তার কিছুটা মাংসের ভাগ আমার ভাইও পেয়েছিল। যদিও সে মদ খায় না। তবুও আমার মনে হয় তার শরীরে অর্ধেক মানুষের রক্ত অর্ধেক শুয়োরের। মনে মনে ভাবি যে প্রাণীটি মারা পড়েছে সে শিয়াল নয়। এ ভাবনা কেনো? কেননা শিয়াল হলো তো অন্য শিয়ালগুলো বিষাদে ভরাক্রান্ত হৃদয়ে বনের ভিতর কুঁকুড়ে থাকতো- হুকা হুয়া ডাকতো না। নিশ্চয় ওরা ভাবতো এভাবে আমরা মারা পড়বো আর মানুষের খাদ্য হবো।
রাত বাড়ছে।
বাতাসে মাংসের ঘ্রাণ।
ভাইয়ার গলার আওয়াজ শোনা গেলো- অভিক ঘরে আয়।
রসুই ঘর।
মা, ভাবী, ভাইয়া আর আমি। ভাইয়া শিয়ালের মাংস খাচ্ছে। মা বলল, অভিক তুইও খা। বাত টাত থাকবেনা। আমি বললাম, খাবোনা।
ভাবী বললো, কেনো?
আমি জবাব দিলাম- কুকুরের মাংস খাবোনা।
মা ধমক দিলেন। ভাইয়া বললেন, যতসব আজেবাজে কথা। ওষুধ খেয়েছিস?
ভাবী হাসলেন।
সকালবেলা।
জলিল সাহেব এলেন আমাদের ঘরে। ও শহরে ব্যবসা করে। জাত ব্যবসায়ী। আমি জানি সে এসেছে ‘নাই’ হয়ে যাওয়া জিনিসটা খুজতে। আমি এও জানি সে জিনিসটা পেতে হলে অনেকের পেট কাটতে হবে। পেট কেটে ‘ও’ মল পাবে ; জিনিস পাবেনা।
হা…হা…হা…
জলিল সাহেব বলল, হাসছ কেনো?
-আমি খাইনি
-কি খাওনি?
-কুকুরের মাংস
-তুমি জানতে
-হু
-বাঁধা দিলেনা কেন?
-পাগলের বাধা কেউ শুনবে?
-পাগল কে?
-আমি
-তোমার রোগটা বোধহয় বেড়েছে
-বেড়েছে। হা… হা… বেড়েছে।
শিয়ালের বদলে জলিল সাহেবের বিদেশি কুকুর মারা পড়েছে। একদল একথা বিশ্বাস করলেন; অন্যদল বিশ্বাস করলেন না। একদল বলল, সবাই মিলে জলজ্যন্ত শিয়াল মারলো- কুকুর বুঝি আমরা চিনিনা। অন্যদল বলল- মানলাম ওটা শিয়াল- তাহলে জলিল সাহেবের কুকুরটা গেল কোথায়? হুনুফা বিবির গলার স্বর ও বদলে গেল- ‘ শিয়াল হত্যা, নিরীহ জীব হত্যা, এবার পুরো গ্রাম উজাড় হবে। বড় অঘটন ঘটবে। এখনই শিন্নী-টিন্নীর ব্যবস্থা করা হোক। জীবের নামে ভোগ দেওয়া হোক’। তার কথা অনেকে বিশ্বাস করল অনেকে করল না। এভাবে একটা শিয়াল অথবা কুকুর মানুষের নজর কেড়ে নিল।
বিকাল বেলা।
উঠানে বসে আছি।
বাম হাতের আঙ্গুল দিয়ে গোঁফ চুলকাচ্ছি। মা বলেন গোঁফ চুলকাতে চুলকাতে নাকি আমার অদ্ভুত একটা রোগ হয়েছিল। উঠানে একটা কুকুর হাঁটছে। আমি কুকুরটাকে দৌড়াতে শুরু করি। কুকুর দৌড়াচ্ছে- আমি দৌড়াচ্ছি। আমি দৌড়াচ্ছি- কুকুর দৌড়াচ্ছে। ‘যা ভাগ এবাড়ির ছায়া মাড়াবি না। মারা পড়বি’।
মা বললেন কি শুরু করেছিস?
-মানে?
কুকুরটা মারলি কেনো?