নিজস্ব প্রতিবেদক:
ছেলেকে স্কুলে ভর্তি করা, আসা-যাওয়ার মাধ্যমে শিক্ষক ও অভিভাবকদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার সূত্র ধরেই জঙ্গিবাদী মতাদর্শে জড়িয়ে পড়েন রাজধানীর মতিঝিলের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা আবু সাদাত মো. সুলতান আল রাজী ওরফে লিটন (৪১)। গতকাল রোববার তাঁকে অন্য আরো নয়জনের সঙ্গে গ্রেপ্তার করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
আজ সোমবার বিকেলে রাজধানীর কারওয়ান বাজারের বিএসইসি ভবনে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) মিডিয়া সেন্টারে গতকাল গ্রেপ্তার করা ১০ জনের সঙ্গে লিটনকেও সাংবাদিকদের সামনে হাজির করা হয়। এ সময় সেখানে ছেলের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রাজধানীর উত্তরা লাইফ স্কুলের সাবেক অধ্যক্ষ শরিফুল ইসলামও ছিলেন।
লিটনের পরিচয় তুলে ধরতে গিয়ে সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আনোয়ার লতিফ খান এমনটাই দাবি করেন।
গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে আরো আছেন মিজানুর রহমান (৪৩), জিয়াউর রহমান (৩১), আল মিজানুর রশিদ (৪১), জান্নাতুল মহল ওরফে জিন্নাহ (৬০), মো. কৌশিক আদনান সোবহান (৩৭), মেরাজ আলী (৩০), মুফতি আবদুর রহমান বিন আতাউল্লাহ (৩৭), মো. শাহরিয়ার ওয়াজেদ খান (৩৬), শরিফুল ইসলাম (৪৬)। গ্রেপ্তার শরিফুল ইসলাম উত্তরার লাইফ স্কুলের সাবেক অধ্যক্ষ এবং বর্তমানে তিনি উত্তরা এলাকায় একই ধরনের আরেকটি স্কুল নলেজ হোমের অধ্যক্ষের দায়িত্বে রয়েছেন।
এঁরা সবাই রাজধানীর গুলশান ও কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া হামলার ‘পরিকল্পনাকারী ও জোগানদাতা’ নব্য জামা’আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) নেতা নিহত তামিম চৌধুরী এবং আশুলিয়ায় নিহত সংগঠনের আমির সারোয়ার জাহানের গ্রুপের সদস্য ও অনুসারী ছিলেন বলে দাবি করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। পুলিশের এই এলিট ফোর্স জানিয়েছে, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে গতকাল রোববার রাতে রাজধানীর উত্তরা ও কলাবাগান এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আনোয়ার লতিফ খান আরো জানান, লিটনের গ্রামের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলায়। তিনি রাজধানীর মতিঝিলের খাজা ইকুইটি সার্ভিসেস নামে একটি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন।
উত্তরায় লাইফ স্কুল প্রতিষ্ঠার পর পরই লিটন তাঁর একমাত্র ছেলে সাকিন সাদাত আল রাজীকে ওই স্কুলে ভর্তি করান। লিটন প্রতিষ্ঠানটির খবর পান তাঁর মামাতো ভাই লাইফ স্কুলের শিক্ষক আবদুর রহমানের মাধ্যমে।
র্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক দাবি করেন, ‘লাইফ স্কুলে মেজর জাহিদের মেয়ে আর লিটনের ছেলে একই ক্লাসে পড়ত। সেই সূত্রেই ২০১৫ সালের অক্টোবর-নভেম্বর মাসে মেজর জাহিদের সঙ্গে লিটনের পরিচয় হয়। ঘনিষ্ঠতার সুবাদে লিটন পরিবার নিয়ে এই সময়ের মধ্যে তিন-চারবার মেজর জাহিদের বাসায় দাওয়াত খেতে গিয়েছেন।’
মেজর জাহিদ তাঁর বাসায় ইসলাম সম্পর্কে আলোচনা করেন এবং ল্যাপটপে সিরিয়া, ইরাকসহ বিভিন্ন দেশের চলমান ঘটনাবলি লিটনকে দেখান। লিটন লাইফ স্কুলের হাল’কা-তে অংশ নিতেন। এভাবেই লিটন নব্য জেএমবির মতাদর্শের অনুসারী হয়ে ওঠেন।
লেফটেন্যান্ট কর্নেল আনোয়ার লতিফ খান আরো বলেন, ‘একসময় ভয়ে লিটন মেজর জাহিদের মোবাইল ফোন নম্বর নিজের কললিস্ট থেকে বাদ দিয়ে দেন।’