রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ০৪:১১ অপরাহ্ন

পাইকগাছার প্রকৃতিতে শীতের ছোঁয়া গাছিরা ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন খেঁজুর রস সংগ্রহ প্রক্রিয়ায়

বাংলার প্রতিদিন ডেস্ক ::
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ১৫ নভেম্বর, ২০১৬
  • ১৪৪ বার পড়া হয়েছে

 

ইমদাদুল হক,পাইকগাছা (খুলনা) :

ঋতু চক্রের পালাবদলে শরৎ কে বিদায় জানিয়ে শীত আসতে শুরু করেছে। সকালের

দূর্বাঘাস ও পাতা-পলবেও এসেছে শিশিরের ছোঁয়া। রাতের শেষ ভাগে শিশিরের

টাপুর-টুপুর মন মাতানো শব্দ পুলকিত করছে অন্যভাবে। শুরু হয়েছে গ্রাম বাংলার

ঐতিহ্যের প্রতীক খেঁজুর গাছ উঠানোর (রস সংগ্রহের) কাজ। সংশিষ্ট

গাছিদের ব্যস্ততাই জানান দিচ্ছে শীত এসেছে।

জানাযায়, ৯০্#৩৯;র দশকের আগে পর্যন্ত খুলনার দক্ষিণাঞ্চলের প্রান্তর জুড়ে

যতদূর চোখ যেত, ছিল সবুজের সমারোহ। সবুজে-শ্যামলে ভরে থাকত সারা মাঠ।

ক্ষেতের ভেঁড়ি বা আইল দিয়ে সারি সারি দেখা মিলত হাজার হাজার খেঁজুর গাছ

কিন্তু মাত্র কয়েক বছরের ব্যবধানে সবকিছুই যেন অতীত। এখন প্রান্তর জুড়ে

ধানের পরিবর্তে চাষ হয় চিংড়ির। আর নগরায়নের প্রতিযোগীতায় ইট ও টালীর

ভাটা বিরামহীণ গতিতে গিলে খাচ্ছে কালের স্বাক্ষী খেজুর গাছ গুলিকে। শীতের

সকালে সোনালী রোদের সাথে মিষ্টি খেজুরের রসের স্বাদও যেন তাই আজ ভূলতে

বসেছে চিরচেনা জনপদের মানুষা। তবুও যেখানে যে গাছ গুলি এখনও নিরবে

দাঁড়িয়ে আছে সেগুলিকে নিয়েই যেন গাছিদের শুরু হয়েছে অন্য রকম ব্যস্ততা।

সব মিলিয়ে শরৎ শেষে হেমন্তের প্রকৃতিই জানান দিচ্ছে শীত এসেছে।

উপজেলার ১০ টি ইউনিয়নে ছোট বড় মিলে প্রায় সাড়ে ৪ হাজারের মত লবণ

পানির চিংড়ি মাছের ঘের রয়েছে। মাটির উর্বরতা শক্তি হ্রাস পেয়ে বেড়ে গেছে

অন্তা। বছরের সারাটা সময় জুড়ে একদিকে যেমন খেঁজুর গাছের প্রতি ভাটা

সমূহের চোখ রাঙানি অন্যদিকে পরিবেশ বিপর্য়য়ে গাছের অকাল মৃত্যু। সব

মিলিয়ে জনপদ থেকে সাবার হয়েই চলেছে মিষ্টি রসের অফুরন্ত ভান্ডার খেজুর

গাছ। তাই গাছের সাথে সাথে গাছিরাও যেন তাদের পেশা পরিবর্তন করে চলে

গেছে অন্য পেশায়। কোন কোন এলাকায় যারা এখনও বাপ-দাদার পেশা আঁকড়ে পড়ে

আছে গাছির পেশায় তাদেরও যেন যায় যায় অবস্থা। এপ্রসঙ্গে কথা হয় প্রবীণ

গাছি সবুর মোড়লের সাথে। কেমন যাচ্ছে তার দিন-কাল এমন প্রশ্ন করতেই যেন

বড় একটা দীর্ঘশ্বাস, তার পর ছল-ছল চোখে বললেন, এলাকায় এখন খেঁজুর গাছই

নেই তাই তাদের আর ভাল থাকা! মাঠের দিকে যাচ্ছেন, সেদিকের মাঠে নাকি এখনও

কিছু কিছু গাছ রয়েছে। শীতের আগমনি ধ্বনিতে তারা নাকি তাকে

(গাছিদের) আহ্বান করে রস এসেছে গাছ তোল।

প্রসঙ্গত, খেজুর গাছের অগ্রভাগের একটি নির্দিষ্ট অংশ চিরে বিশেষ

ব্যবস্থায় ছোট কলসি (ভাড়) বাঁধা হয়। ফোঁটায় ফোঁটায় রসে পূর্ণ হয় সে

কলসি। তাই রসের সন্ধানে খেঁজুর গাছ তোলা কাটাসহ বিভিন্ন রকমের

পরিচর্যা-প্রক্রিয়ায় ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন গাছিরা। যদিও এখন গাছিরা

গাছিনি বা তাদের বউদের ছন্দ বা গানের সুরে বলেননা ”ঠিলে ধুয়ে দে-রে বউ

গাছ কাটতে যাব” ছোট হোক বা বড়, খেঁজুর গাছে অত্যন্ত ঝুঁকি নিয়েই

তোলা কাটা করতে হয়। কোমরে মোটা রশি বেঁধে গাছে ঝুলে গাছ তোলার কাজ

করতে হয়। এছাড়া রস সংগ্রহের পাত্র ভাঁড়, ঠিলে বা কলস প্রস্তুত করতেও তা

নিয়মিত পুড়াতে হয়। এলাকাবাসী খেঁজুর গাছ উজাড়ের জন্য সবচেয়ে বেশী

দায়ী করেছেন এলাকার ইট ও টালির ভাটা মালিকদেরকে। কেননা খেঁজুর গাছের

চাহিদাটা ভাটাগুলোতেই বেশী। এছাড়া প্রান্তর জুড়ে চিংড়ি চাষ হওয়ায় ঘের

প্রস্তুত করতে খেঁজুর গাছ কাটতে হয়। নানান কারণে তাই যেন আজ গ্রাম-বাংলা

থেকে বিলুপ্ত হতে চলেছে খেঁজুর গাছ।

তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, যশোরের পর এজনপদেই বেশী পরিমাণ খেজুর গাছ

ছিল। তাই রসের পাশাপাশি চাহিদাতিরিক্ত গুড়ও উৎপাদিত হত এখান থেকে।

বর্তমানে এলাকায় খেঁজুর গাছের দেখা কম মিললেও বছরের প্রায় সারাটা সময়

জুড়ে কৃত্রিম পন্থায় চিনি জ্বালিয়ে তৈরি হয় খেঁজুরের গুড় বা পাটালি।

আমাদের গ্রাম বাংলায় অতীতে খেঁজুর রসের যে সুখ্যাতি ছিল তা যেন তাই

ক্রমেই কমে যাচ্ছে। একটা সময় ছিল যখন খেঁজুরের রস বিহীণ শীতের সকালই

জমত না। সকালের সোনালী রোদে বসে মগ,গাস বা ঘটে করে মিষ্টি রসের চুমুক

না হলে যেন খালি খালি লাগত। সান্ধ্য বা সেজো রস ছিল যেন আরো মজাদার।

খেঁজুরের গুড় রসনা বিলাসি বাঙালীর সংস্কৃতিরই যেন একটা অংশ। ক’দিন পরেই

প্রতিটি ঘরে খেঁজুরের রস দিয়ে পিঠা-পুলি- পায়েস তৈরীর ধূম পড়বে। ঢেঁকি

ঘরে চাল কুটার ধুম পড়ে যাবে, শোনা যাবে ঢেকির ঢক ঢক শব্দ।

এলাকাবাসীর দাবি, খেঁজুর গাছের অবাধ নিধন বন্ধে সচেতনতার

পাশাপাশি এগিয়ে আসুক প্রশাসন। শীতের খেঁজুরের রস নির্ভর সুন্দর আগামীর

প্রত্যাশায় টিকে থাকুক খেঁজুর গাছ, টিকে থাকুক গাছি সম্প্রদায়।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © banglarprotidin.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com
themebazarbanglaro4451