বুধবার, ০৮ মে ২০২৪, ০৭:৩৬ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম ::
রিয়াদ-হৃদয়ের ব্যাটে চড়ে সহজ জয় টাইগারদের প্রবাস ফেরত স্ত্রীকে হত্যার পর রক্তাক্ত দা নিয়ে থানায় স্বামী পুড়ছে সুন্দরবন : সর্বশেষ যা জানাল ফায়ার সার্ভিস কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাচনে ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাইয়ের মনোনয়ন বাতিল আল জাজিরার ব্যুরো অফিসে ইসরায়েলি পুলিশের অভিযান ১৫০ উপজেলায় ৩ দিন মোটরসাইকেল চলাচল বন্ধ ৮০ কিমি বেগে ঝড়ের পূর্বাভাস, ১০ জেলায় সতর্কতা জারি গুগলকে তিন হাজার কনটেন্ট সরাতে অনুরোধ বাংলাদেশের মুফতি মাহাদী হাসান সাভার উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে নিরব ভোট বিপ্লবে বিজয়ী হওয়ার আশাবাদী রামগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী রাকিবুল হাসান মাসুদ

নতুন কমিটির সাতকাহন

বাংলার প্রতিদিন ডেস্ক ::
  • আপডেট সময় রবিবার, ৩০ অক্টোবর, ২০১৬
  • ১৭২ বার পড়া হয়েছে

ঢাকা : আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা হওয়ার পর একের পর এক টেলিফোনে অভিনন্দন বার্তা পেতে থাকেন সাবেক বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী যশোরের অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম। প্রথমে আনন্দিত হলেও কিছুক্ষণের মধ্যেই তিনি বুঝতে পান যে, কেন্দ্রীয় কমিটিতে ঠাঁই পাওয়া রফিকুল ইসলাম তিনি নন। যিনি ঠাঁই পেয়েছেন তার বাড়ি মৌলভীবাজারে। বিকাল ৩টায় গণমাধ্যমে কেন্দ্রীয় কমিটির পূর্ণাঙ্গ তালিকা পাঠানোর পরই ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর কার্যালয়ের সামনে উপস্থিত হাজার হাজার নেতা-কর্মী একে অন্যের প্রতি জিজ্ঞাসা ছিল ‘আমিরুল ইসলাম মিলনটা কে?’ কৌতূহল ছিল পারভীন জামান কল্পনাকে নিয়েও। উপস্থিত নেতা-কর্মীরা জানতে পান দলে সক্রিয় না থাকলেও আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা মহিউদ্দিনের মেয়ে ড. শাম্মী আহমেদ এবার স্থান পেয়েছেন। সবাই আশ্বস্ত হন, ‘যাক তাকে চেনা গেল।’ ঢাকা ও জেলা শহরের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা গণমাধ্যম অফিস বা কর্মীদের কাছেও ফোন করে জানতে চাইলেন, কেন্দ্রীয় কমিটির মেরিনা জাহান কে? নিজেদের মধ্যে বলাবলি হচ্ছিল কিছু বিতর্কিত লোকের দলে স্থান পাওয়া নিয়েও। দলীয় অফিসের সামনে এমন কৌতূহলের পাশাপাশি হতাশাও ছিল ছাত্রলীগের সাবেক অনেক সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকের সমর্থকদের মাঝে। অনেক নেতা ও তাদের সমর্থকদের বাড়িতে রীতিমতো কান্নার রোল। জনপ্রিয়তাই কারও কারও জন্য কাল হয়েছে। তাদের সমর্থকরা হতাশা নিয়েই বাড়ি ফেরেন। গতকাল সকালেই ধানমন্ডি আওয়ামী লীগ অফিসের সামনে নেতা-কর্মীর ভিড় শুরু। বেলা যত বাড়ে তাদের সংখ্যাও বাড়তে থাকে। সাধারণ সম্পাদক সংবাদ সম্মেলন করে কমিটি ঘোষণা করার কথা ছিল। সেভাবেই মিডিয়া কর্মী ভিড় করেন। শেষ পর্যন্ত কমিটি মেলে প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে। নতুন কমিটিতে ঠাঁই পেলেন কৃষি ও সমবায়বিষয়ক সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী, বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি দেলোয়ার হোসেন এবং কেন্দ্রীয় সদস্য থেকে পদোন্নতি পেয়ে উপ-প্রচার সম্পাদকের দায়িত্ব পেয়েছেন আমিনুল ইসলাম আমিন। এদিকে সদস্য হয়েছেন আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ, মো. মমতাজ উদ্দিন (বগুড়া), মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, নূরুল মজিদ হুমায়ুন, খায়রুজ্জামান লিটন, সিমিন হোসেন রিমি, বেগম মন্নুজান সুফিয়ান, নুরুল ইসলাম ঠাণ্ডু, র আ ম উবায়দুল মোক্তাদির চৌধুরী, দীপঙ্কর তালুকদার, বদরউদ্দিন আহমদ কামরান, সাবেক ডাকসু ভিপি আখতারুজ্জামান, এস এম কামাল হোসেন, মির্জা আজম, অ্যাডভোকেট নজিবুল্লাহ হিরু, আমিরুল ইসলাম মিলন, অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম, গোলাম কবির রব্বানী চিনু, অ্যাডভোকেট রিয়াজুল কবির কাওসার, পারভীন জামান কল্পনা, আনোয়ার হোসেন, ইকবাল হোসেন অপু, মেরিনা জাহান, ড. শাম্মী আহমেদ, মারুফা আখতার পপি, ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, উপাধ্যক্ষ রেমন্ড আরেং।

ঘোষিত কমিটি অনুযায়ী এখনো দলটির সভাপতিমণ্ডলীর তিনজন; আন্তর্জাতিক সম্পাদক, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক, যুব ও ক্রীড়াবিষয়ক সম্পাদক, উপ-দফতর সম্পাদক এবং উপদেষ্টা পরিষদে তিনটি পদ ফাঁকা রয়েছে। এর আগে দলের প্রেসিডিয়াম ও যুগ্ম এবং সাংগঠনিক সম্পাদকদের নাম ঘোষণা করা হয়।

কমিটিতে স্থান পাওয়া নিয়ে চলছে দলের ভিতরে-বাইরে নানা আলোচনা-সমালোচনা। প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুনের বয়স হয়েছে। তবু দলে তাদের অবদানের কথা বিবেচনা করা সঠিক হয়েছে। জেলা পর্যায় থেকে প্রেসিডিয়ামে স্থান পাওয়া রমেশচন্দ্র সেন ও পীযূষকান্তি ভট্টাচার্য জাতীয় পর্যায়ে তেমন পরিচিত নন। রমেশচন্দ্র সেন ঠাকুরগাঁও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি পদে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পরাজিত হয়েছেন কিছুদিন আগে। প্রেসিডিয়ামে ঠাঁই পাওয়া মতিয়া চৌধুরী, নুরুল ইসলাম নাহিদ ও আবদুল মান্নান খান তিনজনই ছিলেন ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি। আবদুল মান্নান খানের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন—দুদকে মামলা চলমান।

কমিটির সম্পাদকীয় পদে ঠাঁই পাওয়া একজন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি থাকাকালে নিজ হাতে পিটিয়েছিলেন তার কমিটির সাধারণ সম্পাদককে। এরপর ওই কমিটি ভেঙে দেওয়া হয়। শুধু তাই নয়, কিছুদিন আগে একজন মন্ত্রী এক ঠিকাদারকে উদ্ধার করেন এই নেতার অপহরণ থেকে। তার বিরুদ্ধে জাতীয় জাদুঘর, সড়ক ভবন, শিক্ষা ভবনে টেন্ডারবাজির অভিযোগ প্রকাশ্য। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের ১৯৯৬ সালের সরকারের সময় সিটি করপোরেশনে সেভেন স্টার গ্রুপের লিড দিতেন এমন দুজন ঠাঁই পেয়েছেন কেন্দ্রীয় কমিটিতে। তখন মেয়র ছিলেন মোহাম্মদ হানিফ। সিটি করপোরেশনে অস্ত্রবাজি, টেন্ডারবাজি নিয়ে প্রতিদিন শিরোনাম হতো সেভেন স্টার ও ফাইভ স্টার গ্রুপ।

আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেন, দলের একজন হাইব্রিড নেতাও তার দুজন অনুসারীকে কমিটিতে আনতে পেরেছেন। অথচ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকরাও আসতে পারেননি। কর্মীরা ২০১৮ সালের নির্বাচন মোকাবিলায় প্রেসিডিয়ামের কতজন সদস্যকে মাঠে পাবেন? পাশাপাশি কাছে পাবেন কজন কেন্দ্রীয় নেতাকে? যাদের কর্মীরা চেনেন না তাদের কাছে যাবেন কী করে? কমিটি ঘোষণার পর আমিরুল ইসলাম মিলনের পরিচয় আবিষ্কারের চেষ্টা করছিলেন ধানমন্ডিতে দলীয় সভানেত্রীর কার্যালয়ে উপস্থিত হাজার হাজার নেতা-কর্মী। কোনোভাবেই কেউ তার সম্পর্কে তাত্ক্ষণিক নিশ্চিত ধারণা দিতে পারছিলেন না কেউ। মিলন নামটিই যেন এক গোলক-ধাঁধা। অবশেষে অনেক অনুসন্ধানে জানা গেল, তিনি ছিলেন একসময়ের বাকশাল নেতা। ১৯৯১ সালে বাগেরহাট-৪ আসন থেকে কাঁচি মার্কা নিয়ে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। জানা যায়, ২০১৪ সালের নির্বাচনেও দলীয় প্রার্থীর পক্ষে তার ভূমিকা ছিল রহস্যজনক।

কমিটি নিয়ে প্রতিক্রিয়ায় গত দুবারের কেন্দ্রীয় নেতা মমতাজ উদ্দীন মেহেদী বলেন, ‘ঘোষিত কমিটিতে ছাত্রলীগের ত্যাগী নেতা-কর্মীদের মূল্যায়ন করা হয়নি। হাইব্রিডদের মূল্যায়ন করা হয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমার নাম বাদ দিতে পারেন না। আমি অন্য কারোর ষড়যন্ত্রের শিকার। জীবনের শেষ পর্যন্ত জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বের প্রতি অনুগত ও আস্থাশীল থাকব; এ থেকে একটুও বিচ্যুত হব না।’ তিনি বলেন, ‘মাননীয় সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের কাছে আমার প্রশ্ন— আমি কি হাইব্রিড? মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার শহীদদের সংখ্যা নিয়ে রাষ্ট্রদ্রোহিতামূলক বক্তব্য দেওয়ায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মামলা করা কি অপরাধ? জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কটাক্ষ করায় তারেক রহমানের বিরুদ্ধে মামলা করা দোষের? ১/১১ সময়ে নেত্রীর মুক্তি দাবিতে আইনজীবীদের স্বাক্ষর গ্রহণ করে কি দোষ করেছিলাম?’ সাবেক এই নেতা আরও বলেন, ‘১৯৮৭ সালের ১০ নভেম্বর ঢাকা অবরোধের সময় আমার ডেডবডি ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে পড়ে ছিল। শ্বাস-প্রশ্বাস নিচ্ছি দেখে ডাক্তাররা আমাকে হাসপাতালে চিকিৎসা করান। তখন আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক। এ ছাড়া আমি ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলাম। আমার কমিটির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন অসীম কুমার উকিল। আমার সঙ্গেই বিএম মোজাম্মেল হক যুগ্ম সম্পাদক ছিলেন। তাদের মূল্যায়ন হয়েছে। তাহলে আমি কি হাইব্রিড?’ সাবেক বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম জানান, বিকালে কমিটি ঘোষণার পর অসংখ্য টেলিফোনে অভিনন্দন বার্তা পান তিনি। তবে কিছুক্ষণ পরই জানতে পেলেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে ঠাঁই পেয়েছেন মৌলভীবাজারের রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘পদ পেলাম কি পেলাম না সেটা বড় কথা নয়। নেত্রী ভালো থাকলে, বেঁচে থাকলে আমরা ভালো থাকব।’বিডিপ্রতিদিন

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © banglarprotidin.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com
themebazarbanglaro4451