সাব্বির নামে এক শিক্ষার্থীকে নির্যাতন করে গাজা রাখার স্বীকারোক্তি আদায় এবং ২ বছরের সাজা দেয়ার দায়ে টাঙ্গাইলের সখিপুরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও থানার ওসিকে প্রত্যাহারের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে সাব্বিরকে নির্যাতনের ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। ফেসবুকে টাঙ্গাইল-৮ আসনের এমপিকে হুমকির কথিত অভিযোগে সাব্বিরকে আটকের পর থানায় নিয়ে ক্রসফায়ারের হুমকি দিয়ে মাদকের মামলায় ফাঁসানো হয়।
টাঙ্গাইল-৮ আসনের সংসদ সদস্য অনুপম শাজাহানকে ফেসবুকে কথিত হুমকির অভিযোগে এখতিয়ার বহির্ভূতভাবে নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থী সাব্বির শিকদারকে ২ বছরের কারাদণ্ড দেয় ভ্রাম্যমাণ আদালত। বিষয়টি আদালতের নজরে এলে সংশ্লিষ্ট নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সখিপুর থানার ওসি ও শিক্ষার্থীকে তলব করে হাইকোর্ট।
গত ২৭ সেপ্টেম্বর হাজির হয়ে ম্যাজিস্ট্রেট ও ওসি আদালতকে জানান, ফেসবুকে এমপিকে হুমকি কারণে নয় বরং ১০০ গ্রাম গাজা রাখার দায়ে সাব্বিরকে দণ্ড দেয়া হয়। এ সময় শিক্ষার্থী সাব্বিরের আদালতে দেয়া জবানবন্দিতে উঠে আসে লোমহর্ষক ঘটনা। যেখানে বলা হয়েছে, এমপিকে কথিত হুমকির অভিযোগে আটক করার পর ক্রসফায়ারের হুমকি দিয়ে গাজা রাখার নাটক সাজায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও থানার ওসি।
সাব্বির বলেন, ‘এমপি আমারে বলে এগুলো কিসের জন্য লিখছস তুই। পরে আমি বলছি আমি এগুলো লিখি নাই। তারপর এমপি স্যার আমারে দুটো বারি দিছে। থানায় নিয়ে যাওয়ার দুইদিন পর হ্যান্ডক্যাপ পরই ও চোখে কালো কাপড় বেঁধে ওসির রুমে নিয়ে যায়। তারপর আমারে শুইয়ায় মুখে লাঠি ধরাইয়া ওসি বলে তোরে ক্রস ফায়ারে দিবো। পরে ক্রস ফায়ারের ভয়ের চটে আমি স্বীকার করছি।’
রায়ের পর ওই স্কুলছাত্রের বাবা সাংবাদিকদের বলেন, ‘ছেলেকে অন্যায়ভাবে সাজা দেওয়া হয়েছিল, আদালত সেটা বাতিল করেছে।’
তিনি বলেন, ‘আমি ছেলের নিরাপত্তা চাই। আমরা গরিব-অসহায়। টাঙ্গাইলেই যেন তাকে পড়ালেখা করানো যায়। টাঙ্গাইলের বাইরে যাতে নিতে না হয়।’
দু’পক্ষের দীর্ঘ শুনানির পর,মঙ্গলবার সাব্বিরকে দেয়া দণ্ড বাতিল করে তাকে খালাসের আদেশ দেন উচ্চ আদালত। আদেশ দেন, সাব্বিরের নির্যাতনের ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্তের। একই সঙ্গে ইউএনও ও ওসিকে টাঙ্গাইল থেকে প্রত্যাহারের আদেশ দেয়া হয়।
আইনজীবী খুরশীদ আলম খান সাংবাদিকদের বলেন, ‘আইনকানুন পর্যবেক্ষণ করে আদালত রায় দিয়েছে। যে সাজাটা দেওয়া হয়েছিল, সেটা অবৈধ এবং আইনগত কর্তৃত্ব বহির্ভূত। ওই সাজা বাতিল করে দিয়েছে।’
পাশাপাশি ওই স্কুলছাত্র আদালতে যে জবানবন্দি দিয়েছে, তার আলোকে হাই কোর্ট বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে বলে জানান এই আইনজীবী।
তিনি বলেন, ‘সখিপুরের ইউএনও ও ওসি এখন যে জায়গার দায়িত্বে আছেন, সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে তাদের সেখান থেকে প্রত্যাহার করে ঢাকা বিভাগের বাইরে যে কোনো একটা জায়গায় পোস্টিং দিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এবং পুলিশ মহাপরিদর্শককে আদেশ দিয়েছে আদালত।’
এছাড়া মোবাইল কোর্ট পরিচালনার ক্ষেত্রে আরো সতর্ক হওয়ার পরামর্শের বিষয়টি উঠে আসে মঙ্গলবারের শুনানিতে।