জাহিদ হাসান সরিষাবাড়ী (জামালপুর) থেকে: জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে সরকার-পাশা ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টের বিরুদ্ধে শতবর্ষের পুরনো সংখ্যালঘু হিন্দুপট্টি উচ্ছেদের অভিযোগ ওঠেছে।
পৌর এলাকার ঝালুপাড়া রোডে প্রাক্তন হাসিরমল কোম্পানির জমিতে মঙ্গলবার দুপুরে ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশের উপস্থিতিতে এ উচ্ছেদ অভিযান চলে। এতে ঘরবাড়ি হারিয়ে খোলা আঁকাশের নীচে আশ্রয় নিয়েছে ১০টি দরিদ্র পরিবারের অর্ধশত মানুষ। এ ঘটনার প্রতিবাদে উপজেলার তিন শতাধিক সংখ্যালঘু তারাকান্দি-সরিষাবাড়ী-ঢাকা মহাসড়ক দুই ঘন্টা অবরোধ করে রাখে। পরে ইউএনও, র্যাব ও অতিরিক্ত পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে তাদের পুনর্বাসনের আশ্বাস দিলে পরিস্থিতি শান্ত হয়।
প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় সুত্র জানায়, জামালপুরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শ্রী যতিশ্বর পালের নেতৃত্বে পুলিশ ও ভূমি অফিসের লোকজন দুপুর ১২টার দিকে সরিষাবাড়ী পৌরসভার ঝালুপাড়া রোডে সরকারি খাস খতিয়ানভূক্ত (প্রাক্তন হাসিরমল কোম্পানি) সংখ্যালঘু হিন্দুপট্টিতে উচ্ছেদ অভিযান শুরু করে। এ সময় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শ্রী যতিশ্বর পাল সংখ্যালঘুদের জানান যে, জমিটি পার্শ্ববর্তী সরকার-পাশা ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টের নামে বিজ্ঞ আদালত বন্দোবস্ত দিয়েছে। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে উপজেলার বিভিন্ন এলাকার সংখ্যালঘুরা জড়ো হয়ে বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। তারা বসতভিটা না ছাড়ার ঘোষনা দিলে পুলিশ তাদের মৃদু লাঠিপেটা করে। এ ঘটনার প্রতিবাদে তিন শতাধিক সংখ্যালঘু তারাকান্দি-সরিষাবাড়ী-ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ করে রাখে। এতে প্রায় দুই ঘন্টা ওই সড়কে সব ধরনে যান চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে। খবর পেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইয়েদ এজেড মোরশেদ আলী, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রেজাউল ইসলাম খানসহ জামালপুর থেকে অতিরিক্ত পুলিশ ও র্যাব-১৪’র সদস্যরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়। এ সময় সংখ্যালঘুদের পুনর্বাসনের আশ্বাস দিলে পরিস্থিতি শান্ত হয়। পরে উচ্ছেদ চালিয়ে বসতভিটার সবগুলো ঘর স্থানান্তর করা হয়। এদিকে উচ্ছেদ চলাকালে মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হলে ঘরবাড়ি হারা সংখ্যালঘুরা খোলা আঁকাশের নীচে ভিজতে থাকে।
সংখ্যালঘু পরিবারের সদস্য সুরেশ রাজভর জানান, ‘ভুরারবাড়ি মৌজার প্রায় ১৫ শতক জমির ওপর গড়ে ওঠা সংখ্যালঘুপট্টিটি সরকারি খাস খতিয়ানভূক্ত। এখানে বৃটিশ আমল থেকে সংখ্যালঘুরা বসবাস করে আসছে। তাদের পুনর্বাসন ও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা না করেই সরকার-পাশা ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট তাদের উচ্ছেদ করে।’ সংখ্যালঘু দলনেতা নরেশ চন্দ্র চৌহান জানান, ‘সরকার-পাশা ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টের জমিটি পাট কর্পোরেশনের ছিল। পাট কর্পোরেশন ৩.৭৯ একর জমি দরপত্রের মাধ্যমে ট্রাস্টের কাছে বিক্রি করে। কিন্তু ৩.৭৯ একর জমির স্থলে ট্রাস্ট অবৈধভাবে ৪.১৬ একর জমির দলিল লিখে নেয়। এদিকে স্থাপনের শুরু থেকেই ওই ট্রাস্ট বিদেশী অর্থ অনিয়ম করা ছাড়াও অর্পিত সম্পত্তি আইন না মেনে এবং তথ্য গোপন করে আদালতের মাধ্যমে সম্প্রতি পার্শ্ববর্তী অর্পিত জমিটিও বন্দোবস্ত নিয়েছে। আমরা এর বিরুদ্ধে আইনের আশ্রয় নেবো এবং বাংলাদেশ সরকার ও ভারতীয় হাই কমিশনের কাছে নালিশ করবো।’
এ ব্যাপারে সরকার-পাশা ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টের কর্মকর্তাদের বক্তব্য জানার চেষ্টা করলেও তারা সাংবাদিকদের সাথে কথা বলতে অস্বীকার করেন।
সংখ্যালঘুদের সড়ক অবরোধের কথা স্বীকার করে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রেজাউল ইসলাম খান বলেন, ‘পুলিশ আদালতের আদেশ বাস্তবায়নে কাজ করেছে। সাময়িক বিশৃঙ্খলা থাকলেও পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করে।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইয়েদ এজেড মোরশেদ আলী জানান, ‘আদালতের আদেশে ম্যাজিস্ট্রেট উচ্ছেদ অভিযান চালায়। ট্রাস্টের সাথে কথা বলে উচ্ছেদকৃতদের পুর্নবাসনের ব্যবস্থা করা হবে