রাজধানীতে হঠাৎ বেড়ে গেছে রোগের প্রকোপ। এর মধ্যে চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যাই বেশি। এ অবস্থায় নগরবাসীর মধ্যে বিরাজ করছে এক ধরনের আতঙ্ক। প্রতিদিনই জ্বরে আক্রান্তরা চিকিৎসার জন্য ছুটছেন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে। তবে সরকারি হাসপাতালগুলোতে দরকারি স্বাস্থ্যসেবা পাচ্ছেন না বলে রোগীরা অভিযোগ করেছেন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে ৩৭৪ রোগী চিকুনগুনিয়ার টেস্ট করাতে মহাখালীর রোগ তত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে (আইইডিসিআর) তাদের রক্তের নমুনা জমা দেন। পরীক্ষা করে ২৮৫ জনের শরীরেই চিকুনগুনিয়ার ভাইরাস পাওয়া যায়। এ হিসাবে ৭৬ দশমিক ২০ শতাংশ জ্বরাক্রান্ত রোগীই চিকুনগুনিয়ায় ভুগছেন।
আইইডিসিআরের তথ্য মতে, চিকুনগুনিয়া একটি ভাইরাসজনিত জ্বর যা আক্রান্ত মশার কামড়ের মাধ্যমে মানুষ থেকে মানুষে ছড়ায়। হঠাৎ জ্বর আসার সঙ্গে গিঁটে গিঁটে প্রচণ্ড ব্যাথা, মাথাব্যাথা, মাংসপেশি ব্যথা, বমিবমি ভাব, চামড়ায় লালচে দানা দেখা যাওয়া এর লক্ষণ। মূলত এডিশ মশার কামড়ে এ ভাইরাস ছড়ায়।
মশাগুলো সাধারণত দিনের বেলা কামড়ায়। চিকিৎসকরা বলছেন, এ বছর ফেব্রুয়ারিতে বৃষ্টি হওয়ায় এডিশ মশার উপদ্রব বেড়ে যায়। মশার উপদ্রব বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দেখা দেয় চিকুনগুনিয়ার প্রকোপ। রাজধানীর অভিজাত এলাকা ধারমণ্ডি, গুলশান, বনানী ও বারিধারাসহ বিভিন্ন এলাকার মানুষ চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসকের কাছে বেশি ছুটছেন। এ ছাড়া চিকুনগুনিয়া ভাইরাস আক্রান্ত রক্তদাতার রক্তগ্রহণ এবং ল্যাবরেটরিতে নমুনা পরীক্ষার সময় অসাবধানতাবশতও এ রোগ ছড়াতে পারে। এ জ্বর ৩ থেকে সাতদিন পর্যন্ত হতে পারে। তবে জ্বর সেরে গেলেও ব্যথা থাকে দীর্ঘ সময়।
এ রোগ প্রতিরোধে কোনো ভ্যাকসিন নেই। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) অধ্যাপক ডা. এবিএম আবদুল্লাহ বলেন, এ সময়ে অতিরিক্ত গরমের কারণে নারী, পুরুষ ও শিশু সবার অসুখ-বিসুখ বাড়ছে। আবহাওয়ার তারতম্যের কারণে এখন গরমের মাঝেই হঠাৎ বৃষ্টি নেমে পানি জমে ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়ার বাহক এডিস মশার জন্ম হচ্ছে।
আইইডিসিআর’র পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেবরিনা ফ্লোরা বলেন, চিকুনগুনিয়ার বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে বৈঠক হয়েছে। জনসচেতনতা বৃদ্ধি ও চিকিৎসার বিষয়ে দেশের সব সরকারি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, সিভিল সার্জন ও জেলা-উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রর চিকিৎসকদের প্রতি একটি গাইড লাইন দেওয়া হয়েছে। তবে কার্যক্রম ঠিকভাবে চললেও মশা নিধনের কাজ তো আর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নয়। এ দায়িত্ব সিটি করপোরেশনের। তাই জরুরি ভিত্তিতে রাজধানীর মশা নিধন করা প্রয়োজন।