রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ০১:১৯ পূর্বাহ্ন

মুন্সীগঞ্জে দীর্ঘ ৩৫ বছর ধরে সম্পত্তির জন্য মামলা লড়ে যাচ্ছেন মুক্তিযোদ্ধা

বাংলার প্রতিদিন ডেস্ক ::
  • আপডেট সময় বুধবার, ২২ মার্চ, ২০১৭
  • ১৩৩ বার পড়া হয়েছে

 

মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি: মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার পঞ্চসার ইউনিয়নের সর্দারপাড়া

গ্রামের আবুল বাসার ওরফে শাহ আলম (৬৫) নামের এক মুক্তিযোদ্ধা পৈত্রিক ক্রয়কৃত

সম্পত্তি ফিরে পাওয়ার জন্য ৩৫ বছর ধরে মামলা লড়ে যাচ্ছেন। স্থানীয় ও ভুক্তভোগীদের

সূত্রে জানাযায়, মুক্তিযোদ্ধা আবুল বাসারের পিতা মৃত- আ: আজিজ ১৫-১২-

১৯৭৯ সালে ১,২০,০০০হাজার টাকা বায়না মূলে জমির মালিক জ্যোতিময় দাস

থেকে পঞ্চসার ও চাপাতলী মৌজার ৫ একর ৮১ শতাংশ নাল, ভিটা, পুকুরসহ জমি

ভোগ দখলে নেন। এই সম্পত্তি স্থানীয় ভুমিদস্যু ফজলুল করিম, আলতাফ হোসেন,

দেলোয়ার হোসেন, মোশারফ হোসেন, জাকির হোসেন গং সিন্ডিকেট জোর

পূর্বক ১৯৮৩ সালের ১৬ মার্চ থেকে শুরু করে বিভিন্ন সময়ে সম্পত্তিগুলো দখল

নিতে শুরু করেন।সিন্ডিকেটরা মৃত আ: আজিজের বাড়ীতে মামলা করে ব্যাপক

লুটপাটের মাধ্যমে প্রথমে বসত বাড়ীটি দখলে নেয়। এরপর বাড়ীতে থাকা গরু,

মহিষ ও আসবাবপত্র কেরে নিয়ে জোর পূর্বক বাড়ী থেকে বের করে দেন। পরে ভুমি

দস্যুরা পুরো সম্পত্তিটা দখলে নেয়। শুধু তাই নয় দখলে নিয়ে ভুমি দস্যু

সিন্ডিকেট ১৯৮৩ সালে এই সম্পত্তির একাধিক জাল দলিল সৃষ্টি করে। শুরু থেকেই

নিজের সম্পত্তি ফিরে পেতে মামলা করেন আ: আজিজ। আ: আজিজের মৃত্যুর পর

মামলার হাল ধরেন মৃত আ: আজিজের ছেলে মুক্তিযোদ্ধা আবুল বাসার। আবুল বাসার

জানান, বায়ণাপত্র দলিল করার পর থেকে আমি এবং আমার পিতা বিবাদী বিদ্যুৎ

কুমার দাস গংদের জমি সাব- কবলা রেজিস্ট্রি করে দেওয়ার জন্য চাপ প্রযোগ করে

ব্যর্থ হই। পরে বাধ্য হয়ে মুন্সীগঞ্জ যুগ্ন- জেলা ও দায়রা জজ ১ম আদালতে রেজিস্ট্রি

পাওয়ার জন্য টাইটেল মামলা করি। যাহার দে: মো: নং- ০৭/৮৩ দায়ের করি। পরে ফজলুল

করিম আপোষ মিমাংসার কথা বলে জোর পূর্বক মামলাটি তুলে নিতে বাধ্য করে।

পরবর্তীতে ফজলুল করিমের পিতা আমির হোসেন খয়রাতি এই সম্পত্তির প্রকৃত

মালিক জ্যোতিময় দাসের স্বাক্ষর নকল করে জ্যেতিময় দাসের ছেলে বিদ্যুৎ কুমার

দাস, সরৎ কুমার দাস এবং স্ত্রী সৈলবালা দাস এদের নামে ২টি দানপত্র তৈরী করেন।

এই দানপত্রের বলে আমির হোসেন খয়রাতি তার স্ত্রী এবং একাধিক সন্তানের নামে

টঙ্গিবাড়ী সাব- রেজিস্ট্রি অফিসে গিয়ে একাধিক জাল দলিল তৈরী করেন।

পাশাপাশি এই সম্পত্তির পাশে থাকা আনছার ক্যাম্পের সরকারী জায়গাগুলোও জাল

দলিল করেন। অথচ এই সম্পত্তির সাব- কবলার সীমানা মুন্সীগঞ্জ সদর সাব- রেজিস্টার

অফিস। পরে চক্রটি ১৯৮৩ সালের জাল দলিল সৃষ্টির মাধ্যমে ভোগ দখলদার দাবি ও

সম্পত্তির উপর স্থায়ী নিষেধাজ্ঞার মামলা করেন। যাহার নং- ৩৭/৮৩। এই মামলায় ১৯৯৮

সালে মুন্সীগঞ্জ আদালত থেকে আমির হোসেন রায় ডিগ্রি নিয়ে যায়। এর আগে

১৯৮৪ সালে একটি দে: মো: নং ৫/৮৪ দায়ের করেন। একই বছরে মুন্সীগঞ্জ আদালত

মামলাটি নথিজাত করে দেন। এর বিরুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধা বাসার ১৯৮৫ সালে মহামান্য

হাই কোর্টে আপীল করেন। আপীল মামলা নং- ২৫/৮৫। এই ১৯৯২ সালে হাই কোর্ট

থেকে রায় পায়। এই রায়ের বিরুদ্ধে বিবাদী পক্ষ বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টে আপীল

করেন। যাহার আপীল মামলা নং ১৯/৯২। উক্ত আপীল মামলায় মহামান্য সুপ্রীম কোর্ট

আপীলকারী আমির হোসেন খয়রাতিকে ২৮শত ৪৭ টাকা জরিমানা আদায়সহ ১৯৯৪

সালে মামলাটি খারিজ করেন। এই রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে আবুল বাসার মুন্সীগঞ্জ

আদালতে করা ৫/৮৪ নং মামলায় রায় ডিগ্রি পান। রায়ে আদালত আবুল বাসারকে

সম্পত্তির বায়নার বকেয়া বাবদ ২৫ হাজার টাকা ব্যাংকে জমা দেওয়ার নির্দেশ দেন।

নির্দেশ পেয়ে ১৯৯৬ সালে আবুল বাসার সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে বকেয়া

পরিশোধ করেন। মুন্সীগঞ্জ আদালতে আমির হোসেনের করা ৩৭/৮৩ নং মামলাটিতে

১৯৯৮ সালে আমার রেজিস্ট্রি দাবি মামলা ৫/৮৪ স্থগিত করে তাদের মামলায় রায় নেয়।

সেই মামলার পরিপ্রেক্ষিতে আবুল বাসার মহামান্য হাইকোর্টে ২৬৬/৯৯ নং আপীল

করেন। আপীলে ১৯৯৮ সালে পাওয়া আমিরের পাওয়া রায় বাতিল ঘোষনা করেন ২০০৮

সালে। এই রায়ের বিরুদ্ধে আমির হোসেনের মৃত্যুর পর তার ওয়ারিস কামাল আহম্মেদ

গং মহামান্য সুপ্রীম কোর্টে ২৯২/১০ নং-মামলা দায়ের করে। উক্ত মামলায় মহামান্য

সুপ্রীম কোর্ট ০৩-০২- ২০১৬ তারিখে ২৬৬/৯৯ সালের মামলায় মুক্তিযোদ্ধা আবুল

বাসারের পক্ষে দেওয়া মহামান্য হাই কোর্টের রায় বহাল রাখেন। শুধু তাই নয় সম্পত্তি

হারিয়েও শান্তিতে ছিলনা এই মুক্তিযোদ্ধা। একের পর এক মামলা, হামলা আর হুমকি

দামাতে পারেনি এই যোদ্ধাকে। অপরদিকে কিছু প্রভাবশালী নেতা মুক্তিযোদ্ধা

আবুল বাসারকে তার মুক্তিযোদ্ধা সনদটিও পেতে দেয়নি। অথচ তিনি যে একজন

মুক্তিযোদ্ধা তার প্রমান হিসাবে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের ট্রেজারিতে থাকা

৬৫০ জন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় তার নাম রয়েছে ৮৮ নং সিরিয়ালে।

বাংলাদেশের সর্বাধিক অধিনায়ক কর্নেল এম এ জি ওসমানীর সনদপত্র নাম্বার

২,৮২৩ সেটাও লিষ্ট ট্রেজারিতে জমা রয়েছে। জীবনের শেষ সময় হলেও জাতীয়

পতাকাটি বুকে জড়াতে চাই এই যোদ্ধা।

মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ গ্রহনকারী বীর মুক্তিযোদ্ধা, দেশের সূর্য সন্তান

আবুল বাসারকে তার সম্পত্তি দখলমুক্ত এবং তার মুক্তিযোদ্ধা সনদ ফিরে পেতে সরকার

এগিয়ে আসবে এমনটাই দাবি মুক্তিযোদ্ধা আবুল বাসারের।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © banglarprotidin.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com
themebazarbanglaro4451