রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ০৮:০১ পূর্বাহ্ন

গোপালগঞ্জের কাশিয়ানীতে খাল খননের নামে চলছে বালু বিক্রির মহোৎসব!

বাংলার প্রতিদিন ডেস্ক ::
  • আপডেট সময় বুধবার, ২২ মার্চ, ২০১৭
  • ১৩২ বার পড়া হয়েছে

 

এম শিমুল খান, গোপালগঞ্জ : গোপালগঞ্জের

কাশিয়ানীতে খাল খননের নামে চলছে লুটপাট। পাউবোর

সংশিষ্ট কর্মকর্তাদের যোগসাজসে বালু বিক্রি করে লাখ

লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। এতে

সরকারের কোটি কোটি টাকা গচ্ছা যাচ্ছে, দূর হচ্ছে

না নাব্যতা সংকট উপরন্ত হুমকির মুখে পড়ছে অসংখ্য

ঘরবাড়ি ও ফসলি জমি।

ব্যাপক অনুসন্ধানে জানা গেছে, কাশিয়ানী উপজেলার

তালতলা থেকে আড়–য়াকান্দি পর্যন্ত ১০ কিলোমিটার

বলুগা খাল খননের প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। এই ১০

কিলোমিটার ৩টি প্যাকেজে টেন্ডার করা হয়েছে। এর মধ্যে

রামদিয়া থেকে আড়–য়াকান্দি পর্যন্ত তিন কিলোমিটারের

কাজ পেয়েছেন মেসার্স এ এস কনস্ট্রাকশন। যা ২ কোটি

৩৪ লাখ টাকা টেন্ডার হয়েছে। কিন্ত অভিযোগ রয়েছে খনন

কাজে পাউবোর সরবরাহকৃত নকশা, পরিমাপ ও বিধিমালা

কোন টিই সঠিক ভাবে মানা হচ্ছে না। খাল খনন তো

দূরের কথা, উল্টো বালু ব্যবসায় নেমেছেন ঠিকাদারী

প্রতিষ্ঠান। খালের যে স্থানে বালু পাওয়া যাচ্ছে, সেখানেই

শুধু শ্যালো মেশিন বসিয়ে অপরিকল্পিত ভাবে বালু উত্তোলন

করছে। এ সব বালু সরকারি জায়গায় না ফেলে মোটা

অংকের টাকার বিনিময় স্থানীয়দের কাছে বিক্রি করছেন

ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। অথচ বালু ফেলার জন্য খালের তীরে

পাউবো’র পর্যাপ্ত পরিমাণ জায়গা রয়েছে। এমনকি খালের

তীরে পাউবোর জায়গায় বসবাসকারী দরিদ্র লোকদেরও

সরকারি জায়গা ভরাট করতে ঠিকাদারদের দিতে হচ্ছে টাকা।

গতকাল সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, উপজেলার রামদিয়া

বাজার থেকে আড়–য়াকান্দি পর্যন্ত বলুগা খালের প্রায়

২০টি স্থানে শ্যালো মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে।

এ সব বালু পাইপ লাইনের মাধ্যমে অনেক দূরে নিয়ে ফেলা

হচ্ছে। যা ব্যক্তি মালিকানাধীন বাড়ির ভিটা, পুকুর, খাল-

নালা, রাস্তা, মার্কেট, দোকান পাট ভরাট কাজে ব্যবহার করা

হচ্ছে। সরকারের কোষাগারে নির্ধারিত রাজস্ব জমা দিয়ে

ব্যক্তি মালিকানা সম্পতিতে বালু নেয়ারও বিধান রয়েছে।

কিন্তু সরকারি নীতিমালা উপেক্ষা করে রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে

প্রতিদিন সরকারি খালের হাজার হাজার ঘনফুট বালু

উত্তোলন করে বিক্রি করা হচ্ছে।

স্থানীয়রা সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করে বলেন,

ড্রেজিং না করে যে স্থানে বালু উঠছে, সেখানেই শুধু

মেশিন বসানো হচ্ছে। ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি, ঘরবাড়ি

ভেঙে যাওয়ার আশংকা রয়েছে। মানুষের উপকারের চেয়ে ক্ষতির

আশংকাই বেশি রয়েছে।

পাউবো’র জায়গায় বসবাসকারী রাজিয়া বেগম (৪০)

বলেন, আমরা গরীব মানুষ সরকারি জায়গায় থাকি। বাড়ির

সামনের গর্তটা ভরাট করে দিতে ঠিকাদারের লোকদেরকে

বলেছি। কিন্তু সরকারি জায়গা ভরাট করতেও তাদের ৫ টাকা

করে ফুট এবং মেশিন চালকদের খাবার দিতে হবে দাবি করে।

খালের তীরে ব্যক্তিগত জায়গায় বসবাসকারী উপজেলার

সাফলীডাঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা আব্দুর রহমান (৬০)

সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে পা জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙ্গে

পড়েন। তার বাড়ি সংলগ্ন খালে দুই সপ্তাহ ধরে একই স্থান

থেকে বালু উত্তোলন করছে ঠিকাদারের লোকেরা। তিনি

নিষেধ করলে তাকে উল্টো দেখে নেয়ার হুমকি দেয় ঠিকাদারের

লোকেরা।

পরিবেশ কর্মী বিধান টিকাদার বলেন, বালু ও মাটি

ব্যবস্থাপনা বিধিমালায় শ্যালো মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন

করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এতে ভূমিকম্পের প্রবণতা সৃষ্টি

হওয়ার আশংকা রয়েছে।

এ ব্যাপারে গোপালগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব)

মোঃ সাঈদ-উর- রহমান বলেন, বালু ও মাটি ব্যবস্থাপনা

আইনে সরকারি কাজের বালু উত্তোলনের নামে তা বিক্রি

করার অধিকার ঠিকাদারের নেই। বিক্রি করতে চাইলে সরকারি

ভাবে আলাদা টেন্ডার করতে হবে।

এ ব্যাপারে গোপালগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের

নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ মাঈন উদ্দিন বলেন, শ্যালো

মেশিন দিয়ে খাল খনন এবং সরকারি জায়গার বাইরে বালু

ফেলতে পারবে না। আমি ঠিকাদারদের কঠোর ভাবে বলে

দিয়েছি। না শুনলে মেশিনসহ ওদের আটক করে জেল হাজতে

পাঠাবো।

এ ব্যাপারে গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোঃ মোখলেসুর

রহমান সরকার বলেন, আমি মৌখিক ভাবে অভিযোগ

পেয়েছি এবং কাশিয়ানী ইউএনওকে প্রতিবেদন দেয়ার

জন্য বলে দিয়েছি।

 

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © banglarprotidin.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com
themebazarbanglaro4451