বাংলার প্রতিদিন ডটকমঃ
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘মাত্র ৫৪ বছর বয়সেই বঙ্গবন্ধু প্রথমে পাকিস্তান এবং পরে বাংলাদেশ, এ দুটি দেশের স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন।’
আজ শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে আয়োজিত ঐতিহাসিক ৭ মার্চ উপলক্ষে এক আলোচনা সভায় এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি আরো বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষের বিশ্বাস ছিল, একমাত্র বঙ্গবন্ধুই পারেন তাদের স্বাধীনতা এনে দিতে, শোষণের হাত থেকে মুক্তি দিতে।’
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ট্রাস্ট ওই আলোচনা সভার আয়োজন করে। আলোচনাজুড়ে প্রধানমন্ত্রী স্বাধীনতা-সংগ্রাম, স্বাধীনতা অর্জনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভূমিকা নিয়ে স্মৃতিচারণ করেন।
বঙ্গবন্ধুর খুনিরাই সংবিধান লঙ্ঘন করে ক্ষমতায় বসেছিল বলে দাবি করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ভাষণ বিকৃত করা হয়েছিল। বঙ্গবন্ধুর নাম মুছে দিয়ে ইতিহাস বিকৃত করার চেষ্টাও চলেছে দীর্ঘকাল। যার ফলে নতুন প্রজন্ম দীর্ঘদিন দেশের প্রকৃত ইতিহাস থেকে বঞ্চিত হয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘৭ মার্চের ভাষণের মধ্যেই আপনারা ইতিহাস পাবেন। মূলত ভাষণটি ছিল ২৩ মিনিটের। আমার সৌভাগ্য হয়েছিল, সে সময় মাঠে উপস্থিত ছিলাম। মঞ্চের সামনে নয়, ঠিক পাশেই। যেটা রেকর্ড করা হয়েছিল সেটা ১৮/১৯ মিনিটের রেকর্ড। সেই ভাষণে বাংলাদেশের জনগণের ২৩ বছরের বঞ্চনার ইতিহাস- ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে প্রতি সংগ্রামে রক্ত দেওয়ার ইতিহাস, সবকিছু বিবৃত করে ভবিষ্যতে কী করতে হবে, অর্থাৎ একটা গেরিলা যুদ্ধের প্রস্তুতি কীভাবে নিতে হবে, এমনকি তিনি যদি না থাকতে পারেন বা হুকুম দিতে নাও পারেন তখন কী করতে হবে, সে কথাগুলোও তিনি বলে গেছেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘জনগণের কাছ থেকে ভোটের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা ঘোষণা দেওয়ার ম্যান্ডেট পেয়েছিলেন। সত্তরের নির্বাচনে দেশের মানুষ আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়ে বিজয়ী করেছিল। কিন্তু হানাদার বাহিনী বাঙালিকে তাদের অধিকার দেয়নি। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষের নেতা কে হবেন, সেই
সিদ্ধান্ত জনগণই নিয়েছিলেন। তাঁরা বঙ্গবন্ধুকে ভোট দিয়ে তাঁদের নেতা নির্বাচন করেছিলেন। দেশের জনগণ স্বাধীনতা ঘোষণা দেওয়ার অধিকার অন্য কাউকে নয়, বঙ্গবন্ধুকেই দিয়েছিলেন।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর মনে সব সময় স্বাধীনতা অর্জনের চিন্তা ছিল। কিন্তু সংগত কারণে তিনি তা ৭ মার্চের আগে প্রকাশ করেননি।’ বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের সেই দিনের স্মৃতিচারণ করে তাঁর কন্যা শেখ হাসিনা বলেন, ‘৭ মার্চের ভাষণের আগে বাবা বের হবেন, আমার মা বলেছিলেন, অনেকে অনেক কিছু বলে দিয়েছে, লিখে দিয়েছে।
আমার মা বলেছিলেন, তুমি জানো, একমাত্র তুমি জানো তোমার মনে ঠিক যে কথাগুলো আসবে, তুমি ঠিক সেই কথাগুলোই বলবে। আমার মনে আছে, উনি কথা শুনে হাসলেন, তার পর মাঠের দিকে রওনা করলেন। পেছন পেছন আমি, রেহানা আরেকটা গাড়িতে গেলাম।’
’৭৫-পরবর্তী প্রজন্মকে মনগড়া ইতিহাস দিয়ে বিভ্রান্ত করা হয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘অবৈধ ক্ষমতা দখলকারীরা মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে মিথ্যা তথ্য দিয়ে জাতিকে ভুল বোঝানোর চেষ্টা করেছে। কিন্তু তাদের সেই চক্রান্ত সফল হয়নি। নতুন প্রজন্ম মিথ্যা তথ্যে বিভ্রান্ত হয়নি।’
পঁচাত্তরের খুনি আর একাত্তরের পরাজিত শক্তির মধ্যে কোনো পার্থক্য ছিল না মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘পঁচাত্তরের পরে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের এই ভাষণও বাজাতে দেওয়া হতো না। এই ভাষণ বাজাতে গিয়ে ছাত্রলীগ-আওয়ামী লীগের কত নেতাকর্মী হত্যা-নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। একটা সময় বঙ্গবন্ধুর নাম নেওয়াটাই যেন নিষিদ্ধ হয়ে গিয়েছিল। অনেক ছবির মাঝে বঙ্গবন্ধুর ছবিটা লুকিয়ে রাখতে হতো। কিন্তু কেন? তাঁর অপরাধ কী ছিল? তাঁর অপরাধ ছিল ক্ষুধা, দারিদ্র্য আর শোষণের হাত থেকে একটা জাতির স্বাধীনতা এনে দেওয়া। আসলে পাকিস্তানি হানাদার আর তাদের দোসর বিএনপি-জামায়াতে মধ্যে কোনো পার্থক্য ছিল না।’
এর আগে অনুষ্ঠানের শুরুতে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ বাজানো হয়। অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রীর অর্থ উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান, ড. জিনাত হুদা, শিল্পী হাসেম খান প্রমুখ।