রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ০৭:৩৩ পূর্বাহ্ন

২ মাসে ৪৮২ জন নির্যাতিত , নির্যাতনের টার্গেট নারীরা

বাংলার প্রতিদিন ডেস্ক ::
  • আপডেট সময় বুধবার, ৮ মার্চ, ২০১৭
  • ৩৭৮ বার পড়া হয়েছে

অনলাইন ডেস্কঃ

নারী ও পুরুষের সম্মিলিত প্রচেষ্টাতেই গড়ে উঠেছে আমাদের সমাজ, সভ্যতা ও সংস্কৃতি। তাই তো জাতীয় কবি নজরুল ইসলাম বলে গেছেন যা কিছু মহান সৃষ্টি চিরকল্যাণকর, অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর। কিন্তু প্রতিনিয়ত নারীর প্রতি সহিংসতা যে হারে বাড়ছে, তাতে মনে হচ্ছে নারীদের জন্ম হয়েছে শুধু নির্যাতনের জন্যই। বাসা, অফিস, সমাজ, পাঠশালায় নারীরা শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন প্রতিদিন। যার বড় উদাহরণ সিলেটের বখাটে বদরুল আলমের কোপে আহত খাদিজা বেগম নার্গিস। আর নিহত কুমিল্লার কলেজছাত্রী সোহাগী জাহান তনু ও চট্টগ্রামে সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা আক্তার মিতু।গেলো দু’মাসে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ৪৮২ জন নারী। যার মধ্যে জানুয়ারি মাসে হয়েছেন ২৭৪ জন এবং ফেব্রুয়ারি মাসে ২০৮ জন। এর মধ্যে জানুয়ারিতে ৮৫টি ফেব্রুয়ারিতে ৭০টি মামলা হয়েছে।  যাতে রয়েছে যৌন, সামাজিক, ধর্ষণ, পাচার, পারিবারিক, যৌতুক, হত্যা, এসিড, নারী গৃহকর্মী নির্যাততের মতো ঘটনা।

বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ফেব্রুয়ারি জুড়ে নারী নির্যাতনের মধ্যে যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ১৯ জন, মামলা হয়েছে ৬টি। যা আগের মাসে ছিল ৩০জন, মামলা হয় ৬টি। সামাজিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ২৬ জন নারী, মামলা হয়েছে ৭টি। যা আগের মাসে ছিল ২৫জন, মামলা হয় ১৪টি। ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৩৮ জন নারী, মামলা হয়েছে ১৭টি।  যা আগের মাসে ছিল ৫২ জন, মামলা হয় ২৯ টি।  পাচার ও নিখোঁজ হয়েছেন ২২ জন, মামলা হয়েছে ১২টি।  যা আগের মাসে ছিল ১৬ জন, মামলা হয় ২টি। পারিবারিক নির্যাতনের শিকার হয়েছে ১৬ জন,  মামলা হয়েছে ২টি। যা আগের মাসে ছিল ৮জন, মামলা হয় ২টি। যৌতুকের নির্যাতনে শিকার হয়েছে ৬ জন, মামলা হয়েছে ৪টি।  যা আগের মাসে ছিল ৭ জন, মামলা হয় ৩টি।  নারী গৃহকর্মী হত্যা ও ধর্ষণের শিকার হয়েছে ৩ জন, মামলা হয়েছে ২ জন। যা আগের মাসে ছিল ৫ জন, মামলা হয় ১টি।  অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে আত্নহত্যা করেছে ১২ জন।  যা আগের মাসে ছিল ১৭ জন, মামলা হয় ৩টি।  সামাজিক বিভিন্ন কারণে হত্যার শিকার হয়েছেন ৫৩ জন, মামলা হয়েছে ১৮টি।  যা আগের মাসে ছিল ১০৪ জন, মামলা হয় ২৩টি। এদিকে ২০১৬ সালে যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ৩২৩ জন, মামলা হয়েছে ১০৯ টি। ২০১৫ সালে নির্যাতনে শিকার হয়েছিল ৩৬২ জন।  বিভিন্নভাবে হত্যার শিকার হয় ১৫০২ জন, মামলা হয়েছে ৪৫৮টি।  যা ২০১৫ সালে ছিল ৮৪৭ জন।   সামাজিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ১ হাজার ৬২২ জন, মামলা হয়েছে ৩৬৪টি।  ২০১৫ সালে নির্যাতনে শিকার হয়েছিল ১৪৫৬ জন। ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ১ হাজার ১৫ জন, মামলা হয়েছে ৫৩০টি। ২০১৫ সালে নির্যাতনের শিকার হয়েছিল ১ হাজার ৬৯ জন।  পাচার, অপহরণ ও নিখোঁজ হয়েছেন ৬৯৮ জন, মামলা হয়েছে ২৪৫টি।  যা ২০১৫ সালে শিকার হয়েছিল ৩৭৩ জন।  পারিবারিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ৭৭৬ জন, মামলা হয়েছে ২২৪টি। যা ২০১৫ সালে ছিল ৯৯৬ জন।  যৌতুকের নির্যাতনে শিকার হয়েছেন ৩০২ জন, মামলা হয়েছে ১১৩টি। যা ২০১৫ সালে ছিল ৩৯২ জন। নারী গৃহকর্মী হত্যা ও ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৮৯ জন, মামলা হয়েছে ২৮ টি। যা ২০১৫ সালে ছিল ৪৮ জন। এসিড দগ্ধ হয়েছেন ৪০ জন, মামলা হয়েছে ১৬টি। ২০১৫ সালে দগ্ধ হয়েছিল ৪৫ জন। আত্নহত্যা করেছেন ৩১২ জন, মামলা হয়েছে ৮১ টি।  এছাড়া আইন প্রয়োগকারী সংস্থার দ্বারা সহিংসতার শিকার হয়েছেন ৪৭ জন, মামলা হয়েছে ৯টি।বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশের বাস্তবতায় বলা যায়, নারীর প্রতি সহিংসতা একটি সামাজিক সমস্যা। ব্যক্তি থেকে শুরু করে রাষ্ট্র সবার ওপর এর বিরূপ প্রভাব পড়ে। নারীরা এমনিতেই পরিবারে দুর্বল অবস্থায় থাকে। প্রথমত, সহিংসতার শিকার নারী জগৎ ও জীবনের প্রতি বিরূপ মনোভাব পোষণ করে, হতাশাগ্রস্ত হয়ে জীবন অতিবাহিত করে। প্রতিবাদ করার মতো সচেতনতাবোধ অনেকেরই থাকে না। আত্মবিশ্বাসের অভাবেও অনেকে নির্যাতন প্রতিরোধ করতে পারে না। যে পরিবারে নারীরা সহিংসতার শিকার হন, সে পরিবারের শিশুরা অসুস্থ মানসিকতা ও জীবন বিমুখ হয়ে বেড়ে ওঠে। এ পরিবেশে বেড়ে ওঠা শিশু-কিশোরদের মাদকাসক্তি বা জঙ্গিবাদের মতো অপরাধে জড়িত হওয়ার প্রবণতা বেশি থাকে।এ ধরনের পরিবারের ছেলেশিশুদের মধ্যে পরবর্তী জীবনে নারীর প্রতি সহিংস আচরণের আশঙ্কা অনেক বেশি থাকে। সমাজের প্রতিনিধি হিসেবে পুরুষরা এগিয়ে এসে দায়িত্ববোধের পরিচয় দিলে নারী নির্যাতনের ঘটনা অনেক কমে যাবে। নারীদের সম্মান করা ও সুস্থ সম্পর্ক গড়ে তোলার মাধ্যমে নারী নির্যাতনের হার অনেক কমিয়ে আনা সম্ভব। নারী নির্যাতন ও নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে এগিয়ে আসা সবার সামাজিক দায়িত্ব।এ বিষয়ে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মাননীয় প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি বলেছেন, নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধে সরকার জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছে। তিনি বলেন যেখানে নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে সেখানে সরকার দ্রুততম সময়ে মধ্যে ব্যাবস্থা নিচ্ছে। অপরাধীকে আটকের ক্ষেত্রে সরকার প্রায় শতভাগ সফল। কিন্তু নির্যাতন বন্ধ করা কেবল সরকারের একার পক্ষে সম্ভব নয়। এই বিষয়ে সমাজের সকল স্তরের মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে। সকলের মানসিকতা পরিবর্তন করতে হবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © banglarprotidin.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com
themebazarbanglaro4451