শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ০২:১২ অপরাহ্ন

সংবাদ সম্মেলনে যা বললেন মাহমুদুর রহমান

বাংলার প্রতিদিন ডেস্ক ::
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ৭ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭
  • ১২৬ বার পড়া হয়েছে

অনলাইন ডেস্কঃ 

‘আমার বয়স ৬৬ বছর। এ বয়সে চার বছর জেলে থাকা মানে অনেক। তার ওপর রিমান্ডে নির্যাতন। রিমান্ডে নির্যাতনের কারণে কিছু অতিরিক্ত রোগ যোগ হয়েছে।’

আজ মঙ্গলবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে দৈনিক আমার দেশ-এর ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমান এসব কথা বলেন।

কারামুক্ত সাংবাদিক মাহমুদুর রহমান বলেন, ‘অনেক সংবাদকর্মী আমার ইন্টারভিউ করতে চেয়েছেন। দেশি-বিদেশি মিডিয়া ইন্টারভিউ করতে চেয়েছেন। কিন্তু আমি দেইনি। আমি চেয়েছিলাম আমার বক্তব্য আপনাদের একসঙ্গে দিতে, যাতে করে বাংলাদেশের জনগণ আমার বক্তব্য জানতে পারে। কোনো একটি রেডিও বা পত্রিকায় আমার ইন্টারভিউ দিতে চাইনি। বিগত আড়াই মাস হলো আমি জেল থেকে ছাড়া পেয়েছি।’ তিনি বলেন, ‘আমি আড়াই মাস অপেক্ষা করেছি আপনাদের আমার বক্তব্য জানানোর জন্য। তার প্রধান কারণ ছিল দুটি : প্রথমত আমার অসুস্থতা। আপনারা জানেন বর্তমান সরকারের সময় আমি পাঁচ বছর জেলখানায় ছিলাম। তার মধ্যে বিগত চার বছর ধরে একটানা জেলে ছিলাম।’

আমার দেশ-এর ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক বলেন, ‘আপনারা জানেন, আমি কাশিমপুর জেলখানা থেকে বেরিয়ে প্রথমে ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি হই। ইউনাইটেড হাসপাতালে আমার স্বাস্থ্যগত কিছু পরীক্ষা করা হয়। পরে হাসপাতালের চিকিৎসক আমাকে নিউরো অপারেশন (অস্ত্রোপচার) করতে বলেন। অপারেশনটা জটিল, সে কারণে তারা আমাকে বিদেশ যেতে পরামর্শ দেন। এ জন্য আমি শর্তসাপেক্ষে মুক্তি পেয়েছিলাম। সেই শর্তের একটি ছিল, আমাকে পাসপোর্ট জমা দিতে হবে। সেই কারণে পাসপোর্ট ফিরে পেতে আমরা আপিল বিভাগে যাই।’

মাহমুদুর রহমান বলেন, ‘আমি আপিল বিভাগকে জানালাম আমার চিকিৎসার জন্য বাইরে যাওয়া প্রয়োজন। আর সে কারণে আমার পাসপোর্ট প্রয়োজন। কিন্তু আপিল বিভাগ জানালেন একটি বেসরকারি হাসপাতালের প্রতিবেদন তাঁরা বিশ্বস্ত মনে করতে পারছেন না। এরপর মাননীয় সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ঢাকা মেডিকেল কলেজের তিন বিভাগীয় প্রধানকে নিয়ে একটি চিকিৎসক দল গঠন করে দিলেন। এ মেডিকেল বোর্ড ইউনাইটেড হাসপাতালের প্রতিবেদনটি সঠিক বলে আরেকটি প্রতিবেদন জমা দিলেন।’

মাহমুদুর রহমান আরো বলেন, ‘তিন বছর ধরে চিকিৎসা না হওয়ার কারণে আমার ডান হাত এখন ওঠাতে পারি না। মেডিকেল বোর্ড আমাকে বিদেশে চিকিৎসা করার জন্য বলে। এ রিপোর্টের ওপর ভিত্তি করে মাননীয় সুপ্রিম কোর্ট কয়েকটি শর্তসাপেক্ষে আমার পাসপোর্ট ফিরিয়ে দিলেন।’ তাঁর ভাষায়, ‘প্রথম শর্ত হচ্ছে, আমি চিকিৎসার জন্য যুক্তরাজ্যে মাত্র ৩০ দিন থাকতে পারব। দ্বিতীয় শর্ত, আমি বিদেশে গিয়ে কোনো ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড করতে পারব না। তৃতীয় শর্ত, চিকিৎসা শেষে ঢাকায় ফিরে আসার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আমার পাসপোর্ট আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে জমা দিতে হবে। শেষ শর্তটি ছিল, এ মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত আমাকে পাসপোর্ট আর ফিরিয়ে দেওয়া হবে না।’

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক বলেন, ‘বাংলাদেশের পাসপোর্টে লেখা থাকে ইসরায়েল ছাড়া সব দেশের জন্য বাংলাদেশের নাগরিকদের পাসপোর্ট দেবে। কিন্তু আমার ক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্ট যে রায় দিলেন তার অর্থ হচ্ছে শুধু যুক্তরাজ্যে যাওয়া যাবে।’

নিজের নাগরিক অধিকার ক্ষুণ্ণ করা হচ্ছে দাবি করে মাহমুদুর রহমান বলেন, ‘সংবিধান অনুযায়ী রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড করা নাগরিক অধিকার। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের আদেশ অনুযায়ী আমার সেই নাগরিক অধিকার ক্ষুণ্ণ হয়েছে। সংবিধানের নাগরিকদের মৌলিক অধিকার ৩৬, ৩৭, ৩৮, ৩৯ ও ৪০ অনুচ্ছেদে পাঁচটি মৌলিক অধিকার আমার ক্ষেত্রে রাষ্ট্র কেড়ে নিয়েছে। বাংলাদেশে এত বেশি নির্যাতন কাউকে এভাবে করা হয়নি, যেভাবে আমাকে করা হয়েছে।’

যুক্তরাজ্য ভিসা দেয়নি উল্লেখ করে মাহমুদুর বলেন, ‘যুক্তরাজ্য আমাকে ভিসা দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। এমনকি মানবিক কারণেও তারা ভিসা দিতে অস্বীকৃতি জানায়। তাদের এ অস্বীকৃতি প্রমাণ করে মাহমুদুর রহমান বাংলাদেশে ইসলামের পক্ষের শক্তি।’ তাঁর ভাষায়, ‘আমি যদি মুসলমানের শত্রু হতাম তাহলে পশ্চিমা বিশ্ব আমাকে ডেকে নিয়ে যেত। এখানে ইসলামের বিরুদ্ধে কথা বললে আপনি বাংলাদেশে নিরাপদ। ইসলামের বিরুদ্ধে কথা বললে পশ্চিমা বিশ্বে আপনি আদরণীয় ব্যক্তি।’

নিজের আন্দোলনের কথা উল্লেখ করে মাহমুদুর বলেন, ‘আমি যখন আমার দেশ পত্রিকায় গৃহবন্দি ছিলাম, তখন সেখান থেকে আমি সাংস্কৃতিক আন্দোলনের ডাক দিয়েছিলাম। আজ থেকে চার বছর আগে। আজ আমি দেখছি তথাকথিত সেক্যুলাররাও ভারতীয় টিভি চ্যানেলের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছেন। ভারতীয় সিনেমার বিরুদ্ধে আন্দোলন করছেন। আমি কিন্তু সাংস্কৃতিক আন্দোলনের ডাক দেওয়ার মাধ্যমে স্বকীয়তা বজায় রাখতে বলেছিলাম। আমাদের একটা নিজস্ব পরিচিতি থাকবে। আমরা কোনো বৃহৎ রাষ্ট্রের সংস্কৃতির ধারক-বাহক হব না। এটাই আমার সে আন্দোলনের প্রধান কারণ ছিল।’

মাহমুদুর রহমান বলেন, ‘গণতন্ত্র ও বাকস্বাধীনতার জন্য আমি লড়াই করছি। সেই গণতন্ত্র এবং বাকস্বাধীনতা বিগত চার বছরে কোথায় গেছে তা আপনারা ভালো করে জানেন। বাকস্বাধীনতার অবস্থা যদি আমরা দেখি বর্তমান সরকারের সময়ে ২০০৯ সালের পহেলা জানুয়ারি থেকে ২০১৭-এর ফেব্রুয়ারির ৩ তারিখ পর্যন্ত ১৫ জন সাংবাদিক নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ৮৮৬ জন। গ্রেপ্তার হয়েছেন ২৬ জন সাংবাদিক। ২০০ জনের নামে মামলা হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে ৮১টি মামলা হয়েছে, যা আপনারা ভালো করে জানেন। এসব মামলার মধ্যে রয়েছে রাষ্ট্রদ্রোহিতা থেকে শুরু করে মানহানি এবং গাড়ি পোড়ানোর। এ হলো বাংলাদেশের বর্তমান বাকস্বাধীনতার অবস্থা।’

মাহমুদুর রহমান বলে চলেন, ‘আমি যে আদর্শ বুকে নিয়ে গ্রেপ্তার হয়েছিলাম চার বছর আগে, এখনো সেই আদর্শে অটল আছি। সেই আদর্শকে নিয়ে লড়াই করার হাতিয়ার আমার কাছে নেই। আমার পত্রিকা এখনো পুলিশের অবৈধ দখলদারিত্বে। কয়েকদিন আগে নিম্ন আদালতে বাদী হয়ে একটা মামলা করেছি। মামলায় বলেছি, এ প্রেস আমার। আমার প্রেস আমাকে ফিরিয়ে দেওয়া হোক। আমি আশা করি, আদালত আইনি সিদ্ধান্ত আমার পক্ষে দেবে এবং আমাদের প্রেস ফিরে পাব। সংবাদকর্মীরা আবার প্রেসে কাজ করতে পারবে।’

নিজের কলাম লেখার কথা উল্লেখ করে মাহমুদুর রহমান বলেন, ‘আমি এখনো লেখালেখি করতে পারি এবং চার বছর থেকে লিখে আসছি। বাংলাদেশের যে কোনো পত্রিকা মাহমুদুর রহমানের লেখা ছাপাবে। আমার লেখাগুলো থাকবে, কোনো একদিন বাংলাদেশের জনগণ জানবেন ২০১৭ সালে বাংলাদেশটা কেমন ছিলে। কোনো একদিন আমার লেখাগুলো ছাপাব।’

আমার দেশ পত্রিকার নিউজ পোর্টাল বন্ধের কথা উল্লেখ করে মাহমুদুর রহমান বলেন, ‘আমার দেশ পত্রিকার অনলাইন পোর্টাল বন্ধ করে দিয়েছে সরকার। সেই সাথে ৩৫টি অনলাইন একদিনে বন্ধ করে দিয়েছে। এর জন্য আপনারা আন্দোলন করেছেন। কিন্তু বাংলাদেশে এখন আন্দোলন করে কোনো কাজ হয় না। শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে পুলিশ গুলি করছে। আর ইতিহাসের শিক্ষা হচ্ছে কোনো ফ্যাসিবাদী সরকারের সময় আন্দোলনে কোনো কাজ হয় না।’

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © banglarprotidin.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com
themebazarbanglaro4451