রবিবার, ১২ মে ২০২৪, ১০:৪৬ পূর্বাহ্ন

নড়াইলের ইটভাটায় ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম বাড়ছে

বাংলার প্রতিদিন ডেস্ক ::
  • আপডেট সময় সোমবার, ১৬ জানুয়ারী, ২০১৭
  • ১৩৯ বার পড়া হয়েছে

 

শরিফুল ইসলাম নিজস্ব প্রতিবেদক নড়াইল ঃ

নড়াইলের চারটি উপজেলার বিভিন্ন বাণিজ্যিক এলাকায় ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম

বাড়ছে। ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম বন্ধে স্থানীয় প্রশাসন কার্যকর কোন পদক্ষেপ

গ্রহণ করছে না। বর্তমান শিক্ষাবান্ধব সরকার মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা

বাস্তবায়নে শ্রমজীবী শিশুদের জন্য শিশুকল্যাণ প্রাথমিক বিদ্যালয় ও আনন্দ স্কুল

প্রতিষ্ঠা করেছে। অথচ, লোহাগড়ায় শিশু শিক্ষার্থীদের একটি অংশ শিক্ষার বাইরে

অবস্থান করছে। ফলে প্রাথমিক শিক্ষায় সরকারের শতভাগ ভর্তির হার মুখ থুবড়ে

পড়েছে। ইটভাটা গুলোতে শিশুদের ব্যাবহার করা হচ্ছে।

গত রবি ও সোমবার বিভিন্ন ইটভাটা ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিকুল

পরিবেশে শ্রম দিচ্ছে ৬ থেকে ১১ বছরের শিশুরা। এ ছাড়া প্রতিনিয়ত শিশুদেরকে

বিভিন্ন কারখানায় নিয়োগ করা হচ্ছে। বিশেষ করে ইটভাটায় শিশু শ্রমিক

নিয়োগ চলছে এ মৌসুমে। সরকারি নীতিমালা উপেক্ষা করে ঝুকি পূর্ণ এসব

কাজে নিয়ে যাওয়া হয়েছে শাতধিক শিশু। কিছু অসাধু শ্রমিক সরদারের খপ্পরে পড়ে

গরিব ও অসহায় পরিবার অর্থের লোভে স্কুল পড়–য়া শিশুদের ইটভাটায় পাঠাচ্ছে। এতে

শিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত হওয়ার পাশাপাশি ভাটার বিষাক্ত ধোঁয়ায় মারাত্মক

স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ছে তারা। জেলা প্রশাসনের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে,

উপজেলায় মোট ১৮টি ইট ভাটা রয়েছে। যার মধ্যে ১০টি ভাটাতে রয়েছে ব্যারেল

চিপনি যা সম্পুর্ণ অবৈধ।

সুত্রে জানা যায়, জাতিসংঘ প্রণীত শিশু অধিকার সনদে ১৮ বছরের কম বয়সী

প্রত্যেককে শিশু বলা হয়েছে। বাংলাদেশের বিভিন্ন আইনে ১৫ বছরের কম বয়সী

প্রত্যেককে শিশু হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। তাই ১৪ বছরের মধ্যে সকলেই এ

দেশের শিশু । সরকারের এক পরিসংখ্যান বিভাগের হিসেব মতে দেশের মোট শ্রমিকের

১২% শিশু শ্রমিক। এ হিসেবে কেবল মাত্র নিবন্ধনকৃত শিল্প প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শিশু

শ্রমিকদের ধরা হয়েছে। অনিবন্ধনকৃত বা ননফরমাল সেক্টরে কর্মরত শিশু শ্রমিকদের

হিসেব করলে এ সংখ্যা আরো বাড়বে। দেশের প্রচলিত আইনে শিল্প কারখানায় শিশু

শ্রম নিষিদ্ধ হলেও জীবিকার প্রয়োজনে শৈশব অবস্থায় অনেক শিশুকে নানা ধরনের

শ্রমে নিয়োজিত হতে হচ্ছে।

সোমবার দুপুরে উপজেলার বিবিআই ব্রিকস ভাটায় দেখা যায় স্কুল পড়–য়া

বেশ কয়েকজন শিশু শ্রমিক রোদে পুড়ে প্রতিকুল পরিবেশে তাদের বাবা-মা’র সাথে

ইট তৈরির কাজে ব্যস্ত। এদের মধ্যে রাবিয়া বয়স ৬ বছর। সে সাতক্ষীরা জেলার তালা

উপজেলার নূরানী মাদ্রাসার ছাত্রী। এত কম বয়সে লেখাপড়া বাদ দিয়ে কেন ইটভাটায়

কাজ করছে জানতে চাইলে তার বাবা ছুরাফ শেখ বলেন, “আমরা হতদরিদ্র মানুষ। জন

বিক্রি করে পেট চলে। বছরের প্রায় অর্ধেক সময় দেশের বিভিন্ন জেলায় ইট তৈরিতে

আমি এবং আমার স্ত্রী দুইজনই কাজ করতে যাই। ছোট বাচ্চাদের বাড়িতে রেখে

আসলে দেখার কেউ নেই। তাই পড়াশোনা হোক বা না হোক সাথে নিয়ে আসি।

তাতে সে আমাদের সাথে কাজ করলে অর্থের কিছু যোগানও হয়।

শিশু শ্রমিক রবিউল শেখ বয়স ১১ বছর। সে সাতক্ষীরা থেকে লোহাগড়ায়

এসেছে ইট তৈরির কাজে। স্কুল ছেড়ে কেন ভাটায় কাজ করছ জানতে চইলে সে বলে,

ইট ভাটায় কাজ করতে মন চায় না। আমি বাড়িতে ব্রাক স্কুলের ৫ম শ্রেনীর ছাত্র

ছিলাম। বাবা-মা এখানে ইট তৈরির কাজে এসেছে। বাড়িতে আর কেউ না থাকায়

আমিও তাদের সাথে চলে এসেছি।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক চঞ্চল শেখ

বলেন, শ্রমজীবি শিশুদের জন্য লোহাগড়া উপজেলায় একটি শিশু কল্যাণ প্রাথমিক

বিদ্যালয় এবং বেশ কয়েকটি আনন্দ স্কুল রয়েছে। এ সব বিদ্যালয়ে শ্রমিক শিশুদেরকে

ভর্তি করে শিক্ষার আওতায় আনা যেতে পারে। শুধু তাই নয় ভর্তি হলে এরা উপবৃত্তিও

পাবে।

শিশু শ্রম বন্ধে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে কিনা

জানতে চাইলে উপজেলা আইন শৃঙ্খলা কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহি

অফিসার মোঃ সেলিম রেজা বলেন, অভিযোগের ভিত্তিতে শিশুশ্রম বন্ধে

প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © banglarprotidin.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com
themebazarbanglaro4451