একদিন বাসার সামনে থেকে যখন পুলিশ তাঁকে ধরে নিয়ে গেল, তখন তিনি জানতেন না কেন ধরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। থানায় নিয়ে যাওয়ার পর বলা হলো, তিনি একটি হত্যা মামলার আসামি।
সেই থেকে দীর্ঘ ১৮ বছর ধরে কারাগারের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে আটক আছেন মকবুল হোসেন। এই দীর্ঘ সময়ে স্ত্রী বা পরিবারের কেউ কোনো খোঁজ নেননি তাঁর। এই সময়ের কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘কোন দেশে আছি জানি না, মনে হয় মায়ের পেটে আছি।’
আজ রোববার ১৮ বছর বিনা বিচারে কারাবাসের কষ্টের কথা এভাবেই বলছিলেন মকবুল হোসেন। ১৯৯৭ সাল থেকে কাশিমপুর কারাগারে বন্দি আছেন তিনি।
কারাগারে যাওয়ার কাহিনী জানতে চাইলে মকবুল বলেন, ‘ভাগ্যের নির্মম পরিহাস। আমি নিজেও জানি না কেন আমাকে আটক করা হলো। একদিন রাতের বেলা বাসার সামনে থেকে ধরে নিয়ে যায়। নিয়ে যাওয়ার পর বলে আমি নাকি হত্যা মামলার আসামি। অথচ আমি কিছুই জানি না। দীর্ঘদিন আমাকে কারাগারে আটক রাখা হয়েছে। অথচ আমার মামলার বিচার শেষ হয়নি।’
উচ্চ আদালতের নির্দেশে আজ মকবুল হোসেনকে হাইকোর্টে হাজির করে কারা কর্তৃপক্ষ। আদালতের ভেতরেই কথা হয় তাঁর সঙ্গে। জানান, পেশায় তিনি ছিলেন রংমিস্ত্রি।
পছন্দ করে বিয়ে করা স্ত্রীসহ বাস করতেন রাজধানীর উত্তরখান এলাকায়। ১৯৯৭ সালের শেষের দিকে হঠাৎই একদিন বাসার সামনে থেকে তাঁকে আটক করা হয়। সে সময় তাঁর বয়স ছিল ২০ বছর। আর এখন বয়স ৩৮ বছর। আটক হওয়ার মাত্র দেড় বছর আগে বিয়ে করেছিলেন। অথচ আটকের পর সেই স্ত্রী আর কোনোদিন খোঁজখবর নেননি। শুনেছেন সেই স্ত্রী এখন অন্য কারো সঙ্গে সংসার করছেন। শুধু তাই নয়, তাঁর নিজের বাবা-মা কিংবা পরিবারের লোকজনও কেউ খোঁজ নেননি মকবুলের।
আক্ষেপ করে মকবুল বললেন, পৃথিবীতে এখন আর তাঁর আপন বলতে কেউ আছে কি না তাও জানেন না তিনি।
মকবুলের গ্রামের বাড়ি মাদারীপুর সদর উপজেলার বাদুরপুর গ্রামে। দুই ভাই ও দুই বোনের মধ্যে তিনি তৃতীয়। এই দীর্ঘ কারাজীবনে তিন ভাই বোনের কেউ একবারের জন্য খোঁজ করেননি তাঁর। সে কারণে জেল থেকে ছাড়া পেলেও বাড়িতে যাওয়ার ইচ্ছে নেই মকবুলের। তবে সঙ্গে এটাও বললেন, মায়ের জন্য মনটা খুব কাঁদে তাঁর।
জামিন পাওয়ায় ভীষণ উচ্ছ্বসিত মকবুল। বললেন, পৃথিবীকে নতুন করে দেখার সুযোগ হলো। এ জন্য সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানালেন তিনি।
বিনা বিচারে দীর্ঘদিন কারাগারে আটক চার বন্দির বিষয়ে একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এরপর হাইকোর্ট তাঁদের আদালতে হাজির করতে নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে ওই চারজনকে বিনা বিচারে দেড় যুগ আটক রাখা কেন বেআইনি ও অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়।
আজ রোববার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহীম ও বিচারপতি জে বি এম হাসানের হাইকোর্ট বেঞ্চ ওই চারজনের মধ্যে তিনজনকে জামিন দেন। অন্যজনকে জামিন না দিলেও ৬০ দিনের মধ্যে তাঁর মামলা নিষ্পত্তির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
জামিন পাওয়া তিনজনের একজন হলেন মকবুল হোসেন। তাঁর মামলা আগামী ৯০ দিনের মধ্যে নিষ্পত্তির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।