ঢাকা: নির্বাচনমুখী বিএনপি। দলটির প্রধান লক্ষ্য জাতীয় সংসদ নির্বাচন। আগামী একাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে সার্বিক কর্মপরিকল্পনা তৈরি করছে বিএনপির হাইকমান্ড। পর্যায়ক্রমে সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকা, নির্বাচনী ইশতেহারসহ সংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ কাজ করবে। একই সাথে নির্বাচনের পূর্ব প্রস্তুতি হিসেবে স্বাধীন নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের লক্ষ্যে জনমত তৈরিতে তারা মাঠে নামছে। সব দলের অংশগ্রহণে একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের লক্ষ্যে সরকারের ওপর দেশি-বিদেশি চাপ বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। এদিকে সিনিয়র নেতাদের নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করে সুবিধাজনক সময়ে সরকার একটা নির্বাচনের চেষ্টা চালাতে পারে-এমন অঙ্ক বিএনপির হাতেও রয়েছে। এজন্য তিন স্তরের প্রার্থী তালিকা করছে শীর্ষ নেতা। দলটির নেতারা মনে করেন, যেকোনোভাবে একটি অবাধ নির্বাচন হলে তারা বিপুল ভোটে জয়লাভ করবে। প্রসঙ্গ টেনে বিএনপির ভাইস-চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেছেন, সরকার ভেবেচিন্তে নির্বাচন কমিশন ঠিক করছে। সেটা কেমন হবে তা সবারই জানা। সবাই প্রেসিডেন্টের দিকে তাকিয়ে আছে। তবে পুনর্গঠিত কমিশন যেমনি হোক আগামী নির্বাচনে অংশ নিতে চায় বিএনপি। কারণ, আমাদের এটা মেনে নেওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় দেখছি না। তাই আমাদের এখন পর্যন্ত নির্বাচনে যাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি এবং আমরা মনে করি যে, ব্যাপক জনসমর্থন বিএনপির রয়েছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, একটি নির্বাচনের জন্য দেশের জনগণ মুখিয়ে আছে। আর বিএনপি এ লক্ষ্যে প্রস্তুত আছেই। বিএনপির মতো একটি দলে যেকোনো মুহূর্তেই নির্বাচনের জন্য সার্বিক প্রস্তুতি থাকেই। একই ধরনের বিশ্লেষণ দলটির যুগ্মমহাসচিব মজিবর রহমান সরোয়ারের। তিনি বলেন, তৃণমূলে নেতাকর্মীদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষেরও নির্বাচন নিয়ে ব্যাপক আগ্রহ রয়েছে। উৎসবমুখর পরিবেশে যোগ্য প্রার্থীকে তারা ভোট দিতে মুখিয়ে আছে। জনগণের সেই ভোটাধিকার ফিরিয়ে দেয়ার লক্ষ্যেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আরেক যুগ্মমহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, বিএনপি নির্বাচনমুখী দল। যতবারই সরকার গঠন করেছে ততবারই নির্বাচন ও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছে। জনগণের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দেবার মতো নির্বাচন হলে তাতে বিএনপি প্রমাণ করতে চায় যে, ‘বিএনপি নেই’- শাসকদের এ কথাই সঠিক নাকি বিএনপি তাদের চেয়ে ভালো আছে। অধিকসংখ্যক নেতার বিচার হচ্ছে, সাজা দিলে কী করবেন? এমন প্রশ্নে এই যুগ্ম-মহাসচিবের জবাব ছিল এমনতর যে, সাতক্ষীরার মোস্তাফিজকে (ক্রিকেটার) কেউই চিনত না এখন বিশ্ব চিনে, সাকিবের আগে আশরাফুল ছিল। সময়ের প্রয়োজনে মেধা, যোগ্যতা দিয়ে কে সামনে আসে বা শূন্যতা পূরণ করে তা দেখার জন্য অপেক্ষা করতে হবে। বিএনপির নীতি-নির্ধারকরা জানান, সরকারবিরোধী কঠোর আন্দোলনে যাওয়ার পরিকল্পনা নেই দলটির। তবে ইস্যুভিত্তিব কর্মসূচি থাকবে। সাংগঠনিক দুর্বলতা কাটিয়ে দল গুছিয়ে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন তারা। পাশাপাশি নির্বাচনের সম্ভাব্য প্রার্থীদের ব্যাপারেও খোঁজখবর নেয়া শুরু করেছেন। পুনর্গঠনের পাশাপাশি সম্ভাব্য একটি তালিকা করার প্রস্তুতি চলছে। প্রতিটি সংসদীয় আসনে কমপক্ষে তিনজন করে সম্ভাব্য প্রার্থীদের তালিকা করা হবে। এছাড়া প্রতিবারের মতো এবারো গোপনে জরিপ চালিয়ে একটি তালিকা তৈরি করবে হাইকমান্ড। দুই তালিকা থেকে সমন্বয় করে মনোয়ন চূড়ান্ত করা হবে। এলাকায় গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে, বিগত আন্দোলন-সংগ্রামে মাঠে ছিলেন এবং দলের প্রতি আনুগত্য রয়েছে এমন যোগ্যতা বিবেচনায় নিয়েই করা হবে এসব তালিকা। এ লক্ষ্যে কেন্দ্রীয়ভাবে জেলা ও উপজেলা বিএনপি কমিটির ‘সুপার ফাইভ/সেভেন’ নেতাদের ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করার কাজ চলছে। সূত্রমতে, সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকার পাশাপাশি আগামী নির্বাচনের ইশতেহার তৈরির আনুষ্ঠানিক প্রস্তুতি নিচ্ছে দলটি। এ লক্ষ্যে দলীয় নেতাদের পাশাপাশি পেশাজীবীদের সম্পৃক্ত করা হচ্ছে। সেক্টরওয়ারি কাজ করতে অভিজ্ঞদের দায়িত্বও দিয়েছেন দলের চেয়ারপার্সন। আগামী নির্বাচনে ইশতেহার কেমন হবে বিগত ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলে খালেদা জিয়ার বক্তব্যে কিছুটা ইঙ্গিতও পাওয়া গেছে। ‘ভিশন ২০৩০’ এর আলোকেই তৈরি করা হবে নির্বাচনী ইশতেহার। এ প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বিএনপি নির্বাচনমুখী একটি দল। জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণের মতো সার্বিক প্রস্তুতি তাদের রয়েছে। তিনি বলেন, নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সরকার ও স্বাধীন নির্বাচন কমিশনের অধীনে আমরা নির্বাচন চাই। যাতে সব দল অংশগ্রহণ করতে পারে এবং ভোটাররা নির্ভয়ে তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারেন। এমন একটি নির্বাচনে যারাই জয়লাভ করবে বিএনপি তাদের স্বাগত জানাবে। সবার অংশগ্রহণে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানে সরকার দ্রুত সেই উদ্যোগ নেবে বলে আশা করেন বিএনপির এই নীতি-নির্ধারক। পুনর্গঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ত এক নেতা বলেন, দল গোছানোর পূর্বে হাইকমান্ড তাদের কিছু নির্দেশনা দিয়েছেন। মূলত আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করেই ওইসব নির্দেশনা দেয়া হয়। পুনর্গঠনের পাশাপাশি প্রতিটি সংসদীয় আসনে সম্ভাব্য প্রার্থীদের ব্যাপারে খোঁজ-খবর নিতে বলা হয়েছে। যারা আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন পেতে ইচ্ছুক তাদেরকে জেলা বা উপজেলায় গুরুত্বপূর্ণ পদ না দিতে হাইকমান্ডের নির্দেশনা রয়েছে। পুনর্গঠনের আগে সংশ্লিষ্টদের কাছে এই ব্যাপারে জানতে চাওয়া হচ্ছে। অনেকেই জানিয়েছেন, আগামী নির্বাচনে তাদের মনোনয়ন দেয়া হবে এমন নিশ্চয়তা পেলে তারা তৃণমূলে গুরুত্বপূর্ণ পদ নেবেন না। এমন নেতাদের একটি তালিকা করা হচ্ছে। পুরো তালিকা করে চেয়ারপার্সনের কাছে জমা দেয়া হবে।