সঠিক তথ্য প্রকাশের জন্য কোনো সাংবাদিক হয়রানির শিকার হননি বলে দাবি করেছেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু। তিনি বলেছেন, বর্তমান সরকার আমলে যেসব সাংবাদিক কারাগারে গেছেন, তারা রাজনৈতিক ‘দুষ্কর্ম ও সুনির্দিষ্ট অপরাধ’ করেছেন।
আন্তর্জাতিক তথ্য অধিকার দিবসের কর্মসূচি জানাতে মঙ্গলবার তথ্য অধিদপ্তরে সংবাদ সম্মেলনে এসে তথ্য প্রযুক্তি আইনের (আইসিটি) বিতর্কিত ৫৭ ধারা নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে মন্ত্রী একথা বলেন।
ইনু বলেন, “সঠিক তথ্য প্রকাশ করার জন্য কোনো সাংবাদিক নিগৃহীত হয়েছে বলে আমার জানা নেই। যেসব সাংবাদিক কারাগারে গেছেন, তারা রাজনৈতিক দুস্কর্ম করার জন্য গেছেন, সাংবাদিকের কোনো তথ্য বিভ্রাটের জন্য নয়।”
শফিক রেহমান ও মাহমুদুর রহমানকে কারাগারে পাঠানোর প্রতিক্রিয়ায় বিএনপি অভিযোগ করে আসছে, বর্তমানে বাংলাদেশে গণমাধ্যমের কোনো স্বাধীনতা নেই।
বিকৃত তথ্য প্রচার এবং মানহানির বিভিন্ন মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে রয়েছেন আমার দেশের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর।
অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রীপুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়কে হত্যাচেষ্টার ষড়যন্ত্রের অভিযোগে সম্প্রতি পুলিশের করা মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কিছু দিন কারাগারে কাটিয়ে আসেন সম্পাদক শফিক রেহমান।
অন্যদিকে মন্ত্রী খোন্দকার মোশাররফ হোসেনকে নিয়ে লেখা একটি ফেইসবুক স্ট্যাটাসের কারণে গত বছর গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয় সাংবাদিক প্রবীর সিকদারকে।
এই সাংবাদিকের বিরুদ্ধে তথ্য প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায় করা মামলার বিচার চলছে, যে আইনটিকে মুক্ত মত প্রকাশে বাধা হিসেবে দেখে আসছেন গণমাধ্যম সংশ্লিষ্টরা।
তথ্যমন্ত্রী ইনু বলেন, “৫৭ ধারা সাংবাদিকদের মাথার উপরে নেই, এটা দেশের আইন। বাংলাদেশে সিআরপিসি অনুযায়ী ৩৪টির বেশি আইন আছে যে আইনে প্রাথমিক গ্রেপ্তারের পর জামিন পাবেন না। সুতরাং আপনারা আরও তথ্য জানবেন, দণ্ডবিধি জানবেন।
“৫৭ ধারাতে যারা গ্রেপ্তার হয়েছেন, তাদের কেউই আত্মপক্ষ সমর্থন করে বলতে পারেননি যে নিরাপরাধ। তারা যে অপরাধে গ্রেপ্তার হয়েছেন তা সুনির্দিষ্ট অভিযোগে, তার সঙ্গে গণমাধ্যমে তথ্য প্রকাশের কোনো সম্পর্ক নাই।”
আইসিটি আইনের ৫৭ ধারার অপব্যবহার স্বাধীন সাংবাদিকতার পরিপন্থি দাবি করে এই আইনের ১ ও ২ নম্বর ধারা বাতিলের দাবি জানিয়ে আসছেন সম্পাদক পরিষদসহ গণমাধ্যমকর্মীরা।
৫৭ ধারায় বলা হয়েছে- ওয়েবসাইটে প্রকাশিত কোনো ব্যক্তির তথ্য যদি নীতিভ্রষ্ট বা অসৎ হতে উদ্বুদ্ধ করে, এতে যদি কারও মানহানি ঘটে, রাষ্ট্র বা ব্যক্তির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়, তা হবে অপরাধ। এর শাস্তি অনধিক ১৪ বছর কারাদণ্ড এবং অনধিক এক কোটি টাকা জরিমানা।
২০০৬ সালে হওয়া এ আইনটি ২০০৯ ও ২০১৩ সালে দুই দফা সংশোধন করা হয়। সর্বশেষ সংশোধনে সাজা বাড়িয়ে ১০ বছর থেকে ১৪ বছর কারাদণ্ড করা হয়। আর ৫৭ ধারার অপরাধকে করা হয় অজামিনযাগ্য।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের যে খসড়া গত ২২ অগাস্ট মন্ত্রিসভায় নীতিগত অনুমোদন পেয়েছে তা পাস হলে আইসিটি আইনের ৫৪, ৫৫, ৫৬ ও ৫৭ সেখান থেকে বাদ দিয়ে নতুন আইনে যুক্ত করা হবে বলে জানান সরকার।
ইনু বলেন, “গত সাড়ে সাত বছরে আমাদের সমালোচনা করার জন্য, সরকারের ক্ষমতার অপব্যবহার করা নিয়ে রিপোর্ট করার জন্য কেউ নিগৃহীত হয়েছে বলে আমার জানা নাই।
“যাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে অপরাধসংক্রান্ত কারণে। বহুতজন একাধারে সাংবাদিক, আরেকধারে রাজনৈতিক নেতা। রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার সময় বা বক্তব্য বিবৃতি দেওয়ার সময় অপরাধজনিত কারণে…।”
“তথ্য মন্ত্রণালয় বা আমাদের তরফ থেকে বা গণমাধ্যমের নীতি নৈতিকতা ভঙ্গের জন্য কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি।”
ইন্টারনেটে সামাজিক গণমাধ্যমে লেখার জন্য দু-একজন সাংবাদিককে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গ্রেপ্তার করেছে জানিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, “সামাজিক গণমাধ্যমে দেড় কোটির বেশি সদস্য, এদের কয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে?
“৩০-৩৫টি ওয়েব পোর্টাল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এগুলো সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ এসেছে, তা যাচাই-বাছাই করে দেখছি। কর্তৃপক্ষকে ডাকা হচ্ছে, বহুজনই কিন্তু হাজির হচ্ছেন না। তাদের খবরের বিষয়ে বুঝিয়ে বলতে বলা হচ্ছে। যদি তারা সঠিক তথ্য দিয়ে বুঝিয়ে বলতে পারেন তাহলে তাদের পোর্টাল চালু হয়ে যাবে।”
এক হাজার আটশর বেশি ওয়েব পোর্টাল নিবন্ধনের জন্য তথ্য অধিদপ্তরে আবেদন জমা দিয়েছে বলে জানান মন্ত্রী।
তথ্য সচিব মরতুজা আহমদ, প্রধান তথ্য কমিশনার অধ্যাপক গোলাম রহমান, প্রধান তথ্য কর্মকর্তা এ কে এম শামীম চৌধুরী ছাড়াও তথ্য অধিদপ্তর এবং তথ্য কমিশনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।