জাহিদ হাসান , সরিষাবাড়ী প্রতিনিধিঃ
জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলার বিদ্যুৎ সরবরাহ কেন্দ্র থেকে এলাকার বিভিন্ন গ্রামের মধ্য দিয়ে সিরাজগঞ্জের কাজীপুর, জামালপুরের মাদারগঞ্জ, বগুড়া উপজেলার গ্রাম গুলোতে বিদ্যুৎ সংযোগের কাজ চলছে। পিডিবির সরিষাবাড়ী বিদ্যুৎ সরবরাহ কেন্দ্র এবং পল্লী বিদ্যুৎ সরবরাহ এলাকার গ্রাহকেরা বিদ্যুৎ না পেয়ে লোডশেডিংয়ে অতিষ্ঠ ঠিক সেই মুহূর্তে প্রায় ৮০ কিলোমিটার দীর্ঘ বৈদ্যুতিক লাইন টেনে পাশের উপজেলায় সংযোগ দেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে। এ নিয়ে এলাকার গ্রাহকদের মধ্যে তীব্র অসন্তোষ দেখা দিয়েছে।
পিডিবি, আরইবি এবং এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, সেন্ট্রাল জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন প্রজেক্ট-৪ এর মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার সম্প্রতি উপজেলা সদরের বাইরে সরিষাবাড়ী পল্লী বিদ্যুতের আওতাভুক্ত গ্রাম ও কাজীপুরের বেশ কিছু এলাকায় প্রায় ৭০ থেকে ৮০ কিকিলোমিটার এইচটি ও এলটি বিদ্যুৎ সংযোগ লাইন নির্মাণ করা হচ্ছে। পৌর এলাকার বাইরে পল্লী বিদ্যুতের আওতাধীন প্রায় আট থেকে ১০ বছর ধরে বিদ্যুৎ সেবা দিয়ে আসা এলাকায় পিডিবি’র বিদ্যুৎ লাইন টেনে সংযোগ দেওয়ার ঘটনায় কোটি টাকার বাণিজ্য হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। নতুন বিদ্যুৎ সরবরাহ লাইন থেকে আরও প্রায় আড়াই হাজার গ্রাহক পিডিবি থেকে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। বিদ্যুৎ সরবরাহ লাইন নির্মাণে ঠিকাদারের নির্দেশে এলাকার কতিপয় দালাল বৈদ্যুতিক খুঁটি ও তার ক্রয়ের নামে বিদ্যুৎ প্রত্যাশিত গ্রাহকের নিকট থেকে পাঁচ হাজার থেকে ২৫ হাজার টাকা করে প্রায় কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অসংখ্য অভিযোগ উঠেছে। চলমান নতুন বিদ্যুৎ সরবরাহ লাইন সম্পূর্ণ করার জন্য উপজেলা সদরে এ প্রকল্পের কতিপয় গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় এলটি ৯ মিটার পুল সংরক্ষণ করা হয়েছে।
পিডিবির তথ্যমতে, বর্তমানে আবাসিক, সেচ, কলকারখানা, মসজিদ, মন্দির, বাণিজ্যিক, পৌর পানির পাম্প ও উচ্চ চাপের গ্রাহক সংখ্যা রয়েছে প্রায় সাড়ে ১২ হাজার। এক্ষেত্রে নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ বিতরণের জন্য প্রয়োজন ছয় থেকে সাত মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। কিন্তু সেখানে পিক আওয়ারে পাওয়া যাচ্ছে দুই থেকে তিন মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। দীর্ঘদিনের নির্মিত পুরনো, জরাজীর্ণ লাইন ও বিদ্যুৎ ঘাটতির ফলে ওভার লোডশেডিংয়ে প্রতিনিয়ত জনজীবন দুর্বিষহ হয়ে পড়ছে। পুরনো বিদ্যুৎ সরবরাহ লাইনগুলো সংস্কার না করে নতুন করে উপজেলার ডোয়াইল ইউনিয়নের মাজালিয়া, ডিক্রিবন্দ, গোবিন্দপুর ও দুই তিনটি নদী পেরিয়ে উপজেলা সদর থেকে ১০ কিলোমিটার পশ্চিমে চরাঞ্চলে শিশুয়া থেকে দক্ষিণ আদ্রা (রাখালগাছা) হয়ে আদ্রা হাজিবাড়ি পর্যন্ত ও চর সরিষাবাড়ী ঘোড়ামারা বাজারের পশ্চিম পাশ দিয়ে সিরাজগঞ্জ জেলার কাজীপুর উপজেলার চর কুমারিয়াবাড়ি, চর শালগ্রাম, চর ব্রাহ্মণজানি ও আশপাশ এলাকাসহ পাশের উপজেলা মাদারগঞ্জ উপজেলার কয়ড়া, ডাকাতিয়া, রৌহা, নান্দিনা, বগুড়া জেলার সারিয়াকান্দিতে উক্ত প্রজেক্টের খুঁটি দিয়ে মাইলের পর মাইল বিদ্যুৎ সরবরাহ লাইন টানা হয়েছে। এ নিয়ে এলাকাবাসী সংশ্লিষ্ট দপ্তরে একাধিক অভিযোগও করেছে। সকল অভিযোগ উপেক্ষা করে প্রভাবশালী মহল নতুন ঐসব সরবরাহ লাইনে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে বলে কর্তৃপক্ষ সাংবাদিকদের জানিয়েছেন।
নতুন বিদ্যুৎ সরবরাহ লাইনের আওতায় ঐসব এলাকায় পিডিবি কিভাবে তাদের বিদ্যুৎ সংযোগ দিচ্ছে তা উপজেলা বিদ্যুৎ সরবরাহ কেন্দ্রে আবাসিক প্রকৌশলী, পল্লী বিদ্যুৎ সরবরাহ কেন্দ্রের ডিজিএম কোনো উত্তর দিতে পারছেন না। তা হলে স্থানীয় বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষের মতামত বা পূর্বানুমতি ব্যতিরেকে উপজেলা সদরের বাইরে দুর্গম চরাঞ্চলে দুই-তিনটি নদী পেরিয়ে পিডিবি’র লাইন বর্ধিত করা হয়েছে কার স্বার্থে। এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজছে বিদ্যুৎ গ্রাহক, এলাকাবাসী এবং উভয় দপ্তরের স্থানীয় কর্তৃপক্ষ।
এ ব্যাপারে পিডিবির আবাসিক প্রকৌশলী জামাত আলী ও পল্লী বিদ্যুতের ডিজিএম খন্দকার শামীম আলম এর সাথে কথা হলে তারা বলেন, বিষয়টি আমাদের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে