যুবকের প্রতারণায় পড়ে অর্থ খুইয়ে যারা তা উদ্ধারের জন্য সরকারের পদক্ষেপের আশায় ছিলেন, তাদের নিরাশ করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ও বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। মুহিতের ভাষ্য, প্রতারিতদের কোনো ইন্টারেস্ট নেই। একটা কেস (মামলা) নেই, এখানে কী করা যাবে … কিছু করার নেই। আর তোফায়েলের ভাষ্য, যুবকের সবকিছু এলোমেলো।
এক্ষেত্রে সরকারের আর কিছু করার নেই বলে বুধবার যুবকের অর্থ লোপাট সংক্রান্ত এক আন্তঃমন্ত্রণালয় সভার পর সাংবাদিকদের জানান তারা।
মাল্টিলেভেল মার্কেটিংয়ের (এমএলএম) নামে যুবক সারাদেশে মানুষের কাছ থেকে আড়াই হাজার কোটি টাকা সংগ্রহ করে তা আত্মসাতের পর প্রতারিতরা শোরগোল তুললে সরকার এতে হস্তক্ষেপ করে।
২০০৬ সালে কেন্দ্রীয় ব্যাংক যুবকের কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়ার পর এই সংস্থায় অনিয়ম খতিয়ে দেখতে অর্থ মন্ত্রণালয় সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনকে সভাপতি করে একটি কমিটি গঠন করে।
এই কমিটির সুপারিশ অনুসারে ৩ লাখ গ্রাহকের অর্থ ফেরতের উপায় খুঁজতে সাবেক যুগ্ম সচিব মো. রফিকুল ইসলামকে চেয়ারম্যান করে ‘যুবক কমিশন’ গঠন করা হয়। ২০১৩ সালে এই কমিশন যুবকের সম্পত্তি বিক্রি করে গ্রাহকদের পাওনা পরিশোধের সুপারিশ করে।
এরপর সভার পর সভায়ও কোনো উপায় বের না হওয়ার মধ্যে বুধবার অর্থ মন্ত্রণালয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকটি হয়। এতে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, বাণিজ্য সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন, বাংলাদেশ ব্য্যাংকের ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর চৌধুরীও ছিলেন।
অর্থমন্ত্রী বলেন, “যুবকের প্রতারণায় ক্ষতিগ্রস্তদের শত শত অভিযোগ আছে। হায় হায় কোম্পানিতে ইনভেস্ট আজকে নতুন নয়। বহু বছর ধরেই চলছে। প্রতারিত হয় লোকজন, আবার ওই দিকে যায়।”
স্বভাবসুলভ উষ্মা প্রকাশ করে মুহিত বলেন, “যুবকে যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তাদের কোনো ইন্টারেস্ট নেই। একটা কেস (মামলা) নেই, এখানে কী করা যাবে … কিছু করার নেই।
“আমরা তাদের অনুভব করি, সাহায্য করতে যাই। কিন্তু যারা এ কাজগুলো করেছে, তাদের কোনো খোঁজ নেই। এতগুলো লোক এখানে বিনিয়োগ করেছে, তারা কোর্টে যেত, মামলা করত। কোনো কিছু নেই।”
তোফায়েল বলেন, “যারা বিনিয়োগ করেছে, তাদের সতর্ক হওয়া উচিত ছিল, কী কোম্পানি জানা উচিৎ ছিল। তারা না জেনে বেশি মুনাফা লাভের আশায় বিনিয়োগ করে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।”
যুবকের সম্পত্তি বিক্রি করে প্রতারিতদের অর্থ ফেরত দেওয়া যায় কি না- এ প্রশ্নে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, “যুবকের সারাদেশে ৯৮ একর জমি আছে, ছড়ানো ছিটানো, কোনোটা বায়না করা হয়েছে, রেজিস্ট্রি হয়নি। সবকিছু এলোমেলো।”
অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে বিষয়টি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছিল জানিয়ে তিনি বলেন, “আমরা একটা সামারি প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠিয়েছিলাম। প্রধানমন্ত্রী আমাকে অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করতে বলেছিলেন। আমরা আজকে আলোচনা করলাম। আবার আমরা প্রধানমন্ত্রীকে জানাব।”
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী পদক্ষেপ ঠিক করবেন বলে জানান অর্থমন্ত্রী।
১৯৯৫-৯৬ সালে শাহবাগের আজিজ মার্কেটে কম্পিউটার শিক্ষা কেন্দ্র হিসেবে যুবকের যাত্রা শুরু হয়। এরপর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন ছাড়াই ১৯৯৭ সালে ক্ষুদ্র ঋণ কর্মসূচি চালু করে তারা।
ওই বছর জয়েন্ট স্টক কোম্পানির তালিকাভুক্ত হয় যুবক। এরপর থেকে যুবক হাউজিং, যুবক ফোনসহ অন্তত ২ টি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করতে থাকে।
অবৈধ ব্যাংকিংয়ের অভিযোগ তুলে ২০০৬ সালের ৬ জুলাই যুবকের কার্যকলাপ বন্ধ ঘোষণা করে বাংলাদেশ ব্যাংক।
একই দিনে গ্রাহকদের কাছ থেকে যুবকের নেওয়া আসল অর্থ সুদসহ ২০০৭ সালের মার্চের মধ্যে পরিশোধের নির্দেশ দেয়। ওই সময় এক টাকাও পরিশোধ করেনি যুবক, তবু কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে যুবকের কর্তাব্যক্তিদের নামে সারা দেশে অসংখ্য মামলা করেন গ্রাহকরা। এ অবস্থার মধ্যে মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনকে সভাপতি করে কমিটি গঠন করা হয়।
এরপর গঠিত কমিশন ২০১৩ সালে করা সুপারিশে দ্রুত প্রশাসক নিয়োগ দিয়ে যুবকের সম্পত্তি বিক্রির মাধ্যমে গ্রাহকদের পাওনা পরিশোধ করতে বলে। এরপর প্রশাসক নিয়োগও হয়নি, আর কোনো অগ্রগতিও নেই