খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম (বাঁয়ে) ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। পুরোনো ছবি
আদালত অবমাননার দায়ে খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হককে জরিমানা করে পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এস কে) সিনহার নেতৃত্বে আপিল বিভাগের বৃহত্তর বেঞ্চ স্বাক্ষরিত রায়টি সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার সাব্বির ফয়েজ এনটিভি অনলাইনকে বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারাধীন বিষয়ে দুই মন্ত্রী মন্তব্য করায় আদালত তাঁদের সাজা দিয়েছিলেন। আজ ওই রায় প্রকাশিত হয়েছে।
আদালত অবমাননার দায়ে ওই দুই মন্ত্রীকে ৫০ হাজার করে মোট এক লাখ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে সাতদিনের কারাদণ্ড দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।
পূর্ণাঙ্গ রায়ে বলা হয়েছে, আইনের শাসন সুরক্ষায় দুই মন্ত্রী অবহেলা করেছেন এবং তাঁরা বিষয়টি আদালতে স্বীকার করেছেন। বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলে বিচারাঙ্গণকে তাঁরা খাটো করেছেন।
প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের ওই বেঞ্চের অন্য সদস্যরা হলেন বিচারপতি আবদুল ওয়াহহাব মিয়া, বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী, বিচারপতি নিজামুল হক নাসিম ও বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার।
দুই মন্ত্রীর জরিমানার অর্থ লিভার ফাউন্ডেশন ও ইসলামিয়া চক্ষু হাসপাতালে অনুদান হিসেবে জমা দিতে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
গত ২৭ মার্চ দেওয়া এ রায়ের বাস্তবায়ন হয়েছে কি না সে বিষয়ে সাতদিন পর জানাতে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।
আদেশ দেওয়ার সময় আপিল বিভাগ বলেন, ‘দুই মন্ত্রীকে ডাকার মাধ্যমে সারা জাতিকে জানাতে চাই, কেউ আদালত অবমাননা করলে আমরা কতটা কঠোর হতে পারি।’
এ ব্যাপারে খাদ্যমন্ত্রীর আইনজীবী আবদুল বাসেত মজুমদার বলেছিলেন, আপিল বিভাগ নিঃশর্ত ক্ষমার আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন।
দোষী সাব্যস্ত দুজনের মন্ত্রিত্ব থাকবে কি না জানতে চাইলে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, ‘এর সঙ্গে সাংবিধানিক বিষয় জড়িত। পূর্ণাঙ্গ রায় পাওয়ার পর বিষয়টি আমরা বুঝতে পারব।’
২৭ মার্চ সংক্ষিপ্ত রায়ে মন্ত্রিত্ব থাকা বা না থাকার বিষয়টি উল্লেখ করেননি উচ্চ আদালত।
এর আগে গত ২০ মার্চ আদালত অবমাননার রুলের লিখিত জবাব দাখিলের নির্ধারিত দিনে হাজির হয়ে আইনজীবীর মাধ্যমে জবাব দাখিল করেন দুই মন্ত্রী। কিন্তু কামরুল ইসলামের জবাব দাখিলের ওপর আদালত সন্তুষ্ট না হওয়ায় খাদ্যমন্ত্রী ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়কমন্ত্রীকে আবারো সশরীরে হাজির হতে বলা হয়।
মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশ পাওয়া মীর কাসেম আলীর আপিলের রায়কে কেন্দ্র করে প্রধান বিচারপতির বক্তব্যের সমালোচনা করে গত ৫ মার্চ রাজধানীতে এক সেমিনারে বক্তব্য দেন সরকারের দুই মন্ত্রী কামরুল ইসলাম ও আ ক ম মোজাম্মেল হক। প্রধান বিচারপতি তাঁর আসনে থাকতে চাইলে ‘অতিকথন’ বন্ধ করা উচিত বলে মন্তব্য করেন এক মন্ত্রী।
একই সঙ্গে মীর কাসেম আলীর মামলায় আপিল বিভাগের শুনানিতে প্রধান বিচারপতি যেসব মন্তব্য করেছেন, তার পরিপ্রেক্ষিতে তাঁকে বাদ দিয়ে নতুন বেঞ্চ গঠন করে ওই মামলায় পুনরায় শুনানি করার আহ্বান জানান দুই মন্ত্রী।