শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০১:৩৪ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম ::

ঝিনাইদহ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে দিনে দুই লাখ টাকার ঘুষ আদায় !

বাংলার প্রতিদিন ডেস্ক ::
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ৩০ আগস্ট, ২০১৬
  • ৩৭০ বার পড়া হয়েছে

ঝিনাইদহ প্রতিনিধিঃ

ঝিনাইদহ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে হয়রানী ও ভোগান্তির শেষ নেই।

অফিসের নিচে হেল্প ডেক্স থেকে শুরু করে তিন তলায় সহকারী উপ-

পরিচালকের অফিস পর্যন্ত দিতে হয় ঘুষের টাকা । টাকা না দিলে পদে

পদে হয়রানী ও ভোগান্তি পেতে হয় পাসপোর্ট গ্রহিতাদের। সোমবার

হয়রানী ও ঘুষের অভিযোগ পেয়ে একজন মেজিষ্ট্রেটের নেতৃত্বে র‌্যাব-

৬ পাসপোর্ট অফিসে অভিযান চালায়। এ ঘটনায় আটক হয় ১১ জন

দালাল।

তবে ঘুষখোর কোন কর্মকর্তা বা কর্মচারী আটক হয়নি।

তথ্যানুসন্ধান করে জানা গেছে, এক বছর আগে ফাইল প্রতি আটশ

টাকা করে ঘুষ আদায় করা হতো। বর্তমান সহকারী উপ-পরিচালক আব্দুল

মোত্তালেব সরকার ২০১৫ সালের ৩০ জুলাই যোগদানের পর থেকে নেওয়া

হচ্ছে নয়’শ টাকা করে। ফাইল প্রতি ঘুষের রেট বাড়ানো হয়েছে একশ

টাকা।

এ হিসেবে দিনে আনুমানিক দুই লাখ টাকা করে ঘুষ আদায় হচ্ছে।

অফিসের আলপিন নাহার নামে এক মহিলা ঘুষের টাকা আদায় করেন বলে

কথিত আছে।

সর্বশেষ রোববার (২৮ আগষ্ট) ঝিনাইদহ সোনালী ব্যাংকে

পাসপোটের্র বিপরীতে ২১৯টি জন টাকা জমা দেন। যার প্রতিটি

ফাইল থেকে ৯’শ টাকা করে মোট এক লাখ ৯৭ হাজার একশ টাকা ঘুষ

আদায় করা হয়েছে।

অভিযোগ উঠেছে বর্তমান সহকারী উপ-পরিচালকের সময় (১৪ জুলাই

২০১৬ পর্যন্ত) পাসপোর্টের জন্য ২০ হাজার ৯০১ টি আবেদনপত্র জমা

পড়ে। এর মধ্যে ২০ হাজার ৬’শ ৮৪ টি পাসপোর্ট বিতরণ করা হয়।

অফিসের বিশেষ একটি সুত্রে জানা গেছে, প্রতি সপ্তাহে ঘুষের

টাকা ভাগাভাগি হয়। এর মধ্যে সহকারী উপ-পরিচালক পান ৬০% ও বাকী

৪০% টাকা সাধারণ স্টাফরা ভাগ করে নেন। কক্সবাজার পাসপোর্ট

অফিসে দায়িত্ব পালনকালে আব্দুল মোত্তালেব সরকার রহিঙ্গা

স্মরনার্থীদের পাসপোর্ট দিয়ে বতির্কে জড়িয়ে পড়েন।

এ নিয়ে গোয়েন্দা প্রতিবেদনে সরকারের উপর মহলকে জানানো হলে

তাকে বদলী করা হয়। কিন্তু তার খুটোর জোর থাকায় কোন শাস্তি হয় না

বলে অভিযোগ। তবে ঝিনাইদহ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের সহকারী

উপ-পরিচালক আব্দুল মোত্তালেব সরকার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন,

কে কোথায় ঘুষ নেন তা আমার অজানা।

এদিকে অভিযোগ উঠেছে উপ-পরিচালক আব্দুল মোত্তালেব সরকারের ঘুষ

আদায় ও যৌন হয়রানীকে কেন্দ্র করে গত বুধবার ঘটে গেছে তুলকালাম

ঘটনা। ওই দিন আব্দুল মোত্তালেব সরকারের কর্মক্ষেত্রে হয়রানী, উত্যক্তসহ

যৌন নিগ্রহের অভিযোগ তদন্ত করতে ঝিনাইদহে আসেন প্রধান

কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক (সংস্থাপন) নাসরিন পারভিন নুপুর।

তিনি ঢাকা ফিরে যাওয়ার পর থেকেই সহকারী উপ-পরিচালক আব্দুল

মোত্তালেব অন্যত্র বদী হচ্ছেন এমন খবর চাউর হয়ে পড়ে। এদিকে

ঝিনাইদহ সদর উপজেলার সাধুহাটী এলাকার মাসুদ অভিযোগ করেন,

তিনি অনলাইনে ফরম পুরণ করে জমা দিতে গেলে নানা রকম ভুল ধরে ফাইল

ফিরিয়ে দেন কাউন্টারে বসে থাকা অফিসের কর্মচারী গৌতম কুমার

সাহা। পুলিশ রিপোর্ট ভাল আসার পরও মামলা ও বয়স নিয়ে সন্দেহ

প্রকাশ করে ফিরিয়ে দেওয়া হয় মাসুদকে।

তিনি আরো অভিযোগ করেন, পাঁচ দিন অফিসে ঘোরার পর দালালদের

মাধ্যমে ঘুষ দিয়ে ফিংগারিং ও ছবি ওঠার ব্যবস্থা হয়। কোটচাঁদপুরের

ধোপাবিলা গ্রামের শিমুল হোসেন, শান্তি মিয়া, বিল্লাল হোসেন,

সদর উপজেলার হাজরা গ্রামের বিপুল হোসেনও মোবাইলে তাদের কাছ

থেকে ঘুষ নেওয়ার কথা স্বীকার করেন। তাদের কাছ থেকে পাসপোর্ট

প্রতি ৯’শ টাকা করে ঘুষ নেওয়া হয়েছে বলে জানায়।

২০১৬ সালের ৩১ মে তারিখে ঝিনাইদহ শহরের চাকলাপাড়ার কমল কুমারের

কাছ থেকে ইমার্জেন্সি পাসপোর্ট করার নামে ২১ হাজার টাকা

হাতিয়ে নেওয়া হয়। পাসপোর্ট অধিদপ্তর সুত্রে জানা গেছে, নিয়ম

হচ্ছে একদিনেই পাসপোর্ট গ্রহীতাদের সব কাজ সারতে হবে।

কিšু‘ ঝিনাইদহ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে ঘুষ টাকা না দিলে

দিনের পর দিন ঘুরিয়ে চরম ভাবে হয়রানী করা হয়। অভিযোগ পাওয়া

গেছে, ঝিনাইদহ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে আউট র্সোসিং ও

সরকারী ভাবে নিয়োগ প্রাপ্তরা সিন্ডিকেট গড়ে তুলে অসাধ্য কাজ

সাধন করে থাকে।

এই সিন্ডিকেটে রয়েছে কামাল হোসেন, মাসুদ হাসানসহ অনেকে।

তারা তিন তলার বাথরুমের মধ্যে প্রথম শ্রেনীর গেজেটেড

কর্মকর্তাদের সীল সাক্ষর জাল করে পাসপোর্টের যাবতীয় কাগজ

সত্যায়িত এবং স্টোর রুমের মধ্যে ঘুষের টাকা লেনদেন করে থাকে।

এদিকে ঝিনাইদহ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস দালাল ও হয়রানী মুক্ত

দাবীর একদিন পর র‌্যাব-৬ একজন ম্যজিষ্ট্রেটের নেতৃত্বে অভিযান

চালিয়ে ১১ দাললকে আটক করে ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে প্রত্যেককে

একমাস করে বিনাশ্রম কারাদন্ড দিয়েছেন।

র‌্যাব-৬ এর ঝিনাইদহের অধিনায়ক মেজর মনির আহম্মেদ ও নির্বাহী

ম্যাজিষ্ট্রেট মেজবাউল করিম অভিযানে নেতৃত্ব দেন। আটক দালালরা

হচ্ছে, লাল চাঁদ, দিপংকর, স্বপন কুমার, শামছুল, আনোয়ার, সাধন,

তাজুল, সজল, জিল্লুর রহমান, টরি ও জয়দেব কুমার।

এ বিষয়ে ঝিনাইদহ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের সহকারী উপ-

পরিচালক আব্দুল মোত্তালেব সরকার জানান, কে কি ভাবে টাকা নিচ্ছে

আমার জানা নেই। যারা টাকা দিচ্ছেন তাদের আমার কাছে আসতে

বলেন।

নিজের অফিস দালাল ও হয়রানী মুক্ত দাবী করে বক্তব্য প্রদানের এক দিন পর

১১ দালাল আটক প্রসঙ্গটি তিনি এড়িয়ে যান। তিনি জানান,

অফিসে বাইরে কে কি করেন তা আমার জানার বাইরে।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © banglarprotidin.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com
themebazarbanglaro4451