হবিগঞ্জ প্রতিনিধি ॥ হবিগঞ্জে বাহুবলে আলোচিত ৪ শিশু হত্যা মামলার অভিযোগ গঠন ফের
পিছিয়েছে। রোববার নির্ধারিত তারিখে মামলার আসামী রুবেল মিয়ার বয়স নির্ধারণ নিয়ে
জটিলতার কারণে অভিযোগ গঠন করেননি হবিগঞ্জে অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ মাফরোজা
পারভীন। আগামী ১ সেপ্টেম্বর মামলার পরবর্তী তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, আসামীপক্ষের দাবি ছিল রুবেল মিয়া অপ্রাপ্ত বয়স্ক। এর প্রেক্ষিতে
আদালত সিভিল সার্জনের মতামত জানতে চান। শারীরিক পরিক্ষা নিরিক্ষা শেষে হবিগঞ্জের সিভিল
সার্জন তাকে প্রাপ্ত বয়স্ক বলে সনদ দেন। পরবর্তীতে তারা উচ্চ আদালতে বিষয়টি নিয়ে আপিল
করবেন মর্মে একজন আইনজীবীর দেয়া পত্র আদালতে উপস্থাপন করেন। ফলে অভিযোগ গঠনের
তারিখ পিছিয়ে দেন বিচারক। এছাড়া হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত আটককৃত অটোরিকশা জিম্মায়
নেয়া এবং কারাগারে আটক আসামী আরজু মিয়ার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করা হয়েছে।
শুনানীকালে আদালতে কারাগারে আটক আব্দুল আলী বাগাল, তার ছেলে রুবেল মিয়া ও জুয়েল
মিয়া, আরজু মিয়া ও সাহেদ আলী ওরফে সায়েদকে হাজির করা হয়।
বাদিপক্ষের আইনজীবী ত্রিলোক কান্তি চৌধুরী বিজন জানান, আসামীপক্ষ মামলার বিচারকার্জ
দীর্ঘ করার উদ্দেশ্যেই মূলত রুবেল মিয়ার বয়স নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি করছে। তবে দ্রুতই মামলার
বিচার শুরু হবে বলে আশা করেন তিনি।
নিহত তাজেল মিয়ার বাবা আব্দুল আজিজ আদালত এলাকা সাংবাদিকদের জানান, মামলার
আসামীদের ফাঁসি দিলে তাদের সন্তানদের আত্মা শান্তি পাবে।
উল্লেখ্য, গত ১২ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় নিখোঁজ হয় সুন্দ্রাটিকি গ্রামের ওয়াহিদ মিয়ার
ছেলে সুন্দ্রাটিকি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেনীর ছাত্র জাকারিয়া শুভ (৮),
আবদাল মিয়ার ছেলে প্রথম শ্রেনীরর ছাত্র মনির মিয়া (৭), আব্দুল আজিজের ছেলে চতুর্থ
শ্রেনীর ছাত্র তাজেল মিয়া (১০) ও সুন্দ্রাটিকি আনোয়ারুল উলুম ইসলামিয়া মাদরাসার
নুরানি প্রথম শ্রেণির ছাত্র আব্দুল কাদিরের ছেলে ইসমাইল মিয়া (১০)। ১৩ ফেব্রুয়ারী এ
বিষয়ে থানায় সাধারণ ডায়রি করেন জাকারিয়া শুভর বাবা ওয়াহিদ মিয়া। ১৬ ফেব্রুয়ারী থানায়
অপহরণ মামলা দায়ের করেন নিহত মনির মিয়ার বাবা আব্দাল মিয়া। নিখোঁজের পাঁচ দিন পর ১৭
ফেব্রুয়ারি সকালে গ্রাম থেকে প্রায় ১ কিলোমিটার দূরের ইসাবিল নামক স্থান থেকে বালু
মিশ্রিত মাটিচাপা অবস্থায় ওই চার শিশুর অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করা হয়। স্থানীয় সূত্র জানায়,
শিশু মনির, শুভ ও তাজেলের বাবার সঙ্গে একটি বড়ই গাছ কাটাকে কেন্দ্র করে একই গ্রামের
পঞ্চায়েত আব্দুল আলী বাগলের বিরোধ ছিল। এর জের ধরে ওই চার শিশুকে অপহরণের পর হত্যা করা হয়।
উক্ত ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার তদন্তভার পান ডিবি পুলিশের তৎকালিন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো.
মুকতাদির হোসেন। তিনি ৪৮ দিন তদন্ত শেষে ৮ জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশীট জমা দেন।
এতে অভিযুক্ত করা হয়- পঞ্চায়েত সর্দার আব্দুল আলী বাগাল, তার ছেলে জুয়েল মিয়া ও রুবেল
মিয়া, ভাতিজা সাহেদ আলী ওরফে সায়েদ, অন্যতম সহযোগি হাবিবুর রহমান আরজু, উস্তার
মিয়া, বেলাল মিয়া ও বাবুল মিয়াকে। তাদের মাঝে এখনও পর্যন্ত পলাতক রয়েছে উস্তার মিয়া,
বেলাল মিয়া ও বাবুল মিয়া।