শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ১২:২৩ পূর্বাহ্ন

রাইফার বাসায় মেয়র নাছির, হয়েছে আরেক তদন্ত কমিটি

বাংলার প্রতিদিন ডেস্ক ::
  • আপডেট সময় রবিবার, ১ জুলাই, ২০১৮
  • ৪২৯ বার পড়া হয়েছে

বাংলার প্রতিদিন ডেস্কঃ- 

চট্টগ্রামের হাসপাতালে আড়াই বছর বয়সী শিশু রাইফা খানের মৃত্যুতে আরেকটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তিন সদস্যের এই কমিটি গঠন করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

এদিকে, রাইফার পরিবারকে সান্ত্বনা জানাতে আজ রোববার মহানগরীর জুবলী রোডে তাদের বাসায় যান চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন ও জেলা সিভিল সার্জন গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান আজিজুল ইসলাম ভূঁইয়া।

তাদেরকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়েন নিহত রাইফার বাবা সাংবাদিক রুবেল খান। এ সময় তিনি ও তাঁর স্ত্রী মেয়রকে মাত্র দুদিন আগে তোলা শিশু মেয়ের ছবি দেখান।

এ সময় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন সাংবাদিকদের বলেন, ‘এ ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে একটা আইন তৈরি করতে হবে। আইন তৈরি করে যে ডাক্তার বা নার্সের অবহেলার কারণে বা অবজ্ঞার কারণে বা ভুল চিকিৎসার কারণে কেউ ক্ষতিগ্রস্ত  হলে, মৃত্যুবরণ করলে তো অবশ্যই, ক্ষতিগ্রস্ত হলেও তার উপযুক্ত যথাযথ এবং সর্বোচ্চ শাস্তিটা নিশ্চিত করতে হবে। ক্ষতিপূরণটাও দিতে হবে। দুটোই দিতে হবে। একটা হলো যে ক্ষতিপূরণ। টাকার অঙ্ক দিয়ে তো আর জীবন ফিরে পাওয়া যাবে না, তারপরও এটাও একটা শাস্তি। ক্ষতিপূরণও দিতে হবে, এটা উন্নত বিশ্বে আছে এবং এটার সর্বোচ্চ শাস্তিটা নিতে হবে। যাতে এই চিকিৎসক আর কোনো চিকিৎসা না করতে পারে। তাদের চিকিৎসক হিসেবে যে সনদটা আছে, সেটা বাতিল করতে হবে। এই দৃষ্টান্তটা আমরা যদি স্থাপন করতে পারি, তাহলে কেউ আর অবহেলা করার সাহস দেখাবে না। এবং এটাতে আমাদের রুবেল খানের যে ফুটফুটে ছোট্ট একটা শিশু ম্যাক্স হাসপাতালে চিকিৎসা গ্রহণ করতে গিয়ে মৃত্যুবরণ করেছে, এটাতে আমি অত্যন্ত দুঃখ প্রকাশ করছি।’

এ ছাড়া ভুল চিকিৎসা নিয়ে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) কোনো ধরনের শক্তি প্রদর্শনের চেষ্টা করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন।

নিজের দায়িত্ব ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে গঠিত নতুন কমিটির বিষয়ে কথা বলেন জেলা সিভিল সার্জন গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান আজিজুল ইসলাম ভূঁইয়া। তিনি বলেন, ‘আমরা এখানে এমন একটা সারমর্ম দিলাম যে, এখানে কোনো কিছু উদ্ধার করা যাবে না, তা না। অভিযুক্ত কিনা, নাকি, এটা আমরা স্পেসিফিকলি লিখব, সততার সাথে। যে কারা কারা এটার জন্য দায়ী, কি দায়ী, এটা আমরা বলতে পারছি, এর মাঝখানে আমরা আর কিছু বলতে পারতেছি না। আমরা যেদিন জমা দেব, সেদিন জানাব। আপনাদের ওই রিপোর্টটা ডাক্তার প্রতিনিধিও থাকবে, সাংবাদিক প্রতিনিধিও থাকবে। যেহেতু  দোনো (দুই) গ্রুপ আমাকে দায়িত্ব দিয়েছে। আমরা আমাদের কমিটি যারা উভয় পক্ষের সামনেই, সেটা লিখিতভাবে জবাব দিব। এর আগে আমার মনে হয় যে, আমরা প্রশ্ন না করলে খুশি হব। আমরা যতটুকু জেনেছি যে, আমাদের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) মহোদয়, উনারাও একটা তদন্ত  কমিটি করেছে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে, আমাদের ডিরেক্টর হসপিটাল জাহাঙ্গীর স্যারকে প্রধান করে। শিশু হাসপাতালের একজন শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ, ডিজি অফিসের একজন অ্যাসিসটেন্ট ডাইরেক্টার। তারা তিনজন সকালে রওনা দিয়েছেন। আজকে সন্ধ্যার মধ্যে আশা করি, এসে পৌঁছাবেন। এটা হচ্ছে আমাদের স্বাস্থ্য বিভাগ বা মন্ত্রণালয় থেকে একটি সরকারি তদন্ত। আর আমি আপনাদের দোনো গ্রুপের ভালোবাসায় সিক্ত হইয়া বিশাল একটা দায়িত্ব পালন করছি। সাংবাদিক এবং চিকিৎসকদের ইয়ের ফলে, এটা হচ্ছে আপনাদের জন্যে আমি এটা করছি। আর আমার যেটা স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে অধিদপ্তর থেকে করছে, এটা তার নিজস্ব গতিতে চলবে। ’

চট্টগ্রামে আয়োজিত মানববন্ধনে বক্তব্য প্রদান শেষে রাইফার বাবার কান্না। ছবি : এনটিভি

এদিকে, গতকাল গঠিত প্রথম তদন্ত কমিটি আজ থেকে কাজ শুরু করেছে। এছাড়াও তদন্ত কমিটি থেকে জেলা বিএমএর সাধারণ সম্পাদক ডা. ফয়সাল ইকবালকে বাদ দেওয়া হয়েছে বলে জানান তদন্ত কমিটির প্রধান। এ কমিটিতে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. প্রণব কুমার চৌধুরীকে সদস্য করা হয়েছে।

আগামী পাঁচ দিনের মধ্যে এই তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করা হবে বলে জানানো হয়।

এদিকে, শিশু রাইফা খানের মৃত্যু ও ভুল চিকিৎসার অভিযোগে দোষীদের বিচার চেয়ে আজ চট্টগ্রামে নানা কর্মসূচি পালিত হয়েছে। মানববন্ধন করেছে চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়ন।

গত শুক্রবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে নগরীর মেহেদীবাগের ম্যাক্স হাসপাতালে রাইফা খান মারা যায়।

নিহত রাইফার পরিবারের দাবি, চিকিৎসকের অবহেলায় মৃত্যুর ঘটনা হয়েছে। ঘটনার পর সিভিল সার্জনকে আহ্বায়ক করে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, গলার ব্যথার কারণে কিছু খাচ্ছিল না রাইফা। সে কারণে বৃহস্পতিবার বিকেলে তাকে ভর্তি করা হয় ম্যাক্স হাসপাতালে।

শিশুটির বাবা সাংবাদিক রুবেল খান জানান, হাসপাতালে ভর্তির পর থেকেই নানা অব্যবস্থাপনা দেখতে পাচ্ছিলেন তাঁরা। জরুরি বিভাগে বসিয়ে রাখা হয় দুই ঘণ্টা। এর মধ্যে রাইফাকে অ্যান্টিবায়োটিক ইনজেকশন দেন কর্তব্যরত চিকিৎসক। দেখা যাচ্ছিল যে, যখনই ইনজেনশন দেওয়া হচ্ছিল তখনই শিশুটি ছটফট করতে শুরু করে। পরে তিনি ইনজেকশনটি বদলে দিতে হাসপাতালটির চিকিৎসকদের অনুরোধ করেন।

তখন হাসপাতাল থেকে একজন নাক, কান, গলা বিশেষজ্ঞের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ডা. সুমন তালুকদারের পরামর্শ নেন। তিনি দুটি এক্স-রে পরীক্ষা দেন। সেই দুটিতে খারাপ কিছু ধরা পড়েনি বলেও দাবি করেন রুবেল খান। এর পর ডা. সুমন তালুকদার একজন শিশু বিশেষজ্ঞের সঙ্গে পরামর্শ করতে বলেন।

এরপর হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. বিধান রায় চৌধুরীকে অনকলে আনে রাইফার পরিবার। রুবেল খানের দাবি, কেবিনে এসে শিশুটিকে পরীক্ষা না করেই কর্তব্যরত চিকিৎসকের দেওয়া প্রেসক্রিপশন দেখেই তিনি ওষুধ লেখেন। আগের ব্যবস্থাপত্রের সঙ্গে কেবল একটি ইনজেকশন যোগ করেন।

পরে গতকাল রাতে রাইফার অবস্থার অবনতি হতে থাকে। একপর্যায়ে প্রচণ্ড খিঁচুনি ওঠে শিশুটির। রাত সাড়ে ১২টার দিকে মারা যায় রাইফা।

এ ঘটনার জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে দায়ী করেন রুবেল খান। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ভুল চিকিৎসায় মৃত্যু হয়েছে এমনটি মানতে নারাজ।

ম্যাক্স হাসপাতালের মহাব্যবস্থাপক রঞ্জন প্রসাদ দাশ বলেন, শিশুটির জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল। তাকে আইসিইউতেও নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত চিকিৎসকদের শত চেষ্টাতেও বাঁচানো যায়নি রাইফাকে।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © banglarprotidin.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com
themebazarbanglaro4451