রামগঞ্জ প্রতিনিধি :
রামগঞ্জে বেপরোয়া মোটরসাইকেল চোরের সিন্ডিকেট
লক্ষ্মীপুর জেলার রামগঞ্জে মোটরসাইকেল চোরদের একটি শক্তিশালী দল গড়ে উঠেছে। এদের রয়েছে শক্তিশালী নেটওয়ার্ক। ৪-৫ মিনিট সময় পেলেই কৌশলে মোটরসাইকেল নিয়ে উধাও হয়ে যায় তারা।
জানা যায়, উপজেলার বিভিন্নস্থানে গত ৬ মাসে অন্তত অর্ধশতাধিক মোটরসাইকেল চুরির ঘটনা ঘটেছে। এ অবস্থায় বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করেও চুরি ঠেকানো যাচ্ছে না। এ নিয়ে মোটরসাইকেল মালিকরা আতঙ্কে রয়েছেন।
এদিকে, হয়রানি এড়াতে অধিকাংশ চুরির ঘটনায় থানা পুলিশের কাছে মামলা কিংবা অভিযোগ করনেনি মালিকরা। অভিযোগ রয়েছে, জানানোর পরও পুলিশ চুরি হওয়া মোটরসাইকেল উদ্ধার ও চোরদের আটক করতে কার্যকরী পদক্ষেপ নেয় না।
ভুক্তভোগী, পুলিশ ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত ৬ মাসে রামগঞ্জে পালসার, ডিসকভার, বাজাজ ও হিরোসহ বিভিন্ন কোম্পানির ব্যক্তি মালিকানাধীন অর্ধশতাধিক মোটরসাইকেল চুরি হয়েছে।
উপজেলার আঙ্গারপাড়া এলাকার আবুল হোসেন পাটওয়ারী, দরবেশপুরের মিজানুর রহমান, কাজীরখিলের জামাল হোসেন ও খোরশেদের ,রতনপুরের রফিকুল ইসলাম, আনোয়ার হোসেন, শোয়াইব হোসেন, সাতারপাড়া এলাকার রেজাউল করিম খোকন, মাহফুজুর রহমান সুমন, ইসমাইল হোসেন, ভোলাকোটের কবির হোসেন মোল্লা, আলীপুরের আবদুর সাত্তার, আঙ্গারপাড়ার মো. হানিফ, পশ্চিম আঙ্গারপাড়ার বাদলেরসহ অর্ধশতাধিক ব্যাক্তির মোটর সাইকেল চুরি হয়েছে।
এছাড়া ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে ইউপি চেয়ারম্যান, শিক্ষক, আইনজীবী, সরকারি কর্মকর্তা, পল্লী চিকিৎসক, ব্যবসায়ী এবং প্রবাসী রয়েছেন।
সার ও কীটনাশক ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম বলেন, ১০ মিনিট সময়ের মধ্যে মোটরসাইকেল চুরি হয়ে গেল। চোরেরা মালিক ও আশপাশের লোকজনের গতিবিধি অনুসরণ করে চুরি করে। পুলিশকে জানিয়েও কোনো লাভ হয়নি।
কৃষি ব্যাংকের মাঝিরগাঁও শাখার ব্যবস্থাপক আবদুস সাত্তার জানান, ১৪ জুন রাতে তার মোটরসাইকেলটি চুরি হয়। এ ঘটনায় তিনি থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। পরে এক নির্ভরযোগ্য মাধ্যমে তিনি চোরের সিন্ডিকেটের সঙ্গে সমঝোতা করে চার দিন পর কুমিল্লা থেকে মোটরসাইকেলটি উদ্ধার করেন। তবে, কত টাকা এবং কার মাধ্যমে তিনি মোটরসাইকেল উদ্ধার করেছেন তা জানাতে রাজি হননি তিনি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি জানিয়েছেন, ক্ষমতাসীন দলের কিছু নেতাকর্মী এ সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িত। তারা চালকের গতিবিধি লক্ষ্য করে ৪-৫ মিনিট সময় পেলেই মোটরসাইকেল নিয়ে উধাও হয়ে যায়। সংঘবদ্ধ প্রশিক্ষিত চোরদের কাছে সব সময় বিভিন্ন মোটরসাইকেলের একাধিক চাবি থাকে। তারা চুরি করা মোটরসাইকেল ২-৩ ঘন্টার মধ্যে কয়েক হাত বদল করে। চুরির পর মোটরসাইকেল হাজীগঞ্জ হয়ে কুমিল্লা, চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুর জেলার বিভিন্নস্থানে নিয়ে স্বল্পমূল্যে বিক্রি করে দেয় তারা।
এ ব্যাপারে দরবেশপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বলেন, রাজনৈতিক কিছু বিপদগামী ছেলে এসব ঘটনার সঙ্গে জড়িত। বাসার নিচ থেকে আমার মোটরসাইকেলের কয়েকটি লক (তালা) ভেঙে মুহূর্তের মধ্যে নিয়ে গেছে। এ বিষয়ে থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করলেও পুলিশ তা উদ্ধার করতে পারেনি।
জানতে চাইলে রামগঞ্জ সদর থানা পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) সোলায়মান চৌধুরী বলেন, মোটরসাইকেল চুরির ঘটনায় থানায় কয়েকটি জিডি হয়েছে। চুরি হওয়া মোটরসাইকেল উদ্ধার ও চোরদের আটক করতে পুলিশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে। তবে চুরি রোধে মালিকদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।