ঝিনাইদহ প্রতিনিধিঃ
নিজ মেয়ের ছবি বুকে জড়িয়ে সারাক্ষন কেদে কেদে বেড়াচ্ছেন মা
বিলকিস খাতুন। এতোদিন হয়ে গেল মেয়ের খুনিদের ধরতে পারলো না
পুলিশ। এই দুঃখের কথা আর কার কাছে বলবো। কে আমার মেয়ের হত্যার বিচার
করবে ? এই বলে সারাক্ষন চোখের পানিতে বুক ভাসায় বিলকিস।
ঝিনাইদহ সদর উপজেলার ওয়াড়িয়া গ্রামের স্কুলছাত্রী মিম খাতুন হত্যাকান্ডের
৯ মাস পেরিয়ে গেলেও কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। এমনকি
হত্যার মোটিভ ও ক্ল রয়ে গেছে অজানা। তদন্তকারী কর্মকর্তারও এ বিষয়ে
কোন গাঁ নেই বলে অভিযোগ উঠেছে।
এদিকে দীর্ঘ সময়ে এ হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িত আসামিদের গ্রেপ্তার করতে
না পারায় হতাশ হচ্ছেন নিহতের পরিবার। হত্যাকারীদের শাস্তি ও মামলার ভবিষ্যত
নিয়েও চিন্তিত নিহতের পরিবার।
জানা গেছে, ঝিনাইদহ জেলার সদর উপজেলার মধুহাটি ইউনিয়নের
ওয়াড়িয়া গ্রামের ইকবাল হোসেনের মেয়ে মিম খাতুন ২০১৫ সালের ৩১
অক্টোবর নিহত হন। তাকে অপহরনের পর পাশবিক নির্যাতন করে দুর্বৃত্তরা
হত্যা করে। আগের দিন সন্ধায় মিম প্রতিবেশী হুজুর আলীর বাড়িতে মিলাদ
শুনতে বাড়ি থেকে বের হয়। মিলাদ শেষে বাড়িতে ফিরে না আসলে
খোঁজাখুঁজি শুরু করেন মিমের বাবা মা।
পরদিন ৩১ অক্টোবর দুপুরে গ্রামের চিত্রা নদীর পাড়ে একটি মেহগনি
বাগানে মীমের মরদেহ খুঁজে পায় তার স্বজনরা। মিম কোটচাঁদপুরের
ধোপাবিলা হাই স্কুলের ৭ম শ্রেনীতে পড়তো।
নিহতের বাবা ইকবাল হোসেন জানান, মিম হত্যাকান্ডের বিষয়ে গত ১৩ই
ডিসেম্বর ঝিনাইদহ বিজ্ঞ আমলি ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি মামলা
দায়ের করেন। মামলা নং ৭২৭/১৫। এর আগে আদালতে করা মামলার আসামীরা
আমার সরলাতার সুযোগ নিয়ে রাজু নামে এক মানসিক প্রতিবন্ধির নামে
থানায় মামলা সাজায়। পরে আমি খোঁজ নিয়ে জানতে পারি আমার
মেয়েকে গ্রামের কিছু সন্ত্রাসীরাই হত্যা করেছে। এ জন্য আমি আবার
আদালতে মামলা করি।
তিনি অভিযোগ করেন, ওয়াড়িয়া গ্রামের খেদেরের ছেলে ইজাজুল, খায়রুলের
ছেলে বিল্লাল হোসেন, আতিয়ারের ছেলে নাগর ও আব্দুল কাদেরের ছেলে ইমান
আলীসহ আরো অজ্ঞাত ব্যক্তিরা আমার মেয়েকে হত্যা করেছে।
এ সব আসামীর নামে আদালতে মামলা করার পর থেকেই তারা পলাতক রয়েছে।
ইকবাল হোসেন বলেন, তারা জড়িত না হলে গ্রাম ছাড়লো কেন ?
তিনি বলেন, এতো বড় সত্য ঘটনার পরও আমি গরীব বলে দীর্ঘ সময়েও পুলিশ
এই হত্যাকান্ডের কোনো ক্লু উদ্ধার করতে পারেনি। হত্যাকান্ডে সাথে জড়িত
আসামিদেরও গ্রেফতার করা হচ্ছে না। মিমের পরিবার অভিযাগ করেন, মোটা
অংকের টাকা লেদদেন হওয়ায় পুলিশ আসামীদের বাড়িতে যাচ্ছে না।
মামলার প্রথম তদন্তকারী কর্মকর্তার সাথে আসামীদের সখ্যতা থাকায় মিম
হত্যা ধামাচাপা পড়ে আছে। মামলার নতুন তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই
ফারুক হোসেন জানান, মামলাটি গুরুত্বের সাথে তদন্ত করা হচ্ছে। আমার
হাতে মামলাটি আসার পর হত্যার প্রকৃত ঘটনা উদ্ধার এবং আসামিদের
গ্রেফতারের চেষ্টা করছি।