রবিবার, ২১ এপ্রিল ২০২৪, ১১:৩৭ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম ::

কঠোর নজরদারিতে ইংলিশ মিডিয়াম ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো

বাংলার প্রতিদিন ডেস্ক ::
  • আপডেট সময় বুধবার, ৬ জুলাই, ২০১৬
  • ৪০৮ বার পড়া হয়েছে

ঢাকা : রাজধানীর গুলশানে হলি আর্টিসান বেকারিতে গত শুক্রবার জঙ্গি হামলার পর গোয়েন্দা নজরদারিতে আসছে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। প্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষক ও ছাত্রদের গতিবিধি নজরদারিতে রাখতে সরকারের সর্বোচ্চ নির্দেশনা দেয়া হয়েছে গোয়েন্দা সংস্থাকে। রোববার সরকারের প্রভাবশালী গোয়েন্দা সংস্থার একটি সূত্র বাংলামেইলকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

সূত্র জানায়, শুক্রবার নিহত জঙ্গিদের ছবি প্রকাশের পর বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বের হয়ে আসছে তাদের পরিচয়। যাদের অধিকাংশই দেশের নামকরা ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থী। এ কারণে কয়েকটি ধাপে এ নজরদারি চলবে। প্রথমে সন্দেহভাজন স্কুল-বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষকদের তালিকা চাওয়া হবে। এরপর ওই শিক্ষকদের ব্যাকগ্রাউন্ড যাচাই-বাচাই করা হবে। এদের মধ্যে প্রাধান্য পাবে যেসব শিক্ষক দেশের বাইরে থেকে পড়াশুনা বা চাকরি করে বর্তমানে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কাজ করছেন। তাদের বর্তমান কার্যক্রম ও অতীত নিবিড়ভাবে পর্যালোচনা করবে গোয়েন্দারা।

শিক্ষকদের পাশাপাশি ছাত্রদের গতিবিধিও নজরদারিতে রাখা হবে। ছাত্ররা কাদের সঙ্গে মিশছে। কোন কোন সংগঠনের সঙ্গে জড়িত। সংগঠনগুলোর কার্যক্রমও খতিয়ে দেখবে গোয়েন্দারা। এছাড়া ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষা কার্যক্রমের পাশাপাশি কি কি ধরনের কার্যক্রম পরিচালিত হয় তাও নজরে রাখা হবে।

স্কুল-বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ছাত্র-শিক্ষকদের পাশাপাশি যেসব দেশি-বিদেশি সাংবাদিক বাংলাদেশে অতীতে কাজ করে গেছেন। একপর্যায়ে বিদেশে গেছেন আবার দেশে ফিরে এসে কাজ করছেন তাদেরকেও নজরদারির আওতায় রাখা হবে। তাদের মধ্যে একটা অংশ আছেন যারা বাংলাদেশে বিভিন্ন প্রত্যন্ত অঞ্চলে কাজ করেছেন। তাদেরকেও নজরদারির আওতায় আনা হবে বলে জানিয়েছে সরকারের প্রভাবশালী গোয়েন্দা সংস্থা।

দেশে অবস্থানরত এসব দেশি-বিদেশি নাগরিকদেরও গোয়েন্দা নজরদারিতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন দেশের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারকরা। এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালকে ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

তবে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটি) বোম ডিস্পোজাল টিমের প্রধান ও ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (এডিসি) ছানোয়ার হোসেন বাংলামেইলকে বলেন, ‘স্কুল-বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে আমরা অনেক আগে থেকেই তৎপর আছি। সেই ২০০৯ সাল থেকে আমরা এগুলো নিয়ে কাজ করছি। গুলশানের ঘটনাটা আবার নতুন করে ভাবাচ্ছে। আমরা এসব প্রতিষ্ঠান নিয়ে সজাগ আছি।’

কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট শুধুমাত্র মহানগরীতে নয় এটা জাতীয়ভাবে সারাদেশে করতে হবে উল্লেখ করে ছানোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমাদের দেশে কাউন্টার টেরোরিজম শুধুমাত্র মহানগরীতে রয়েছে। কিন্তু বাইরের দেশে জাতীয়ভাবে এসব কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট করা হয়। ঢাকায় কিন্তু জঙ্গিরা সংঘবদ্ধ হতে পারে না। কারণ ঢাকায় কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট আছে। সারাদেশে জাতীয়ভাবে এটা করা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এটা হয়ে গেলে জঙ্গি তৎপরতা দেশে আর কোথায়ও সংঘবদ্ধ হতে পারবে না।’

তরিকত ফেডারেশনের মহাসচিব এম এ আউয়াল এমপি মনে করেন, রাষ্ট্রের তত্ত্বাবধানের বাইরে সবগুলো প্রতিষ্ঠানকেই নজরদারীতে আনতে হবে। বাধ্য করতে হবে জবাবদিহীতার। যেকোনো পর্যায়ের প্রতিষ্ঠানকেই নিজেদের কর্মকাণ্ডের উত্তর দিতে হবে। গুলশান ঘটনা আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখাল, জঙ্গি কেবল মাদরাসার ছাত্র কিংবা গরীবরাই নয়। এতে ধনীর সন্তানরাও জড়াতে পারে। ফলে, একটি প্রতিষ্ঠান কোন আলোকে পরিচালিত হবে, এ বিষয়টি অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে দেখতে হবে। গত ১ জুলাই গুলশানের হলি আর্টিসান রেস্টুরেন্টে জঙ্গি হামলা চালিয়ে ২২ জনকে হত্যা করে। এতে নিহত হন দুইজন পুলিশ কর্মকর্তাও। পরবর্তীতে অপারেশন ‘থান্ডার বোল্ড’ পরিচালিত হলে আক্রমণকারী জঙ্গি ৫ জন নিহত হন।

এর পরপরই ৫ জঙ্গির ছবি প্রকাশ করে আইএস। এদের মধ্যে ৩ জনের পরিচয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তুলে ধরেছেন স্কুল-বিশ্ববিদ্যালয়ের জঙ্গিদের বন্ধু-পরিচিত ও আত্মীয়রা।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সূত্রে জানা যায়, পুলিশের প্রকাশিত ৫ জনের মধ্যে একজন রোহান ইমতিয়াজ। তিনি রাজধানীর স্কলাসটিকা স্কুলে পড়াশুনা শেষ করে উচ্চতর ডিগ্রির জন্য পড়ছিলেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে। পরিবার সূত্রে জানা গেছে, রোহান এ বছরের জানুয়ারি থেকে নিখোঁজ ছিলেন। থানায় নিখোঁজের একটি সাধারণ ডায়েরিও করা হয়েছিল। এরপর থেকে পরিবারের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ ছিল না রোহানের। তার বাবা ইমতিয়াজ খান বাবুল ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক, বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের ডেপুটি সেক্রেটারি জেনারেল এবং বাংলাদেশ সাইক্লিস্ট ফেডারেশনের জেনারেল সেক্রেটারি।

আরেকজন নিহত জঙ্গি হলেন মীর সামেহ মুবাশ্বের। সেও ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল স্কলাস্টিকায় পড়াশুনা করেছে। ‘এ লেভেল’ পরীক্ষার আগে গত মার্চে নিখোঁজ হয়। পরে তার নিখোঁজের বিষয়েও একটি জিডি করা হয়। মুবাশ্বেরের বাবা মীর হায়াত কবির অ্যালকাটেল-লুসেন্ট বাংলাদেশের কর্মকর্তা। মা খালেদা পারভীন একটি সরকারি কলেজের শিক্ষিকা।

পাঁচ জঙ্গির আরেকজন নিব্রাস ইসলাম। পড়ালেখা করেছেন ঢাকার ইন্টারন্যাশনাল টার্কিশ হোপ স্কুলে। এরপর তিনি অস্ট্রেলিয়াভিত্তিক মোনাশ ইউনিভার্সিটির মালয়েশিয়া ক্যাম্পাসে ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্ট সার্ভিসেসের কোষাধ্যক্ষ ছিলেন। কিছুদিন মোনাশে থাকার পর সেখানে আর ভালো না লাগায় ফিরে আসেন দেশে। ভর্তি হন নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটিতে।

এদিকে গুলশানের হলি আর্টিসান রেস্টুরেন্টের হামলার ঘটনায় জিম্মিদের মধ্যে জীবিত উদ্ধার হয়ে আসা একজনকেও সন্দেহ করা হচ্ছে। দক্ষিণ কোরীয় এক নাগরিকের মোবাইলে তোলা ভিডিও ফুটেজ দেখে তার গতিবিধি সন্দেহজনকও মনে হয়েছে। ফুটেজে সন্দেহভাজনের নাম হাসনাত করিম। গত শনিবার সকালে সেনা কমান্ডোর নেতৃত্বে পরিচালিত যৌথ অভিযানে যে ১৩ জন জিম্মিকে জীবিত উদ্ধার করা হয় তাদের মধ্যে ছিলেন এই হাসনাত করিম এবং তার স্ত্রী ও দুই সন্তান।

কোরীয় নাগরিক ডি কে হোয়াংয়ের প্রকাশিত ভিডিও ফুটেজে, ন্যাড়া মাথার চেক গেঞ্জি ও ‍জিন্স পরা এক ব্যক্তিকে একাধিক স্থানে সন্ত্রাসীদের সহযোগিতা করার মতো সন্দেহজনক আচরণ করতে দেখা যায়। হলি আর্টিসান রেস্টুরেন্টের কাচের তৈরি মূল ফটকটিতে তাকে বেশ কয়েকবার এসে ঘুরে যেতেও দেখা যায়। দুই অস্ত্রধারীর সঙ্গে ছাদেও দেখা গেছে তাকে।

হাসনাত করিমের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ঘেঁটে দেখা যায় বর্র্তমানে তিনি তেমন অ্যাকটিভি না। গত এপ্রিলে দেশে আসেন এমন তথ্য মিলছে ফেসবুকে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, হাসনাত করিম ২০ বছর দেশের বাইরে ছিলেন। ইংল্যান্ডে প্রকৌশল পড়াশোনার পর যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে এমবিএ করেন। দেড় বছর আগে দেশে ফিরে আসেন তিনি। হাসনাত করিম নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির শিক্ষক ও ফ্যাকাল্টি বলেও জানা যায়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে হাসনাতের বাবা রেজাউল করিম বাংলামেইলকে বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি না যে, আমার ছেলে এ ধরনের একটা কাজে জড়িত থাকতে পারে। ওকে আমি ছোট বেলা থেকেই জানি। সে কোনো কাজেই সিরিয়াস না।’

‘বিশ্বাস করবেন কি না জানি না, সে ঠিক মতো কখনো রোজাটাও পর্যন্ত করে না। নামাজ-কালাম তো দূরের কথা। শুধু জুমার নামাজটা নিয়মিত মসজিদে গিয়ে আদায় করে’ যোগ করেন রহমান করিম।

তিনি বলেন, ‘রেস্টুরেন্টে কি হয়েছিল, সেটাতো ওখানকার শেফদের কাছে শুনলেই জানা যায়। এ বিষয় নিয়ে তিনদিন তাকে আটকে রাখার কী মানে হয়? আর যদি তাদের (পুলিশের) কাছে হাসনাতের এই ঘটনায় সম্পৃক্ত থাকার কোনো তথ্য-প্রমাণ থাকে, তাহলে তা আদালতে গিয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করুক। কিন্তু এভাবে আটকে রাখার তো কোনো মানে হয় না।’

উল্লেখ্য, ঢাকার কূটনীতিকপাড়া গুলশানের হলি আর্টিসান রেস্টুরেন্টে গত শুক্রবার রাত পৌনে ৯টার দিকে একদল সসস্ত্র জঙ্গি ঢুকে দেশি-বিদেশি অতিথিদের জিম্মি করে। প্রায় ১২ ঘণ্টা পর শনিবার সকালে সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে কমান্ডো অভিযানের মধ্য দিয়ে রেস্টুরেন্টটি নিয়ন্ত্রণ নেয় নিরাপত্তা বাহিনী। অভিযানে ১৩ জন জিম্মিকে জীবিত উদ্ধার এবং ২০ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। নিহতদের মধ্যে ১৭ জনই বিদেশি নাগরিক। বাকিরা বাংলাদেশি। এছাড়া জঙ্গিদের প্রতিহত করতে গিয়ে নিহত হন গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী কমিশনার (এসি) রবিউল করিম ও বনানী থানার ওসি সালাহউদ্দিন খান।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © banglarprotidin.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com
themebazarbanglaro4451