ঢাকা: ঢাকার হলি আর্টিসান রেস্টুরেন্টে শুক্রবার সন্ত্রাসী হামলায় যে ২০ জন নিহত হয়েছেন তাদের মধ্যে তিনজনই যুক্তরাষ্ট্রে লেখাপড়া করছিলেন। এরা হলেন বাংলাদেশের ফারাজ আইয়াজ হোসেন ও অবিন্তা কবীর এবং ভারতের তারাশি জৈন। নিহত দুই বাংলাদেশি পড়তেন বিখ্যাত এমোরি বিশ্ববিদ্যালয়ে। আর ভারতের তারাশি ছিলেন ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। তাদের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছে দুই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
শুক্রবারের হামলাকারীদের হাতে নিহত হয়েছেন ট্রান্সকম গ্রুপের চেয়ারম্যান লতিফুর রহমানের নাতি ২০ বছরের ফারাজ আইয়াজ হোসেন। যুক্তরাষ্ট্রের আটলান্টা অঙ্গরাজ্যের এমোরি বিশ্ববিদ্যালয়ের এই ছাত্র সম্প্রতি দেশে ফিরেছিলেন। শুক্রবারে দুপুরে তার এক বন্ধু এসেছিলেন আমেরিকা থেকে। তার সঙ্গে দেখা করতে গুলশানের হোলি আর্টিজান বেকারিতে গিয়েছিলেন ফারাজ। সেখানেই সন্ত্রাসীদের হাতে নির্মমভাবে নিহত হন ওই তরুণ।
ফারাজ আইয়াজ হোসেন
ঢাকা আর্ট গ্যালারির সাবেক প্রধান ইশরাত আখন্দ ও ল্যাভেন্ডারের মালিকের নাতনী অবিন্তা কবীরও পড়তেন ওই একই বিশ্ববিদ্যালয়ে। ঢাকায় পরিবারের সঙ্গে ঈদ করার জন্য ২৭ জুন আমেরিকা থেকে দেশে ফিরেন তিনি। রেস্টুরেন্টের পাশেই অবিন্তাদের বাসা। শুক্রবার রাত পৌনে ৯টার দিকে হলি আর্টিসান রেস্টুরেন্টে যান অবিন্তা। তার সঙ্গে একজন গানম্যান এবং গাড়িচালক ছিলেন। সেখানে জঙ্গিরা হামলা চালানোর পরপরই অবিন্তাকে ফোন দেওয়া হলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি। শনিবার সকালে স্বজনরা আর্টিজানে গিয়ে অবিন্তার মরদেহ শনাক্ত করেন। এ ঘটনায় তার গানম্যান জিয়াউর রহমানও আহত হয়েছেন।
এই দুই বাংলাদেশি শিক্ষার্থীর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছে এমোরি বিশ্ববিদ্যালয়। এক বিবৃতিতে তারা বলেছে,‘বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের দুই সদস্যের মর্মান্তিকভাবে নিহত হওয়ার ঘটনায় আমরা শোকাহত। ফারাজ ও অবিন্তার জন্য আমরা প্রার্থণা করছি। তাদের শোকাহত পরিবার ও বন্ধুদের প্রতিও আমরা সমবেদনা প্রকাশ করছি।’
ভারতীয় তরুণী তারিশি জৈন (১৯) ঢাকার ‘আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল স্কুল’ থেকে গ্রাজুয়েট করার পর যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমিয়েছিলেন। ভর্তি হয়েছিলেন বারকেলির ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগে। তারিশির বাবা সঞ্জীব জৈন গত ১৫ থেকে ২০ বছর ধরে বাংলাদেশে গার্মেন্টস ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। ছুটিতে তিনি ঢাকায় এসে পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাচ্ছিলেন। বাংলাদেশি ছাত্রী অবিন্তা কবিরের সঙ্গে তার সখ্যতা ছিল।
শুক্রবার সন্ধ্যার পর তারাশি তার দুই বান্ধবীর সঙ্গে মিলে হলি আর্টিজান বেকারিতে যান। খাবার অর্ডার দেয়ার পর বাসায় ফোন করে তিনি ডিনার সেরেই বাসায় ফিরবেন বলে জানিয়েছিলেন। কিন্তু আর বাসায় যাওয়া হলো না তার। সন্ত্রাসীদের বুলেট কেড়ে নিল তারাশির প্রাণ।
তারিশি জৈন
তার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে,‘তারিশি জৈনের হত্যার সংবাদে আমরা সবাই মর্মাহত। তিনি একজন স্মার্ট, উচ্চাকাঙ্খী ও উদার মনের মানুষ ছিলেন। আমরা তার পরিবার ও বন্ধুদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি।