হেলাল শেখ, ঢাকা ঃ
সারাদেশে কথিপয় রাজনৈতিক নেতা, পুলিশ কর্তৃক আর কত
সাংবাদিক লাঞ্ছিত, হামলা, মামলা ও হত্যার শিকার হবেন ? দিন দিন এ
ঘটনা বেড়েই চলেছে। তবুও সাংবাদিকরা ঐক্যবদ্ধ হচ্ছেন না কেন?
উল্লেখ্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি চত্বরে একটি নিউজ
পোর্টালে কর্মরত ফটো সাংবাদিক জীবন আহাম্মেদের ওপর পুলিশের
চড়াও হওয়ার অভিযোগ উঠেছে। সাভারের সাংবাদিক নাজমুল হুদা
গ্রেফতার, টুঙ্গীর সাংবাদিক শামীমা খানম পুলিশ কর্তৃক লাঞ্ছিত।
জানা গেছে, শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে জীবনের মোটরসাইকেল
পার্কিংকে কেন্দ্র করে এ ঘটনা ঘটে। জীবন আহাম্মেদ বলেন, আমি
বই মেলায় ছবি তুলতে এসেছিলাম। টিএসসির সড়কের পাশে
মোটরসাইকেল পার্কিং করতে গেলে পুলিশ আমাকে ধাক্কা দেয়। তার
কাছে জানতে চাইছি, ভাই আমাকে ধাক্কা দিচ্ছেন কেন? মুখে
বললেইতো সরে যাই। এ কথা বলতেই পেছন থেকে আরেক পুলিশ সদস্য
এসে আমাকে কিল-ঘুষি মারেন বলে ওই সাংবাদিক জানান। জীবন
জানায়, শুধু মারধরই নয়, ওই পুলিশ সদস্য অকথ্য ভাষায় গালাগাল করেছেন
তাকে। সাংবাদিক বলেন, পুলিশের মধ্যে একজন উচ্চস্বরে আমাকে বলতে
থাকেন একেবারে মামলা দিয়ে ঢুকাইয়া দিমু।
এ প্রসঙ্গে শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবু বক্কর সিদ্দিক
বলেন, “ফটো সাংবাদিক জীবন যেখানে মোটরসাইকেল পার্কিং
করতে চেয়েছেন সেখানে আমরা কোনো গাড়ি রাখতে দিচ্ছি না।
কিন্তু তিনি জোর করেই রাখতে চেয়েছিলেন। এ নিয়ে উপস্থিত পুলিশ
সদস্যদের সঙ্গে জীবনের কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে তাকে
মোটরসাইকেল থেকে টেনে নামিয়ে ফেলা হয়। পরে খবর পেয়ে আমরা
ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করি॥ সাংবাদিক সাগর রুনি,
গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের একজন সাংবাদিককে গলা কেটে হত্যাসহ
দেশে অনেক সাংবাদিক হত্যার ঘটনা ঘটেছে। সাংবাদিক সাইফুল
ইসলামের বিরুদ্ধে উত্তরা পশ্চিম থানায় মামলা, এ রকম অনেক
সাংবাদিকের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা করেছে পুলিশ। বর্তমানে
পুলিশ ও রাজনৈতিক নেতা কর্মী কর্তৃক সাংবাদিক লাঞ্ছিত, হামলা,
মামলা, এমনকি হত্যার শিকার হতে হচ্ছে। কিন্তু আর কত সাংবাদিককে
ওরা হত্যা করবে আমার এই ছোট্র প্রশ্ন সাংবাদিক সমাজের কাছে।
অন্যদিকে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীদের
মধ্যে সংঘর্ষের সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে পৌর মেয়রের গুলিতে হত্যার
শিকার হতে হয়েছে দৈনিক সমকালের শাহজাদপুর প্রতিনিধি আব্দুল
হাকিম শিমুলকে। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় গত শুক্রবার (৩ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে
উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নেওয়ার পথে সাংবাদিক শিমুলের মৃত্যু
হয়। সিরাজগঞ্জ হাটিকুমরুলের সাখাওয়াত মেমোরিয়াল হাসপাতালের
চিকিৎসক ডা. হাফিজুর রহমান মিলন এ তথ্য জানিয়েছেন। “
সাংবাদিক শিমুল হত্যায় মেয়রসহ ৪৩ জনের নামে মামলা হয়েছে”
আওয়ামী লীগ নেতা নাছিরসহ ১৮ জনের নাম উল্লেখ করে এই ঘটনায়
শিমুলের স্ত্রী নূরুন নাহার বাদী হয়ে ৪৩ জনকে আসামি করে একটি
হত্যা মামলা করেছেন। অন্যদিকে সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী আওয়ামী
লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের জানিয়েছেন, গুলিবিদ্ধ হয়ে
সাংবাদিক শিমুল নিহতের ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক
এবং দলীয় উভয় দিক থেকেই ব্যবস্থা নেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
এদিকে শিমুলের পরিবারের শোক আরও বাড়িয়ে দিয়েছে তার নানী
রোকেয়া বেগম (৯০) এর মৃত্যুতে। নানী তার নাতি শিমুলের মৃত্যুর
সংবাদ শোনার পর শুক্রবার তিনি হার্ট অ্যাটাকে মারা যান বলে
জানিয়েছেন তার পরিবারের সদস্যরা। ওই দিন সন্ধ্যা ৭টার দিকে
সিরাজগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল মর্গে শিমুলের ময়না তদন্ত করা হয়। এ
সময় শিমুলের এক খালাতো ভাই হারুন উপস্থিত সাংবাদিকদের সে
কান্নায় ভেঙে পড়া জড়িত কন্ঠে বলেন, তাদের নানীর মৃত্যু হয়েছে তার
ভাইয়ের মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে। এ সময় হারুন বলেন, ভাই শিমুলকে
নানীই ছোট বেলা থেকে লালন পালন করে মানুষ করেছেন এবং পড়া লেখা
শিখিয়েছেন নানীই। রোকেয়া বেগম শাহজাদপুর পৌরসভা এলাকার
মাদলা গ্রামের মৃত গোলাম হোসেনের স্ত্রী। তাদের পরিবার সুত্রে জানা
গেছে, শনিবার মাদলা গ্রামের কবরস্থানে জানাজা শেসে দাফনকর্য
সম্পন্ন করা হয়।
প্রসঙ্গত ঃ গত বৃহস্পতিবার (২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭) দুপুরে শাহজাদপুর
পৌর আওয়ামী লীগের বহিস্কৃত সভাপতি ভিপি রহিমের সমর্থকরা জেলা
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক পৌর মেয়র হালিমুল হক মিরুর
বাড়ি ঘেরাও করলে রহিমের ও হালিমুলের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়
সেখানে গুলাগুলির ঘটনা ঘটে বলে স্থানীয়রা ও ভিপি রহিম জানান। এ
সময় সংবাদ সংগ্রহের জন্য দায়িত্বরত অবস্থায় আব্দুল হাকিম শিমুল
গুলিবিদ্ধ হন। শুক্রবার উন্নত চিকিৎসার জন্য বগুড়া থেকে ঢাকায় নেওয়ার
পথে সাংবাদিক শিমুলের মৃত্যু হয় বলে জানিয়েছেন সিরাজগঞ্জ জেলার
হাটিকুমরুল সাখাওয়াত মেমোরিয়াল হাসপাতালের বিকিৎসক ডা.
হাফিজুর রহমান মিলন।
মোঃ সাইফুল ইসলাম