আব্দুর রহিম পলাশ ,চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ঃ
দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম স্থলবন্দর সোনামসজিদ
স্থলবন্দরের পানামা পোর্ট লিংক লিমিটেডের ৫নং গোডাউন থেকে
প্রায় কোটি টাকা মুল্যের আনুমানিক ৪’শ ৮০ কার্টুন কসমেটিক্স
মালামাল রহস্যজনকভাবে গায়েব হয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে। বিষয়টি
জানাজানি হবার পর রাজশাহী বিভাগের কাস্টম ও ভ্যাট এক্সাসাইজ
অধিদপ্তরের যুগ্ম কমিশনার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে গোডাউন সিলগালা
করেছেন বলে জানা গেছে। সোনামসজিদ স্থলবন্দরের নাম প্রকাশে
অনিচ্ছুক একাধিক সূত্রে জানা গেছে, গত ৩ জানুয়ারী বন্দরের
পানামা পোট্রের ৫নং গোডাউন থেকে ৫কাটুর্ন পন্য এবং সেদিনের
পর থেকে কোন এক সময় প্রায় এক কোটি টাকা মূল্যের আনুমানিক
৪’শ ৮০ কার্টুন কসমেটিকসের মালামাল গায়েব হওয়ার পর গত ৩১
জানুয়ারী রাজশাহী বিভাগের কাস্টম ও ভ্যাট এক্সাসাইজ অধিদপ্তরের যুগ্ম
কমিশনার মানস কুমার বর্মন পরিদর্শনে আসলে বিষয়টি জানাজানি
হয়। এসময় গোডাউনটি সিলগালা করে দেয়া হয়। একটি সূত্রের দাবী,
কোটি টাকার মালামাল গায়েব হওয়ার পিছনে ঐ মালগুলির আমদানীকারক
মেসার্স সিনরানী এন্টারপ্রাইজের মালিক রুবেল হোসেন এবং
সংশ্লিষ্ট সিএন্ডএফ এজেন্ট, পানামা, কাস্টমস ও আমদানীকারকদের
কয়েকজন অসাধু ব্যক্তি প্রায় ৭০ লাখ টাকা রাজস্ব ফাঁকি দেয়ার অসৎ
উদ্দেশ্যে এ কাজটি করেছেন। কারণ, আগে কোটি টাকা মূল্যের
কসমেটিকসের মালামালে মোট রাজস্ব ও অন্যান্য খাতে খরচ হতো প্রায়
২০ লাখ টাকা। আর বর্তমানে ঐ টাকার পন্য আমদানীতে শুধু রাজস্ব দিতে
হয় প্রায় ৭০ লাখ টাকা। আর এ রাজস্ব ফাঁকি দিতেই ৪ প্রতিষ্ঠানের
কিছু অসাধু ব্যক্তিদের এ কারসাজি বলেও জানা গেছে। ঘটনাটি
জানাজানি হয় গত ৩১ জানুয়ারী রাজশাহী বিভাগের কাস্টম ও ভ্যাট
এক্সসাইজ অধিদপ্তরের যুগ্ম কমিশনার পোর্ট পরিদর্শনে এসে ৫নং
গোডাউনে সামান্য কিছু মালামাল দেখতে পেলেও কার্টুনের গায়ে
আমদানীকারক ও সিএন্ডএফ এজেন্টের কোন টোকেন বা নমুনা না
থাকায় অনুসন্ধান চালিয়ে আসল তথ্য বেরিয়ে আসে। অন্যদিকে,
সংশ্লিষ্ট আমদানীকারক ও সিএন্ডএফ এজেন্ট এ অভিযোগ ভিত্তিহীন
দাবী করে জানান, পানামার ইয়ার্ড থেকে পন্য গায়েব হলে এর সম্পূর্ন
দায় দায়িত্ব তাদেরই। ব্যবসায়ীরা চোর নয়, যে ট্যাক্স ফাঁকি দেবে। আর
পানামা কর্তৃপক্ষের দাবী, কাষ্টমস কর্মকর্তাদের নির্দেশে ইয়াড
খোলা ও বন্ধ করা হয়। এখানে পানামার কোন গাফলতি থাকার কথা নয়।
এব্যাপারে আমদানীকারক রুবেলের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি
পন্যের পরিমান না উল্লেখ করে শুধু মালামাল গায়েবের ঘটনা স্বীকার করেন
এবং অন্য কিছু জানেনা বলে জানান। অন্যদিকে, মের্সাস রবিন
এন্টারপ্রাইজের মালিক সিএন্ডএফ এজেন্ট মোস্তাক হোসেন জানান,
পানামার ইয়ার্ড থেকে মালামাল চুরি যাওয়ায় তার আমদানীকারক অবশ্যই
আইনগত ব্যবস্থা নিয়েছে। আর ব্যবসায়ীরা চোর নয়, যে ট্যাক্স ফাঁকি
দিয়ে ব্যবসা করবে। তার দাবী এ ঘটনার সব দায়িত্ব পানামা পোর্ট
লিংকের। ঘটনাটি সম্পর্কে পানামা পোর্টের দায়িত্বরত কর্মকর্তা
মাইনুল ইসলাম জানান, আমার জানা মতে গত ৩ জানুয়ারী ৩ কার্টুন
জুয়েলারী ও ২ কার্টূন প্যাডলক ইয়ার্ড ভেঙ্গে গায়েব হয়েছে যার
আনুমানিক মূল্য ১ লাখ ১৪ হাজার টাকা। এব্যাপারে একটি মামলাও
হয়েছে। তাছাড়া ইয়ার্ড খোলা ও বন্ধ করা হয় কাষ্টমস কর্মকর্তাদের
নির্দেশে ও উপস্থিতিতে। ইয়ার্ড না ভেঙ্গে ইয়ার্ড থেকে কোন
মালামাল সরাতে গেলে কাষ্টমস কর্তৃপক্ষই জানবে। কারন পানামা শুধু
ইয়াডের দরজার পাহারাদার। তার দাবী ৫ কাটুন পন্য গায়েবের পর নতুন করে
আরও পন্য গায়েবের বিষয়টি একমাত্র কাষ্টমস কর্তৃপক্ষই সদুত্তর দিতে
পারবে। আর সহকারী কমিশনার সোলাইমান হোসেন জানান, আমি
কয়েকদিন আগে যোগদান করেছি। এখনো দায়িত্ব বুঝিয়ে পাইনি।
তাই কোন মন্তব্য করতে পারছি না। এব্যাপারে রাজশাহী বিভাগের কাস্টমস
ও ভ্যাট এক্সাসাইজের কমিশনার মোয়াজ্জেম হোসেনের সাথে
মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি মালামাল চুরির বিষয়টির
সত্যতা শিকার করে জানান, এব্যাপারে রাজশাহী বিভাগের কাস্টম ও ভ্যাট
এক্সসাইজ অধিদপ্তরের যুগ্ম কমিশনার মানস কুমার বর্মন বিষয়টি
সরাসরি তদন্ত করায় তিনি এ ব্যাপারে কোন মন্তব্য করতে অপারগতা
প্রকাশ করেন। তবে তদন্ত শেষে গনমাধ্যমকে বিষয়টি অবশ্যই জানানো
হবে। উল্লেখ্য, গত ৩ জানুয়ারী পানামা পোটের ৫নং গোডাউনের
একটি অংশ দিয়ে একটি চক্র ৫ কাটুর্ন পন্য চুরি করার পর আর কোন
পন্য চুরির খবর না পাওয়া গেলেও ঘটনার প্রায় ২৬ দিন পর কাষ্টমস
কর্তৃপক্ষ দাবী করলো কোটি টাকা মূল্যের ৪’শ ৮০ কার্টুন
কসমেটিকসের পন্য গায়েব হয়ে যাওয়ার বিষয়টি।