হেলাল শেখ- ঢাকাঃ
সারাদেশে মরণ নেশা ইয়াবাসহ বিভিন্ন মাদকের শক্ত জাল বিস্তার। দেশের বিভিন্ন সীমান্ত পথ দিয়ে অবাধে
ইয়াবাসহ নানা রকম মাদক ঢুকে তা ছড়িয়ে পড়ছে রাজধানী ঢাকা জেলার ধামরাই, আশুলিয়া, সাভার, মিরপুর,
উত্তরাসহ বিভিন্ন শহর ও গ্রামে।
জানা গেছে, মাদক ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের শক্তিশালী জালের মাধ্যমে সহজেই ছড়িয়ে পড়ছে ইয়াবাসহ নানা
রকম মাদক। সুত্র জানায়, পুলিশ বাহিনীর কিছু দুর্নীতিপরায়ণ সদস্য ও রাজনৈতিক কথিপয় নেতার
সহযোগিতা রয়েছে এসব মাদক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে। সহজলভ্য এই মরণ নেশা ইয়াবায় যোগ হচ্ছে উঠতি
বয়সের তরণ-তরুণীরা। তুলনামূলক ভাবে মাদক ইয়াবার থাবায় বিপদগ্রস্ত হচ্ছে নতুন প্রজন্ম।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের (ডিএনসি) পরিসংখ্যান অনুযায়ী ডিএনসিসহ আইন প্রয়োগকারী
সংস্থাগুলো ২০০৯ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত দেশে তিন কোটি ৩৩ লাখ ৮৬ হাজার ৯৭৯টি ইয়াবা ট্যাবলেট
জব্দ করা হয়েছে।গত বছরেই ধরা পড়েছে এক কোটি ৯৫ লাখ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট। এ হিসেবে গড়ে বছরে
দেশে প্রায় ৪৭ লাখেরও বেশি ইয়াবা ট্যাবলেট ধরা পড়ছে। প্রতি মাসের হিসেবে এর পরিমান প্রায় চার লাখেরও
বেশি বলে সুত্র জানায়। ইয়াবার সেবনের পাশাপাশি অন্যান্য মাদকদ্রব্যের মধ্যে হেরোইন, কোকেন, গাঁজাসহ
বিভিন্ন মাদক ও নেশা জাতীয় ইনজেকশন গ্রহণের পরিমাণও ভয়ানক।
সুত্রে জানা যায়, সাত বছরে ৮৯৭ কেজি হেরোইন, দুই লাখ দেড় হাজার কেজি গাঁজা, আট লাখ ইনজেকশন
এবং বছরে প্রায় ছয় কেজি কোকেন ধরা পড়েছে। পত্রিকার পাতা খুললেই দেখা যায়, মাদক দ্রব্য আটক
হয়েছে,“দেশজুড়ে মাদকের বিভিন্ন স্পট রয়েছে” বিভিন্ন সময় দেশেই ইয়াবা তৈরির কারখানার সন্ধানও
পায় আইন-প্রয়োগকারী সংস্থা। বিভিন্ন পরিসংখ্যানই বলে দিচ্ছে দেশে ইয়াবা বিস্তারের ভয়ঙ্কর রূপ
নিয়েছে। অবশ্য দেশে যে পরিমাণ ইয়াবা ঢুকছে সে তুলনায় খুবই নগণ্য ধরা পড়ছে বলে সংশ্লিষ্টদের
অভিমত। বিশেষ করে মাদক বিরোধী অভিযান ও সচেতনতামূলকসহ বিভিন্ন সামাজিক কার্যক্রম গ্রহণ করা
হলেও প্রতিকার মিলছে না।
বিশেষ করে বিভিন্ন সময় গত সাত বছরে মাদক সংক্রান্ত মামলা হয়েছে দুই লাখ ৮৬ হাজার ৮৯৪টি এবং
গ্রেফতার হয়েছে তিন লাখ ৫২ হাজার ৬৮৫ জন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সারা দেশে এখন মাদকসেবীর সংখ্যা
প্রায় ৫০ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। দেশের প্রায় প্রতিটি এলাকায় খবর নিয়ে জানা যায়, হাত বাড়ালেই মাদক
পাওয়া যাচ্ছে বলেই মাদকসেবীর সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছাত্রী, তরণ, তরণী শুধু
নয়, শিল্পী, ব্যবসায়ী, আইনজীবী, সাংবাদিক, পুলিশ ও চাকরিজীবীদের একটি অংশ এখন ইয়াবায় আসক্ত।
এছাড়া নতুন নতুন কৌশলে যেমন মাদক বেচা-কেনা হয়, তেমনি সেবন করছে কৌশলে অনেকেই। এছাড়াও
ফেনসিডিল, গাঁজা, হেরোইন, মদ এবং ইনজেকশন ব্যবহার করছে মাদকসেবীরা। হোটেল, বার, ক্লাব এমনকি
বাসা বাড়িতে বসেও বিভিন্ন মাদক সেবন করা হচ্ছে অবাধে। ১৫ থেকে ৫০ বছর বয়সের নারী- পুরুষ মাদক
সেবন করছে। তবে ১৬ থেকে ৩০ বছর বয়সী মাদকসেবীর সংখ্যা বেশি। সংশ্লিষ্টদের মতে, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ
অধিদফতর ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার তথ্য মাদক ব্যবসায়ী, মাদক পাচারকারীদের তালিকা করলেও তা অনেকেই
প্রকাশ করেন না। আর মাদকের স্পটগুলোর নাম প্রকাশ করলে জড়িতদের আটক করতে পারেন না পুলিশ। পাঁচটি
পথে মাদক পাচার হয় বেশি। সুত্র জানায়, মিয়ানমার থেকে কক্সবাজার, টেকনাফ, রাজশাহী বিভাগের জয়পুরহাট
জেলা ও রংপুর বিভাগের হিলিসহ বিভিন্ন পথে এসব মাদকের চালান আসে রাজধানী ঢাকার ধামরাই, আশুলিয়া,
সাভার, মিরপুর, উত্তরাসহ বিভিন্ন এলাকায়। এসব মাদকের বিষয়ে নিউজ লিখতে গেলে ইতিহাস হবে। উক্ত
মাদকের ব্যাপারে আইনপ্রয়োগকারী ও সমাজের প্রভাবশালীরা যদি সবাই এগিয়ে আসেন, প্রয়োজনীয়
ব্যবস্থা গ্রহণ করেন তাহলে মরণ নেশা মাদকের থাবা থেকে নতুন প্রজন্মকে বাঁচানো সম্ভব বলে মনে করছেন
অনেকেই।