প্রখ্যাত কথা সাহিত্যিক সেলিনা হোসেন বলেছেন, মানসম্মত শিক্ষা
জরুরী বিষয়। যে শিক্ষা আলোকিত করে সেই শিক্ষায় শিক্ষিত হতে হবে।
শিক্ষা জীবনের আলোকিত সত্য যা জীবনকে সমৃদ্ধ করে। শিক্ষকরা নমস্য
মানুষ। তাঁরাই পারেন শিশুদের নৈতিকতার সাথে বড় করতে। তবে ক্লাসরুমের
বাইরের পরিবেশ থেকেও শিক্ষা নিতে হবে। নিজেকে যে আলোকিত করে সে
অন্যকেও আলোকিত করতে পারে। শনিবার সকালে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর
এলাকার চরমোহনপুর উচ্চ বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে বিদ্যালয়ের নব-নির্মিত
পাঠাগার,বিজ্ঞানাগার ও কম্পিউটর ল্যাবের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান
অতিথির বক্তব্য দিতে গিয়ে এসব কথা বলেন কথা সাহিত্যিক ও বাংলাদেশ
শিশু একাডেমীর চেয়ারম্যান সেলিনা হোসেন। এ সময় তিনি আরও বলেন,
অধিকার বঞ্চিত মানুষ প্রকৃত মানুষের সম্মান পায়না। শিশুরা বড় হলে নায্য
অধিকারের বিষয়টি বুঝবে। তখন তারা অন্যদের পাশে এসে দাঁড়াবে। সংকট
মোকাবেলা করলে শুভদিন ফিরে আসে। তিনি বলেন, অভিভাবকদের কাছে ছেলে-
মেয়ে সবাই সমান। তবে অনেক সময় কেউ কেউ ছেলেদের প্রাধান্য দেয়।
নারীকে শ্রদ্ধা করতে হবে। নারী অধিকার আদায় ও নির্যাতন প্রসঙ্গে কথা
বলেন তিনি। ভারতের দিল্লীর মত শহরে একের পর এক নারী নির্যাতনের ঘটনার
তিনি নিন্দা জানান। বাল্য বিয়ের বিরুদ্ধে বালিকাদের তিনি উৎসাহিত
করেন। চাঁপাইনবাবগঞ্জ নাচোলের ‘তেভাগা আন্দোলনে’র নেত্রী ইলা মিত্রের
কথা স্মরণ করে তাঁর সাথে নায্য অধিকারের দাবীতে আন্দোলনকারী
সাঁওতালদের উপর ব্রিটিশ পুলিশের নির্মম নির্যাতনের কাহিনী বর্ননা
করেন সেলিনা হোসেন। তিনি সোনামসজিদ চত্ত্বরে চিরশায়িত বীরশ্রেষ্ঠ
শহীদ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দীন জাহাঙ্গীরের কথা স্মরণ করে চাঁপাইনবাবগঞ্জ যে
মুক্তিযুদ্ধকে বুকে ধারন করে আছে সে কথা মনে করিয়ে দেন। তিনি ৫২’র
ভাষা আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত শহীদ বরকতের কথা বলেন। যার বাড়ী ছিল
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্তের ওপারে ভারতের বহরমপুরে। বিদ্যালয় ম্যানেজিং
কমিটি সভাপতি শফিকুল ইসলামের সভাপতিত্ত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন,
সেলিনা হোসেনের স্বামী মুক্তিযোদ্ধা অনোয়ার হোসেন খান, প্রধান
শিক্ষক রফিকুল ইসলাম, শাহনেয়ামতুল্লাহ কলেজ প্রভাষক নওসাবাহ নেহা
প্রমুখ। আলোচনা শেষে প্রধান অতিথি ফলক উন্মোচনের মাধ্যমে প্রায়
পাঁচ হাজার বই সমৃদ্ধ বিদ্যালয়ের নব-নির্মিত পাঠাগার, সংশ্লিষ্ট সব
বিষয়ের বিজ্ঞানাগার ও ১৪টি কম্পিউটর সমৃদ্ধ ল্যাব উদ্বোধন করেন।
অনুষ্ঠানে তাঁকে সোনামসজিদ অংকিত চাঁপাইনবাবগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী
কাঁসার প্লেট ও নকশী কাঁথা উপহার দেয়া হয়। তিনি শিক্ষার্থী-শিশুদের
অটোগ্রাফ দেন। অনুষ্ঠানে জনপ্রিয় লোকজ গম্ভীরা গান সহ
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হয়। অনুষ্ঠানে চাঁপাইনবাবগঞ্জের
বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিপুল সংখ্যক শিক্ষক-
শিক্ষার্থী,অভিভাবক,সাহিত্য-সংস্কৃতি অনুরাগী, সুধীজন ও স্থানীয়রা
উপস্থিত ছিলেন।