শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৫:৫২ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম ::

অনেক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় দিনে সরকারি–রাতে বেসরকারি, এটা কাম্য নয়: রাষ্ট্রপতি ‘আবদুল হামিদ’

অনলাইন ডেস্কঃ
  • আপডেট সময় সোমবার, ৯ ডিসেম্বর, ২০১৯
  • ২৯৩ বার পড়া হয়েছে

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে চলমান সান্ধ্য কোর্সের সমালোচনা করে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, অনেক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এখন দিনে সরকারি আর রাতে বেসরকারি চরিত্র ধারণ করে। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলো সন্ধ্যায় মেলায় পরিণত হয়। এটি কোনোভাবেই কাম্য নয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫২তম সমাবর্তনে সভাপতির বক্তব্যে রাষ্ট্রপতি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য আবদুল হামিদ আজ সোমবার দুপুরে এসব কথা বলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়।

রাষ্ট্রপতি বলেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এখন ডিপার্টমেন্ট, সান্ধ্য কোর্স, ডিপ্লোমা কোর্স ও ইনস্টিটিউটের ছড়াছড়ি। নিয়মিত কোর্স ছাড়াও এসব বাণিজ্যিক কোর্সের মাধ্যমে প্রতিবছর হাজার হাজার গ্র্যাজুয়েট বের হচ্ছেন। এসব ডিগ্রি অর্জন করে শিক্ষার্থীরা কতটুকু লাভবান হচ্ছেন, এ ব্যাপারে প্রশ্ন থাকলেও একশ্রেণির শিক্ষক কিন্তু ঠিকই লাভবান হচ্ছেন। তাঁরা নিয়মিত নগদ সুবিধা পাচ্ছেন এবং বিশ্ববিদ্যালয়কে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করছেন। এর ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশের পাশাপাশি সার্বিক পরিবেশ বিঘ্নিত হচ্ছে। অনেক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এখন দিনে সরকারি আর রাতে বেসরকারি চরিত্র ধারণ করে। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস সন্ধ্যায় মেলায় পরিণত হয়। এটি কোনোভাবেই কাম্য নয়। আবার কিছু শিক্ষক আছেন, যাঁরা নিয়মিত কোর্সের ব্যাপারে অনেকটা উদাসীন। কিন্তু সান্ধ্য কোর্স, ডিপ্লোমা কোর্স ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস নেওয়ার ক্ষেত্রে তাঁরা খুবই সিরিয়াস। কারণ, এগুলোতে নগদ প্রাপ্তি থাকে।

সমাবর্তনে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উপাচার্যদেরও সমালোচনা করেছেন রাষ্ট্রপতি। বিশ্ববিদ্যালয় জনগণের টাকায় পরিচালিত হয়—সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের এটি স্মরণ করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় যেহেতু জনগণের টাকায় চলে, এর জবাবদিহিও জনগণের কাছে। জনগণের এই অর্থে উচ্চবিত্ত ও মধ্যবিত্তের যেমন ভাগ আছে, তেমনি ভাগ আছে কৃষক-শ্রমিক মেহনতি মানুষের। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি পয়সার সততার সঙ্গে সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করার দায়িত্ব উপাচার্য ও শিক্ষকদের। উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান অভিভাবক ও একাডেমিক লিডার। কিন্তু কোনো কোনো উপাচার্য ও শিক্ষকের কর্মকাণ্ড দেখলে মনে হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের আসল কাজ কী, তা তাঁরা ভুলে গেছেন। গবেষণা হচ্ছে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও মৌলিক কাজ। গবেষণার মান নিয়েও এখন নানা কথা ওঠে। পদোন্নতির জন্য গবেষণা, নাকি মৌলিক গবেষণা, তাও বিবেচনায় নিতে হবে। প্রশাসনিক পদ-পদবি পেয়ে অনেক শিক্ষকই এখন নিজেদের শিক্ষক পরিচয় ভুলে যান।

সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাগুলোতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ দায় এড়াতে পারে না বলেও মন্তব্য করেছেন রাষ্ট্রপতি, ‘সম্প্রতি দেশের কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘটে যাওয়া অমানবিক ও অনভিপ্রেত ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি ও শিক্ষার্থীদের সুনাম ক্ষুণ্ন হয়েছে। ছাত্রছাত্রীরা লেখাপড়া করে জ্ঞান অর্জনের জন্য, লাশ হয়ে বা বহিষ্কৃত হয়ে ফিরে যাওয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয় না। কর্তৃপক্ষ সময়মতো সঠিক পদক্ষেপ নিলে এসব অপ্রত্যাশিত ঘটনা অনেকাংশে রোধ করা সম্ভব হতো। তাই কর্তৃপক্ষ দায় এড়াতে পারে না। আমি আশা করব, ভবিষ্যতে কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে সময়মতো সঠিক পদক্ষেপ নেবে।’

এবারের সমাবর্তনে বিশ্ববিদ্যালয় ও অধিভুক্ত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মোট ২০ হাজার ৭১৭ জন শিক্ষার্থী ডিগ্রি পেয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ১০ হাজার ৬৭৩ জন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এবং অধিভুক্ত সাত কলেজের ১০ হাজার ৪৪ জন শিক্ষার্থী। এ ছাড়া ৭৯ জন কৃতী শিক্ষক, গবেষক ও শিক্ষার্থীকে ৯৮টি স্বর্ণপদক, ৫৭ জনকে পিএইচডি, ৬ জনকে ডিবিএ এবং ১৪ জনকে এমফিল ডিগ্রি দেওয়া হয়। এবার সমাবর্তন বক্তব্য দেন জাপানের টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ের কসমিক রে রিসার্চ ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক তাকাকি কাজিতা। তাঁকে সম্মানসূচক ডক্টর অব সায়েন্স ডিগ্রিও দিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © banglarprotidin.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com
themebazarbanglaro4451