রবিবার, ২১ এপ্রিল ২০২৪, ০৭:০৭ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম ::

ক্লাস-পরীক্ষায় ফেরার ঘোষণা দিলেন বুয়েট শিক্ষার্থীদের

অনলাইন ডেস্কঃ
  • আপডেট সময় বুধবার, ৪ ডিসেম্বর, ২০১৯
  • ২৪৪ বার পড়া হয়েছে

ক্লাস–পরীক্ষাসহ সব ধরনের একাডেমিক কার্যক্রমে ফেরার ঘোষণা দিলেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। বুয়েট কর্তৃপক্ষ তিন দফা দাবি পূরণ করায় আন্দোলন থেকে সরে এসে এ ঘোষণা দিলেন তাঁরা। বুয়েট ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় শুরু থেকেই সচেষ্ট থাকায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।

আজ বুধবার বিকেলে বুয়েটের শহীদ মিনারের পাদদেশে সংবাদ সম্মেলন করে শিক্ষার্থীরা ২৮ ডিসেম্বর থেকে একাডেমিক কার্যক্রমে ফেরার কথা জানান।

গত ৬ অক্টোবর বুয়েটের শেরেবাংলা হলে তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক প্রকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যা করেন বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের একদল নেতা-কর্মী। এ ঘটনার পর থেকে বুয়েটে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করছেন শিক্ষার্থীরা। আবরার হত্যার বিচারসহ বিভিন্ন দাবিতে আন্দোলনের একপর্যায়ে ১৪ নভেম্বর ক্লাস-পরীক্ষায় ফিরতে প্রশাসনকে শিক্ষার্থীরা তিন দফা দাবি পূরণের শর্ত দেন। এসব দাবি মানতে ১৮ নভেম্বর শিক্ষার্থীদের কাছে সর্বোচ্চ তিন সপ্তাহ সময় চান বুয়েটের উপাচার্য অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম।

শিক্ষার্থীদের ওই তিন দফা দাবি ছিল, মামলার অভিযোগপত্রের ভিত্তিতে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বুয়েট থেকে স্থায়ী বহিষ্কার, বুয়েটের আহসানউল্লাহ, তিতুমীর ও সোহরাওয়ার্দী হলে আগে ঘটে যাওয়া র্যাগিংয়ে ঘটনাগুলোয় অভিযুক্ত ব্যক্তিদের অপরাধের মাত্রা অনুযায়ী শাস্তি এবং সাংগঠনিক ছাত্ররাজনীতি ও র্যাগিংয়ের জন্য সুস্পষ্টভাবে বিভিন্ন ক্যাটাগরি ভাগ করে শাস্তির নীতিমালা প্রণয়নের পর একাডেমিক কাউন্সিল ও সিন্ডিকেটে অনুমোদন করে বুয়েটের অধ্যাদেশে সংযোজন

শিক্ষার্থীদের প্রথম দাবি অনুযায়ী ২১ নভেম্বর শেরে বাংলা হলের ২৬ ছাত্রকে বুয়েট থেকে স্থায়ী বহিষ্কার করা হয়। দ্বিতীয় দাবি অনুযায়ী ২৮ নভেম্বর র‍্যাগিংয়ে অভিযুক্ত আহসানউল্লাহ ও সোহরাওয়ার্দী হলের ২৬ ছাত্রকে হল থেকে বহিষ্কার করে কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে দুই হলের ৯ ছাত্রকে হল থেকে আজীবন বহিষ্কারের পাশাপাশি একাডেমিক কার্যক্রম থেকে ৪ থেকে ৭ টার্ম বহিষ্কার করা হয়। এ ছাড়া আহসানউল্লাহ হলের চার ছাত্রকে সতর্ক করা হয় আর সোহরাওয়ার্দী হলের ১৭ শিক্ষার্থীকে হল থেকে বিভিন্ন মেয়াদে বহিষ্কার ও ভবিষ্যতের জন্য সতর্ক করা হয়। সর্বশেষ গত সোমবার সাংগঠনিক ছাত্ররাজনীতি ও র্যাগিংয়ের শাস্তিবিষয়ক নীতিমালা প্রকাশ করেছে বুয়েট কর্তৃপক্ষ

শিক্ষার্থীদের তিন দাবির মধ্যে কেবল তিতুমীর হলে আগের র‍্যাগিংয়ের ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়টি বাকি রয়েছে। এটি হলেই শিক্ষার্থীদের তিন দফা দাবির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন হবে। চলতি সপ্তাহের মধ্যেই তিতুমীর হলে র‍্যাগিংয়ে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে প্রথম আলোকে জানিয়েছেন বুয়েটের ছাত্রকল্যাণ পরিদপ্তরের পরিচালক অধ্যাপক মিজানুর রহমান। ২৮ ডিসেম্বর থেকে চূড়ান্ত পরীক্ষায় বসতে শিক্ষার্থীরা সম্মত হয়েছেন বলেও জানান তিনি।

বুয়েট কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের তিন দফা দাবি মেনে নেওয়ার পর নিজেদের অবস্থান জানাতে আজ বিকেলে বুয়েটের শহীদ মিনারের পাদদেশে সংবাদ সম্মেলন করেন। সেখানে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের অন্যতম মুখপাত্র  তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক প্রকৌশল বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র মাহমুদুর রহমান (সায়েম)।

মাহমুদুর রহমান লিখিত বক্তব্যে বলেন, ‘আবরার ফাহাদকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যার প্রতিবাদে আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীরা পরদিন ৮ অক্টোবর থেকে হত্যার বিচার এবং একই সঙ্গে একটি নিরাপদ ক্যাম্পাস নিশ্চিতের দাবিতে প্রথমে আট দফা ও পরে সংশোধিত দশ দফার ভিত্তিতে আন্দোলন শুরু করি। এর মধ্যে ১৫ অক্টোবর বুয়েটের ভর্তি পরীক্ষা উপলক্ষে ভর্তি-ইচ্ছুকদের সুবিধার কথা চিন্তা করে আমাদের আন্দোলন দুই দিনের জন্য শিথিল করি এবং আন্দোলনের না দিনের মাথায় ১৬ অক্টোবর গণশপথের মধ্য দিয়ে মাঠ পর্যায়ের আন্দোলন তুলে নিই। আমাদের আন্দোলনকে ব্যবহার করে কোনো অপশক্তি যাতে নিজেদের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে না পারে এবং একই সঙ্গে বুয়েট প্রশাসন যাতে নির্বিঘ্নে কাজ করতে পারে সে জন্যই মূলত মাঠ পর্যায়ের আন্দোলন থেকে সরে আসা হয়। এরপর আমরা নিয়মিত বুয়েট প্রশাসনের কাছ থেকে দাবিগুলোর অগ্রগতির আপডেট নিতে থাকি। এর মধ্যে তদন্তকারী সংস্থা অত্যন্ত নিষ্ঠার পরিচয় দিয়ে ১৩ নভেম্বর আবরার হত্যা মামলার অভিযোগপত্র দাখিল করে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও এ ব্যাপারে শুরু থেকেই সচেষ্ট ছিলেন। এ জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে আমরা আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানাই। একই সঙ্গে আইনমন্ত্রী মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে নেওয়ার ব্যাপারে জানিয়েছেন।’

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ‘গত ২ নভেম্বর উপাচার্যের সঙ্গে ছাত্রকল্যাণ পরিদপ্তরের পরিচালক ও বিভিন্ন অনুষদের ডিন উপস্থিতিতে আমরা সভা করে বুয়েটকে দ্রুত সচল করার জন্য আমরা সবশেষে কেবল তিনটি পয়েন্টের কথা বলি এবং এই তিনটি পয়েন্ট এর প্রথম দুটি মেনে নেওয়া হলে আসন্ন টার্ম ফাইনাল পরীক্ষার তারিখ নেওয়া হবে এবং তৃতীয়টি টার্ম ফাইনাল পরীক্ষা শুরুর অন্তত এক সপ্তাহ আগে মেনে নেওয়া হলে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করা হবে বলে জানাই। এরপর গত ২১ নভেম্বর বুয়েট প্রশাসন হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ২৬ জনকে একাডেমিক কার্যক্রম থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করে এবং ছয়জনকে বিভিন্ন মেয়াদে একাডেমিক বহিষ্কার করে, যা আমাদের তিনটি পয়েন্টের প্রথম পয়েন্ট ছিল। এরপর গত ২৭ নভেম্বর বুয়েট কর্তৃপক্ষ আহসানউল্লা হল ও সোহরাওয়ার্দী হলে আগে ঘটে যাওয়া র‍্যাগিংয়ের ঘটনায় অভিযুক্তদের শাস্তি দেয়, যা আমাদের দেওয়া দ্বিতীয় পয়েন্ট ছিল। তিতুমীর হলের র‍্যাগিংয়ের ঘটনায় পুনরায় তদন্তের প্রয়োজন হওয়ায় এটির ব্যাপারে সিদ্ধান্ত দিতে আরও সময় প্রয়োজন এবং আজকে এ ব্যাপারে প্রশাসনের সভা আছে বলে আমাদের জানানো হয়েছে।

বুয়েট শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে আরও বলা হয়, যেহেতু তাঁদের দুটি দাবি প্রশাসন মেনে নিয়েছে, তাই তাঁরা গত ২৭ নভেম্বর পরীক্ষার তারিখের ব্যাপারে বুয়েটের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক, রেজিস্ট্রার, সব অনুষদের ডিনদের উপস্থিতিতে উপাচার্য সাইফুল ইসলামের সঙ্গে কথা বলেন এবং পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য সময় চেয়ে ২৯ ডিসেম্বর পরীক্ষা শুরু করার কথা বলেন। তখন উপাচার্য ২৮ ডিসেম্বর থেকে পরীক্ষা শুরু করার অনুরোধ করলে তাঁরা তাতে সম্মত হন। সর্বশেষ গত ২ ডিসেম্বর র‍্যাগিং ও সাংগঠনিক ছাত্ররাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকলে তার শাস্তির নীতিমালা বিষয়ে বুয়েট প্রশাসন একটি নোটিশ প্রকাশ করে এবং আজ সকালে এই নোটিশ সম্পর্কে বিস্তারিত ব্যাখ্যা জানায়। একই সঙ্গে এখন থেকে নবাগত শিক্ষার্থীদের ভর্তির সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের কোড অব কনডাক্ট জানিয়ে অঙ্গীকার নেওয়ার পরিকল্পনা আছে বলে শিক্ষকেরা তাঁদের জানান। তখন একটি সুস্থ ও নিরাপদ বুয়েটের স্বার্থে বুয়েটের বর্তমান শিক্ষার্থীরাও প্রয়োজনে এমন অঙ্গীকারনামা দিতে সম্মত আছেন বলে তাঁরা জানিয়ে আসেন। প্রতিশ্রুত সময়ের মধ্যেই তিনটি দাবি মেনে নেওয়ায় বুয়েট প্রশাসনকে ধন্যবান জানিয়ে তাদের দেওয়া রায় মেনে নিয়ে তাঁরা আন্দোলনের সমাপ্তি টানছেন। বুয়েট প্রশাসন আবরার ফাহাদের পরিবারকে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দিতে সচেষ্ট হবে বলেও আশা প্রকাশ করেন শিক্ষার্থীরা।

সংবাদ সম্মেলন থেকে আন্দোলনে শক্তি জোগানোয় বুয়েটের সব শিক্ষার্থী ও সাবেক শিক্ষার্থীসহ যাঁরা আবরার হত্যার বিচারের দাবিতে সোচ্চার ছিলেন, তাঁদের সবাইকে ধন্যবাদ জানান আন্দোলনকারীদের মুখপাত্র মাহমুদুর রহমান সায়েম। তিনি বলেন, ‘আমাদের এ আন্দোলন শুরু থেকেই এ ক্যাম্পাসের সকল সাধারণ শিক্ষার্থীর আন্দোলন ছিল। এ আন্দোলনের প্রতিটি সিদ্ধান্ত সকলের উপস্থিতিতে নেওয়া হয়েছে, কারও একক সিদ্ধান্তে কোনো কাজ করা হয়নি। সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় বহিরাগত অপশক্তির প্রভাব দমনের জন্য আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীরা সর্বদা সচেষ্ট ছিলাম। আমরা চাই আবরার ফাহাদ হত্যা মামলার বিচারিক প্রক্রিয়া সুষ্ঠুভাবে দ্রুততার সঙ্গে সম্পন্ন হোক।’

সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের আরেক মুখপাত্র অন্তরা মাধুরীও বক্তব্য দেন।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © banglarprotidin.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com
themebazarbanglaro4451