বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৯:৪৩ পূর্বাহ্ন

নুসরাত হত্যার ঘটনায় দুই ছাত্রী আটক

বাংলার প্রতিদিন ডেস্ক ::
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল, ২০১৯
  • ৪৬৯ বার পড়া হয়েছে

অনলাইন ডেস্কঃ

ফেনীর সোনাগাজীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে পুড়িয়ে হত্যায় জড়িত সন্দেহে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য কামরুন নাহার ও জান্নাতুল আফরোজ মনি নামে দুই ছাত্রীকে আটক করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।

আজ মঙ্গলবার দুপুরে পরীক্ষা কেন্দ্র থেকে জান্নাতুল আফরোজাকে আটক করা হয় বলে জানিয়েছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআইয়ের পরিদর্শক মো. শাহ আলম।

এর আগে সোমবার রাতে কামরুন নাহার নামের নুসরাতের আরেক সহপাঠীকে আটক করা হয় বলে জানান ফেনী পিবিআইয়ের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. মনিরুজ্জমান।

আলোচিত এ মামলায় এ পর্যন্ত ১৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ ও পিবিআই। এদের মধ্যে সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ এস এম সিরাজ উদ দৌলা, কাউন্সিলর ও পৌর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাকসুদ আলম, শিক্ষক আবছার উদ্দিন, নুসরাতের সহপাঠী আরিফুল ইসলাম, নূর হোসেন, কেফায়াত উল্লাহ জনি, মোহাম্মদ আলা উদ্দিন, শাহিদুল ইসলাম, অধ্যক্ষের ভাগনি উম্মে সুলতানা পপি, জাবেদ হোসেন, যোবায়ের হোসেন, নুর উদ্দিন, শাহাদাত হোসেন, মো. শামীম, কামরুন নাহার ও জান্নাতুল আফরোজ।

এদিকে রোববার রাতে ফেনীর জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম মো. জাকির হোসাইনের আদালতে নুসরাত হত্যার দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দেন মামলার অন্যতম আসামি নুর উদ্দিন ও শাহাদাত হোসেন শামীম। সেদিন বিকেল ২টা ৫৫ মিনিট থেকে দিবাগত রাত প্রায় ১টা পর্যন্ত প্রায় ১০ ঘণ্টা জবানবন্দি দেন তাঁরা। জবানবন্দিতে অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলার নির্দেশে তাঁরা নুসরাতের গায়ে আগুন দিয়েছেন বলে স্বীকার করেন।

গণমাধ্যমকে জবানবন্দির বর্ণনা দিয়েছেন পিবিআইয়ের স্পেশাল ইনভেস্টিগেশন অ্যান্ড অপারেশন উইংয়ের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তাহেরুল হক চৌহান। তিনি বলেন, ‘বক্তব্যে পুরো বিষয়টি তারা খোলাসা করেছে। একেবারে কীভাবে হত্যাকাণ্ডটি ঘটিয়েছে, কারা ঘটিয়েছে, কী আঙ্গিকে ঘটিয়েছে—এর বিস্তারিত বিবরণ আমি এখানে দেব না। বাট বিষয়গুলো এখানে এসেছে। আপনারা দ্রুতই বিষয়গুলো জানবেন। তদন্তকারী কর্মকর্তা বা এখানে পিবিআইর যাঁরা দায়িত্বে রয়েছেন, তাঁরা সংশ্লিষ্ট সময়ে বিষয়গুলো অবগত করবেন।’

এক প্রশ্নের জবাবে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আরো বলেন, ‘তারা অপরাধ স্বীকার করেছে। তারা হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। তারা সরাসরি এখানে জড়িত ছিল কয়েকজন। পরিকল্পনা অংশগ্রহণ করেছে। জেলাখানা (অধ্যক্ষের কাছ) থেকে হুকুম পেয়েছে। এ বিষয়গুলো মূলত এসেছে।’

হত্যাকাণ্ডে কতজন সংশ্লিষ্ট ছিল—এমন প্রশ্নের জবাবে তাবেরুল হক চৌহান বলেন, ‘এখন পর্যন্ত আমরা ১৩ জনের কথাই বলছি। কিন্তু আরো অনেকের নাম এসেছে। আমরা একজনের বক্তব্য যাচাই-বাছাই না করে আরেকজনকে গ্রেপ্তার করতে পারি না।’

যে চারজন সরাসরি নুসরাতের গায়ে আগুন দিয়েছে, তারা কি গ্রেপ্তার হয়েছে—এমন প্রশ্নের জবাবে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বলেন, ‘চারজনের সকলকে আমরা গ্রেপ্তার করতে পারিনি। আমার মনে হয়, দুজনকে আমরা গ্রেপ্তার করেছি। আর দুজনকে গ্রেপ্তারে আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। যেকোনো সময় আমরা আপনাদের একটি ভালো নিউজ দিতে পারব।’

পিবিআইয়ের অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের সংবাদ সম্মেলনের পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এই সংস্থাটির কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে এনটিভি অনলাইনের কথা হয়। তাঁদের বক্তব্যে উঠে আসে মূল ঘটনা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে পিবিআইয়ের এই সূত্রটি দাবি করে, ‘নুসরাতের ওপর হামলার সময় নুর উদ্দিন হামলাকারীদের নিরাপত্তা ও হামলার পর নিরাপদে বের হয়ে যাওয়াটি নিশ্চিত করতে স্কুলগেটে অবস্থান করেছিল। আর শাহাদাত হোসেন শামীম বাজার থেকে বোরকা ও পলিথিনে করে এক লিটার কেরোসিন সংগ্রহ করে মাদ্রাসায় নিয়ে আসে।’

‘ঘটনার সময় ওড়না দিয়ে নুসরাতের দুই হাত পেছন থেকে ও মুখ চেপে ধরে কাপড় দিয়ে বেঁধে ফেলা হয়। এবং নুসরাতের গায়ে কেরোসিন ঢেলে দেওয়া হয়। নুসরাতের গায়ে আগুন লাগিয়ে দেয় জাবেদ।’

সূত্রটি আরো দাবি করে, ‘এ ছাড়া নুসরাতকে পরীক্ষার হল থেকে ছাদে ডেকে নেয় পপি। নুসরাতকে বলা হয়েছিল, তার বান্ধবীকে ছাদে মারধর করা হচ্ছে। ছাদে তখন অপেক্ষায় ছিল শামীম, জাবেদ, শম্পাসহ আরো একজন।’

নুসরাত জাহান রাফি এবার সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল ডিগ্রি মাদ্রাসা থেকে আলিম (এইচএসসি সমমান) পরীক্ষা দিচ্ছিলেন। তিনি সোনাগাজীর উত্তর চরচান্দিয়া গ্রামের মাওলানা এস এম মুসার মেয়ে। তিন ভাই ও এক বোনের মধ্যে নুসরাত তৃতীয়।

গত ৬ এপ্রিল শনিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে মাদ্রাসা ভবনের ছাদে দুর্বৃত্তরা তাঁর গায়ে আগুন দেয়। তাঁকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ফেনী সদর হাসপাতাল থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে পাঠানো হয়। পরে এখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১০ এপ্রিল বুধবার রাতে তিনি মারা যান।

এর আগে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ এস এম সিরাজ উদ দৌলা গত ২৭ মার্চ নুসরাত জাহানের শ্লীলতাহানির চেষ্টা করেন। নুসরাত বিষয়টি বাসায় জানালে তাঁদের মা সোনাগাজী থানায় মামলা করেন। ওই মামলার পরিপ্রেক্ষিতে সোনাগাজী থানা পুলিশ অধ্যক্ষকে গ্রেপ্তার করে।

নুসরাতের গায়ে আগুন দেওয়ার ঘটনায় অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলাকে প্রধান আসামি করে আটজনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরো চার-পাঁচজনকে আসামি করে নুসরাতের ভাই নোমান মামলা করেন।

এরপর গত বৃস্পতিবার রাতে ময়মনসিংহ ভালুকা থেকে নুর উদ্দিন, পরদিন শুক্রবার সকালে ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা থেকে শাহাদাত হোসেন শামীমকে গ্রেপ্তার করে পিবিআই। নুর উদ্দিন নুসরাত হত্যা মামলার দুই নম্বর ও শাহাদাত হোসেন শামীম তিন নম্বর আসামি।

এ মামলায় এজাহারনামীয় সাতজনসহ এ পর্যন্ত মোট ১৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এর মধ্যে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাও রয়েছেন। বিভিন্ন মেয়াদে পুলিশ রিমান্ডে নিয়েছে ১১ জনকে।

অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলা ও জাবেদ সাতদিন করে এবং অন্যদের পাঁচদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। এজাহারভুক্ত এক আসামি হাফেজ আবদুল কাদের এখনো গ্রেপ্তার হয়নি।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © banglarprotidin.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com
themebazarbanglaro4451