বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৮:৫৭ অপরাহ্ন

শেষবারের মতো এরশাদ সংসদে , দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হবে

বাংলার প্রতিদিন ডেস্ক ::
  • আপডেট সময় সোমবার, ১৫ জুলাই, ২০১৯
  • ৩৮১ বার পড়া হয়েছে

অনলাইন ডেস্কঃ

জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা ও জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদের দ্বিতীয় জানাজা আজ সোমবার সকালে অনুষ্ঠিত হয়েছে। সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় এই জানাজায় রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ছাড়াও জাতীয় পর্যায়ে রাজনৈতিক নেতারা অংশ নেন।

এরশাদের জানাজায় অংশ নিতে সকাল থেকেই শত শত মানুষ জাতীয় সংসদ ভবনে আসতে থাকেন। এ জন্য কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়। সকাল ১০টার কিছু পরে সাবেক রাষ্ট্রপতির মরদেহ সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের (সিএমএইচ) হিমঘর থেকে জাতীয় সংসদ ভবনে নিয়ে আসা হয়। জানাজায় ইমামতি করেন সংসদ সচিবালয় মসজিদের ইমাম আবু রায়হান। জানাজা শেষে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ এরশাদের মরদেহে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান।

জানাজা শেষে রাষ্ট্রপতি মরহুমের মরদেহে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। সংসদনেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে তাঁর সামরিক সচিব শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এ ছাড়া স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর পক্ষে সংসদের সার্জেন্ট অ্যাট আর্মস শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

জানাজার আগে জাতীয় পার্টির মহাসচিব ও বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ মসিউর রহমান রাঙ্গা এরশাদের জীবনী পাঠ করেন। এ ছাড়া জাতীয় পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ (জি এম) কাদের ও আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতা তোফায়েল আহমেদ মরহুমদের কর্মময় জীবনের কথা তুলে ধরেন। মরহুমদের পরিবারের পক্ষে রওশন এরশাদ বক্তব্য দেন।

এরপর এরশাদকে রাজধানীর কাকরাইলের দলীয় কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে নেতাকর্মীরা সাবেক এই রাষ্ট্রপতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন। বাদ আসর তাঁর আরেকটি জানাজা হবে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে।

গতকাল রোববার সকালে রাজধানীর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) মারা যান এইচ এম এরশাদ। গতকালই বাদ জোহর ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট কেন্দ্রীয় মসজিদে তাঁর প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর তাঁর মরদেহ সিএমএইচের হিমঘরে রাখা হয়।

বিগত শতাব্দীর আশির দশকে সামরিক বাহিনীর প্রধান হিসেবে রাজনৈতিক ক্ষমতা দখল করে টানা আট বছর রাষ্ট্রপতি পদে ছিলেন এরশাদ। নব্বইয়ের দশকের শেষে এক অভূতপূর্ব গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে বিদায় নেন এই সামরিক শাসক। বেশ কিছুদিন ধরেই তিনি নানা রোগে ভুগছিলেন।

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান মারা যাওয়ার পর পরই দলের মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা দলের পক্ষ থেকে সিএমএইচে গণমাধ্যমের কাছে এরশাদের ব্যাপারে পরবর্তী কর্মসূচি আনুষ্ঠানিকভাবে তুলে ধরেন। এ সময় সেখানে জাতীয় পার্টির ঊর্ধ্বতন নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

কর্মসূচি অনুযায়ী, বেলা সাড়ে ১১টা থেকে রাজধানীর কাকরাইলে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এরশাদের মরদেহ রাখা হবে দলীয় নেতাকর্মীদের শ্রদ্ধা জ্ঞাপনের জন্য।

বাদ আসর বায়তুল মোকাররমে এরশাদের আরো একটি জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। জানাজা শেষে তাঁর মরদেহ ফের সিএমএইচের হিমঘরে রাখা হবে।

রংপুর নেওয়া হবে মঙ্গলবার

বৃষ্টি ও খারাপ আবহাওয়ার কারণে আজ এরশাদের মরদেহ রংপুর নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না বলে জানান জাতীয় পার্টির মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা। তিনি বলেন, মঙ্গলবার হেলিকপ্টারে করে এরশাদের মরদেহ রংপুর নিয়ে যাওয়া হবে। বাদ জোহর রংপুর জেলা স্কুলের মাঠে এরশাদের শেষ জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। তবে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানাজার স্থান পরিবর্তন হতে পারে বলেও জানান মহাসচিব।

মঙ্গলবারই এরশাদের মরদেহ ঢাকায় ফিরিয়ে এনে সেনাবাহিনীর কেন্দ্রীয় কবরস্থানে দাফন করা হবে বলে জানান মসিউর রহমান রাঙ্গা। তিনি আরো জানান, পরদিন অর্থাৎ বুধবার রাজধানীর গুলশানের আজাদ মসজিদে এরশাদের কুলখানি অনুষ্ঠিত হবে।

বর্ণময় জীবন

বর্ণময় চরিত্রের জন্য বাংলাদেশের রাজনীতিতে আলোচিত হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ১৯৩০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি রংপুর জেলার দিনহাটায় জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৫০ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন এবং ১৯৫২ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে কমিশন লাভ করেন। তিনি চট্টগ্রামের পূর্ব বাংলার রেজিমেন্টাল ডিপোর উপদেষ্টা ছিলেন। ১৯৬৬ সালে কোয়েটায় মর্যাদাপূর্ণ কমান্ড অ্যান্ড স্টাফ কলেজ থেকে উন্নত কোর্স সম্পন্ন করেন। শিয়ালকোটে একটি ব্রিগেডের সঙ্গে সেবা করার পর তাঁকে ১৯৬৯ সালে তৃতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের কমান্ড এবং ১৯৭১ সালে সপ্তম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের কমান্ড দেওয়া হয়।

মুক্তিযুদ্ধ শেষে এরশাদ পাকিস্তান থেকে প্রত্যাবর্তন করেন। পরে তাঁকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অ্যাডজুট্যান্ট জেনারেল পদে নিযুক্ত করা হয়। ১৯৭৯ সালে তাঁকে সেনাবাহিনীর ডেপুটি চিফ পদে নিয়োগ দেওয়া হয়।

১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ থেকে ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত তিনি ক্ষমতায় ছিলেন। স্বৈরাচারবিরোধী গণঅভ্যুত্থানের ফলে তিনি পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। ১৯৯১ সালে এরশাদ গ্রেপ্তার হন। ছয় বছর কারাভোগের পর ১৯৯৭ সালের ৯ জানুয়ারি তিনি জামিনে মুক্ত হন।

কারাগারে থেকে এরশাদ ১৯৯১ সালের সংসদ নির্বাচনে নিজ জেলা রংপুরের পাঁচটি আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বিজয়ী হন। ১৯৯৬ সালের সাধারণ নির্বাচনেও এরশাদ সংসদে পাঁচটি আসনে বিজয়ী হন।

গণঅভ্যুত্থানে পতনের পরও এরশাদের দল জাতীয় পার্টি জাতীয় সংসদে উল্লেখযোগ্য আসনে বিজয়ী হয়। কমবেশি করে একই ধারাবাহিকতা বজায় ছিল পরবর্তী সময়ের সাধারণ নির্বাচনেও। ২০০৬ সালে জাতীয় পার্টি আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের সঙ্গে মহাজোট গঠন করে। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এরশাদের দল ২৭টি আসনে বিজয়ী হয়। এরপর দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এরশাদের দল বিরোধী দলের ভূমিকায় উঠে আসে।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © banglarprotidin.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com
themebazarbanglaro4451