শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১১:২৪ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম ::

যৌবনের অবাঞ্ছিত একটি সমস্যা ব্রণ

বাংলার প্রতিদিন ডেস্ক ::
  • আপডেট সময় শুক্রবার, ১৬ নভেম্বর, ২০১৮
  • ৩২৭ বার পড়া হয়েছে
বিব্রতকর সমস্যা ব্রণ

স্বাস্থ্য প্রতিদিন ঃ 

যৌবনের অবাঞ্ছিত একটি সমস্যা ব্রণ। সুন্দর মুখশ্রীর ওপর ব্রণের প্রভাব বিরক্তির কারণ বটে। তবে কিছু নিয়ম মেনে চললে ও প্রয়োজনীয় চিকিৎসা নিলে ব্রণের সমস্যা এড়ানো যায়। লিখেছেন আল-রাজী হাসপাতালের চর্ম ও যৌনরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. দিদারুল আহসান

ব্রণ প্রথম দেখা দেয় বয়ঃসন্ধির সময়। ছেলেদের ১৬ থেকে ১৯ বছর বয়সে ও মেয়েদের ১৪ থেকে ১৬ বছর বয়সে ব্রণ হওয়ার প্রবণতা বেশি দেখা যায়। তবে যেকোনো বয়সেই তা হতে পারে। ৮০ শতাংশের ক্ষেত্রে ২০ বছর বয়সের মাঝামাঝি সময় থেকে ব্রণ হওয়ার হার কমে যেতে থাকে। তবে অনেকের ৩০-৪০ বছর বয়স পর্যন্ত ব্রণ হওয়ার প্রবণতা থেকেই যায়। ব্রণ সাধারণত মুখে দেখা গেলেও পিঠে, ঘাড়ে ও বুকেও হতে পারে।

কারণ
ত্বকে অনেক সিবাসিয়াস গ্রন্থি থাকে, যা থেকে সব সময় সিবাম নামক এক ধরনের তৈলাক্ত রস নিঃসৃত হয়। লোমকূপ দিয়ে এই সিবাম বের হয়ে ত্বকে ছড়িয়ে পড়ে বিধায় ত্বকে নরম, মসৃণ ও তৈলাক্ত ভাব আসে। যদি কোনো কারণে সিবামের নিঃসরণ বৃদ্ধি ঘটে এবং লোমের গোড়ায় বিদ্যমান কেরটিন (এক ধরনের প্রোটিনজাতীয় পদার্থ) ধুলাবালির সঙ্গে মিশে সেখানকার ছিদ্রপথ বা নির্গমনের পথ বন্ধ করে দেয়, তখন সিবাম বের হতে না পেরে জমা হয়ে ব্রণ হিসেবে প্রকাশ পায়। ব্রণ হওয়ার আরো কিছু কারণ হলো—

       টিনএজারদের ক্ষেত্রে বয়ঃসন্ধিকালে অ্যান্ড্রোজেন হরমোনের আধিক্য।

       মাসিক বা গর্ভাবস্থায় হরমোনের মাত্রার পরিবর্তন।

       কসমেটিক, বিশেষ করে ঘন ঘন ময়েশ্চারাইজিং লোশন ব্যবহার বা কড়া মেকআপের প্রভাব।

       বেশি আবেগ।

       অত্যধিক গরম বা বেশি ঘর্মাক্ত হওয়া।

       তেলতেলে চুল ও মাথার খুশকি।

       মানসিক চাপ ও পর্যাপ্ত ঘুম না হওয়া।

       কেরোসিন বা কয়লার (যেমন—ফার্নিচারের বার্নিশ) প্রভাব।

       একদিকে কাত হয়ে ঘুমানো বা হাতের ওপর মুখ রেখে ঘুমানো।

       জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি, স্টেরয়েড, খিঁচুনি বা মানসিক রোগের ওষুধ ইত্যাদির প্রভাব।

       পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার অভাব ও নারীদের মাসিক ঋতুস্রাবের সঙ্গেও ব্রণের সম্পর্ক রয়েছে।

ধরন
ব্রণের নানা ধরন রয়েছে। ছোট ছোট গোল ফুসকুড়ি, লালচে ছোট ছোট গোটা, আবার পুঁজপূর্ণ বড় বড় চাকাও হতে পারে। ব্রণ টিপলে ভাতের দানার মতো বের হয়ে আসে। কিছু ব্রণ খুব যন্ত্রণাদায়ক হয়। এতে ত্বকে ছিদ্রও দেখা দিতে পারে। কারো কারো মুখে ব্রণের তীব্রতা বেশি থাকলে তা এবড়োখেবড়ো দেখায়।

চিকিৎসা
সচেতনতার মাধ্যমেই বেশির ভাগ ব্রণ দূর করা যায় বা কমানো যায়। তবে আক্রান্তের গুরুত্ব বিবেচনা করে ডার্মাটোলজিস্ট বা চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হয়ে চিকিৎসা নিতে হয়। চিকিৎসা না করালে অনেক সময় ব্রণ ত্বকের মারাত্মক ক্ষতি, বিশেষ করে ত্বকে গভীর প্রদাহ সৃষ্টি হতে পারে। এ জন্য মলম  প্রয়োগ, অ্যান্টিবায়োটিক অথবা রেটিনয়েডজাতীয় ওষুধ সেবনের প্রয়োজন হতে পারে। তাই করণীয় হলো—

রাতে ঘুমানোর সময় ভালো করে মুখ ধুয়ে শুধু ব্রণগুলোর ওপর চিকিৎসকের পরামর্শমতো জেল লাগান। এটি ব্যবহারে অনেকের চুলকানি বা ত্বকে লাল আভা হতে পারে, যা দু-এক দিন পর ঠিক হয়ে যায়। তবে অতিরিক্ত চুলকানি বা লাল ভাব বেশি হলে ব্যবহার বন্ধ করে দিতে হবে।

       কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে চিকিৎসা নিন। পুষ্টিহীনতায় ভুগলে প্রোটিন ও ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবার খান।

       মাথায় খুশকি থাকলে অ্যান্টিড্যানড্রাফ শ্যাম্পু ব্যবহার করে খুশকি দূর করুন। ব্রণের তীব্রতা বেশি হলে চিকিৎসকের মতামত নিয়ে প্রয়োজনীয় ওষুধ সেবন করুন।

       অ্যালার্জি না থাকলে বেনজাইল পার-অক্সাইড লোশন ব্যবহার করতে পারেন।

কিছু ভুল ধারণা
অনেকে ব্রণ হলে মুখে সাবান ব্যবহার বন্ধ করে দেন অথচ এ সময় সাবান দিয়ে মুখ ধুলে উপকার হয়, কেননা সাবান মুখের তৈলাক্ত ভাব দূর করে এবং লোমকূপ পরিষ্কার রাখে।

ব্রণ দূর করতে করণীয়

 দিনে তিন-চারবার হালকা সাবান বা ফেসওয়াশ দিয়ে মুখ ধোয়া উচিত।

       যথাসম্ভব তীব্র সূর্যরশ্মি বা রৌদ্রতাপ এড়িয়ে চলুন।

       ব্রণ হলে তাতে হাত লাগাবেন না।

       যেসব ক্রিমে তৈলাক্ত উপাদান থাকে, সেসব ক্রিম ব্যবহার না করাই শ্রেয়।

       মাথা সব সময় খুশকিমুক্ত রাখার চেষ্টা করুন।

       পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকুন, মুখে বা অন্য কোথাও ঘাম হলে দ্রুত পরিষ্কার করুন। সবাই আলাদা আলাদা তোয়ালে বা গামছা ব্যবহার করুন।

       রাতে পর্যাপ্ত ঘুমানোর চেষ্টা করুন।

       মানসিক চাপ সম্পূর্ণরূপে পরিহার করুন।

       নিয়মিত ফলমূল, শাকসবজি ও প্রচুর পরিমাণে পানি পান করুন।

       সপ্তাহে অন্তত দুবার চুল ধোবেন এবং চুল মুখ থেকে দূরে রাখবেন।

       বেশি রাত জাগবেন না।

       শরীরে ধুলাবালি বা ঘাম জমতে দেবেন না।

       এসিডিটি ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে হবে।

       ত্বকের সঠিক যত্ন, যথাসম্ভব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকুন।

সতর্কতা

উদ্বিগ্ন হবেন না বা ভয় পাবেন না। অনেক সময় উদ্বিগ্নতাই ব্রণের অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

       আঠালো, তৈলাক্ত ক্রিম, লোশন বা মেকআপ বাদ দিয়ে শুধু ওয়াটার বেজড মেকআপ ব্যবহার করতে পারেন।

       ব্রণে হাত লাগাবেন না, খুঁটবেন না।

       চুলে এমনভাবে তেল দেবেন না, যাতে মুখটাও তেলতেলে হয়ে যায়।

       অতিরিক্ত তেল, ঘি, মসলা খাবেন না।

       নিজের পছন্দসই কোনো ওষুধ লাগাবেন না।

      আয়োডিনযুক্ত খাবার যেমন—সামুদ্রিক শৈবাল, গরুর কলিজা, রসুন এরিয়ে চলুন।

ব্রণে খাদ্যাভ্যাস
গবেষণায় দেখা গেছে, ব্রণ হওয়ার উপাদানগুলোর মাঝে খাওয়াদাওয়া গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এ জন্য—

       নিয়মিত খাদ্যতালিকায় আঁশযুক্ত খাবার রেখে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করুন।

       শরীরে টক্সিক উপাদান যাতে বেরিয়ে যায়, এ জন্য প্রচুর পানি (দিনে কমপক্ষে ৮-১০ গ্লাস) পান করুন।

       সুষম সহজপাচ্য হালকা খাবার, শাকসবজি, ফলমূল এবং প্রচুর পরিমাণে পানি পান করুন।

       চিনি ছাড়া লেবুর পানি, তাজা ফলের রস, আপেল, নাশপাতি, আঙুর, আনারস খেতে পারলে ভালো।

       অঙ্কুরিত ছোলা, ডাল, কাঁচা বাদাম, যব ও লাল চাল উত্তম খাবার।

       ব্রণ সারাতে খনিজ লবণের মধ্যে জিংক, ভিটামিন ‘ই’ এবং ভিটামিন ‘বি৬’ ভালো কাজ করে। এ জন্য খেতে হবে শস্যজাতীয় খাবার, মাছ, গরুর কলিজা, মসুর ডাল, বরবটি, রাজমা, পনির, গরুর দুধ, কর্নফ্লেকস, ডিম, তেল, মুলাজাতীয় সবজি, তৈলবীজ, বাদাম, সবুজ সবজি ইত্যাদি।

      ভিটামিন ‘এ’ ও ‘সি’ সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া জরুরি। গাজর, কুমড়া, পেঁপে, পুঁইশাক ও যেকোনো রঙিন ফল ও সবজিতে ভিটামিন ‘এ’ রয়েছে আর ‘সি’ রয়েছে কাঁচা ফল ও যেকোনো টক ফলে।

       তেল-ঝাল-মসলাবিহীন বা অত্যধিক গুরুপাক খাবার, অধিক শর্করা, অধিক মিষ্টি, অধিক চর্বিজাতীয় খাবার এরিয়ে চলুন।

       ডুবো তেলে ভাজা খাবার, কোমল পানীয়, সংরক্ষিত খাবার, কড়া চা বাদ দিন।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © banglarprotidin.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com
themebazarbanglaro4451