বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ০২:২৬ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম ::

মোরেলগঞ্জে কমিউনিটি ক্লিনিক : স্বাস্থ্য সেবা জনগণের দোরগোড়ায়

বাংলার প্রতিদিন ডেস্ক ::
  • আপডেট সময় রবিবার, ৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৮
  • ৩৩২ বার পড়া হয়েছে

এস.এম. সাইফুল ইসলাম কবির, বাগেরহাট: বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলার কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো থেকে দরিদ্র মানুষ বিনামূল্যে স্বাস্থ্য সেবা পাচ্ছে। ক্লিনিকগুলোতে ওষুধ সরবরাহ, কমিউনিটি হেলথ কেয়ার (সিএইচসিপি) কর্মী নিয়োগ দেয়ায় গ্রামের মহিলা, গর্ভবতী মা, প্রসূতি মা ও নবজাতক সহ হতদরিদ্র মানুষ বিনামূল্যে ৩০ ধরনের ওষুধ ও চিকিৎসা পাচ্ছে। নিয়োগপ্রাপ্ত সিএইচসিপি কর্মীরা আন্তরিকতার সাথে দায়িত্ব পালন করায় স্বাস্থ্যসেবা জনগণের দৌরগোড়ায় পৌঁছে দেয়া সম্ভব হচ্ছে। তবে নিয়মিত বেতন-ভাতাদি না পাওয়া, ইনক্রিমেন্ট না থাকা, চাকুরী রাজস্ব খাতে অন্তর্ভুক্ত না করায় সিএইচসিপি কর্মীদের মধ্যে চরম হতাশা বিরাজ করছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে গ্রামীণ দরিদ্র জনগোষ্ঠীর হাতের নাগালে স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে সরকার সারাদেশের ন্যায় এ উপজেলায় ৫১টি কমিউনিটি ক্লিনিক নির্মাণ করে।

জানা যায়, মোরেলগঞ্জ উপজেলায় ৫১টি কমিউনিটি ক্লিনিক রয়েছে। স্বাস্থ্যসেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো বর্তমান সরকার সচল করেছে। প্রতিটি ক্লিনিকে একজন করে কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার (সিএইচসিপি) কর্মী নিয়োগ ও সরকারিভাবে প্রায় ৩০ প্রকার ওষুধ সরবরাহ করে আসছে। কর্মরত প্রোভাইডার কর্মীরা সপ্তাহে ৬ দিন সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত আন্তরিকতার সাথে দায়িত্ব পালন করে চলেছেন। চিকিৎসার জন্য রোগীদের ৪০-৫০ টাকা পরিবহন খরচ করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যেতে হতো, সামান্য সমস্যায় বাজারের যে কোন পল্লী চিকিৎসকের কাছে গেলে ওষুধের জন্য ১০০-২০০ টাকা খরচ করতে হতো। বর্তমান কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো সচল থাকায় সেসব রোগের ওষুধ বিনামূল্যে রোগীরা পাচ্ছে। কমিউনিটি ক্লিনিকে স্বাস্থ্যসেবা নিতে আসা রোগীদের মধ্যে নারী, গর্ভবতী মা, প্রসূতি মা ও নবজাতকের সংখ্যাই বেশি। ক্লিনিকে এন্টিবায়োটিক, শিশুদের ওষুধের যে পরিমাণ চাহিদার তুলনায় সরবরাহ একটু বেশি হলে ভালো হতো। ফলে প্রতি দুই মাসের শিশুদের জন্য বরাদ্দ ওষুধ মাত্র ৩ সপ্তাহের মধ্যে শেষ হয়ে যায় বলে প্রোভাইডার কর্মীরা জানান।

সরেজমিনে মোরেলগঞ্জ উপজেলার গাবতলা কমিউনিটি ক্লিনিক পরিদর্শনকালে দেখা যায়, ক্লিনিকটিতে ভবন  নেই , ভবন  অকেজো ও সংস্কার না করায় ব্যাবহারের অনুপোযোগী হয়ে পড়েছে। এতসব সীমাবদ্ধতার মধ্যে গর ভারায় নিয়ে কমিউনিটি ক্লিনিক প্রোভাইডার মোঃ ফারুক হোসেন হাসি মুখে রোগীদের স্বাস্থ্য সেবা ও ওষুধ দিচ্ছেন।

প্রোভাইডার মো.  ফারুক হোসেন জানান, এখানে সেবা নিতে আসা রোগীদের মধ্যে সাধারণত নারী, গর্ভবতী মা, প্রসূতি মা ও নবজাতকের সংখ্যাই বেশি। প্রতিদিন গড়ে ৪০-৫০ জন রোগীকে চিকিৎসাসেবা দেয়া হচ্ছে। তিনি জানান, ক্লিনিকে  ৩০  প্রকার ওষুধ সরবরাহ করা হয়। শিশুদের ওষুধ চাহিদার তুলনায় বরাদ্দ খুবই কম। এসময় ওই ক্লিনিকে চিকিৎসা নিতে আসা গাবতলা গ্রামের রোগী ফিরোজা বেগম জানান, চিকিৎসার জন্য ৪০-৫০ টাকা পরিবহন খরচ করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যেতে হতো, কিন্তু বাড়ীর পাশে কমিউনিটি ক্লিনিক হওয়ায় খুব সহজে সেবা পাচ্ছি। স্থানীয় ইউপি সদস্য নাসিমা বেগম জানান, এলাকার কৃষক ও হতদরিদ্র সুবিধাবঞ্চিত মানুষ কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা ও ওষুধ পাচ্ছে। স্বাস্থ্যসেবা জনগণের দৌরগোড়ায় পৌঁছে দিতে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো সচল করা বর্তমান শেখ হাসিনা সরকারের একটি জনবান্ধব ও প্রশংসানীয় কর্মসূচি বলেও তিনি জানান।

উপজেলার মোরেলগঞ্জ কমিউনিটি ক্লিনিকে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে কর্মরত সিএইচসিপি রেবা রানী  বেশ আন্তরিকতার সঙ্গে নারী, শিশু রোগীদের স্বাস্থ্য সেবা ও ওষুধ দিচ্ছেন। তিনি জানান, নিয়মিত বেতন-ভাতাদি না পাওয়া, ইনক্রিমেন্ট না থাকা, চাকুরী রাজস্ব খাতে অন্তর্ভুক্ত না করায় সিএইচসিপি পদে কর্মরতদের মধ্যে হতাশা বিরাজ করছে।

মোরেলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. কামাল হোসেন মুফতি বলেন, উপজেলায় মোট ৫১টি কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে ২০১৫ সালে সর্বমোট ৩ লক্ষ ৫৮ হাজার ৫ শত ৭৮ জন সেবা গ্রহন করেছেন। এর মধ্যে ১৬৪৭ জনকে গর্ভকালীন, ২২৮ জন মাকে প্রসব পরবর্তী সেবা প্রদান ও ১৪ হাজার ৫০৩ জন শিশুকে সেবা প্রদান করা হয়েছে এবং ২০৭৭ জন রোগীকে উচ্চতর চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে।

২০১৬ সালে ১ লাখ ৫৮ হাজার ২৬৮ সেবাগ্রহণ করেছেন। এর মধ্যে ১২ হজার ১৭৮ জনকে গর্ভকালীন, ১৪ হাজার ৩৯১ জন শিশুকে সেবা প্রদান করা হয়েছে এবং ১৫১৬ জন রোগীকে উচ্চতর চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে রেফার করা হয়েছে। ২০১৭ সালে ১ লাখ ৩ হাজার ৪৭৮ জন সেবা গ্রহণ করেছেন। এর মধ্যে ৭ হাজার ৯৮০ জনকে মাতৃস্বাস্থ্যসেবা প্রদান, ও ১১ হাজার ৯৯০ জন শিশুকে সেবা প্রদান করা হয়েছে এবং ১২ শত ৫৪ জন রোগীকে উচ্চতর চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে।

চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত ৯০ হাজার ৪৫৮ জন সেবাগ্রহণ করেছেন। এর মধ্যে ৩ হাজার ৮১৫ হজার ও ৫ হাজার ৮৮৫ জন শিশুকে সেবা প্রদান করা হয়েছে এবং ৯৭৫ জন রোগিকে উচ্চতর চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে। তিনি আরো জানান, গত বছরের তুলনায় এ বছর রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। কমিউনিটি ক্লিনিক ব্যবস্থায় মফস্বলে চিকিৎসা সচেতনতায় ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। মোরেলগঞ্জ উপজেলার ৫১টি কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে কমিউনিটি হেলথ কেয়ার (সিএইচসিপি) কর্মীদের নিরলসভাবে কাজ করায় হতদরিদ্র মানুষ বিনামূল্যে ওষুধ ও চিকিৎসা পাচ্ছে।

এদিকে, স্বাস্থ্যসেবা জনগণের দৌরগোড়ায় পৌঁছে দিতে নিরলসভাবে কাজ করে চলেছে সেই সিএইচসিপি কর্মীরা ভালো নেই। তারা নিয়মিত বেতন-ভাতা পাচ্ছে না, নেই ইনক্রিমেন্ট, তাদের চাকুরীও রাজস্ব খাতে অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে না। এসব কারণে প্রোভাইডার (সিএইচসিপি) কর্মীরা দীর্ঘদিন আন্দোলন কর্মসূচি চালিয়ে গেলে প্রধানমন্ত্রী তাদের দাবিগুলো আংশিক মেনে নেন এবং সরকারি সব সুবিধার আশ্বাস প্রদান করেন। সিএইচসিপি কর্মীরা তাদের চাকরি রাজস্ব খাতে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © banglarprotidin.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com
themebazarbanglaro4451